ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ‘স্মার্ট বাজেট’

প্রকাশিত: ১০:০৫, ১৩ জুন ২০১৯

এবার ‘স্মার্ট বাজেট’

কাওসার রহমান ॥ বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট। ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শিরোনামে নতুন বাজেটে থাকছে নতুন নতুন কর্মসূচী। প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে নতুন আঙ্গিকে তৈরি করা এবারের বাজেটে থাকছে দেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার। শুধু আকারে বড় নয়, আকার বৃদ্ধির পাশাপাশি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জকে বিবেচনায় নিয়েই নতুন অর্থমন্ত্রী এবার বাজেট দিতে যাচ্ছেন। শারীরিকভাবেও তিনি বাজেট প্রদানের জন্য পুরোপুরি সুস্থ বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম বাজেটজুড়ে থাকছে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের নানা উদ্যোগ। এতে আরও থাকছে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের প্রক্রিয়া, রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়া সহজ করতে এনবিআরের জন্য নতুন করে দিকনির্দেশনা, আর দেশের চরম দারিদ্র্যের হার শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা। এ ছাড়া থাকছে বাজেটকে কর্মসংস্থানমুখী করার জন্য বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির নানা ছাড় ও প্রণোদনা। আগামী পহেলা জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে আরও একটি নতুন অর্থবছর। ২০১৯-২০ অর্থবছরের এ বাজেটে অর্থমন্ত্রী ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন। যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি থাকছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ঋণ নেয়া হবে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা বাবদ ঋণ নেয়া হবে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে নেয়া হবে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে নেয়া হবে ২৭ হাজার কোটি টাকা। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন হবে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার। যা ইতোমধ্যেই সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (এনইসি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী বছরের এডিপিতে মোট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬৪টি। নতুন এডিপিতে পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগসহ গুরুত্ব বিবেচনায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় পরিবহন খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৫২ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ২৬.০৫ শতাংশ। বিদ্যুত খাতে ২৬ হাজার ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মোট এডিপির ১২.৮৩ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাত। এই খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১২ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের এডিপিতে বর্তমান ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় বরাদ্দ বেড়েছে ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বর্তমান অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির পরিমাণ ১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেট শুধু একটি অর্থবছরের খরচেরই হিসাব-নিকাশ নয়, এটি একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও হাতিয়ার। তাই দেশকে সমৃদ্ধির সোপানে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮.২০ শতাংশ। আর এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেষ্টা করা হবে দেশের মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার মাধ্যমে। নতুন অর্থবছরে সরকারের বাজেট ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থের জোগান আসবে রাজস্ব আয় থেকে। তাই ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং করবহির্ভূত আয় ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। তবে রাজস্ব আদায়ের প্রধান হাতিয়ার হবে মূল্য সংযোজন কর। এ লক্ষ্যে দুই বছর বিরতি দিয়ে নতুন মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আইন আগামী অর্থবছর থেকে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ী ও সরকারের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসন করা হয়েছে। নতুন ভ্যাট আইনে একটি স্তরের পরিবর্তে ৫টি স্তর করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি না হয়। পরিসংখ্যানের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেটকে সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণীয় এবং গ্রহণযোগ্য করতে চান। এজন্যই গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এবার একটি ‘স্মার্ট বাজেট’ দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এবারের বাজেটের আকার বাড়লেও বাজেট বক্তৃতার বই হবে সংক্ষিপ্ত। আর বাজেটের লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী হলেও তা অর্জন করতে চেষ্টা হবে সাধ্যের মধ্যে, যা সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য হবে সহজপাঠ্য। দেড়শ-দুশ’ পাতার বাজেট বক্তৃতার বই নয়, এবার বাজেট বক্তৃতার বই সর্বোচ্চ ১০০ পাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা চলছে। আর এর মধ্যেই থাকবে দেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কাজে বিশ্বাসী। আমার কাছে বাজেট প্রণয়ন কোন বড় কথা নয়, বাজেট বাস্তবায়নই বড় কাজ। এটিই আমার বড় চ্যালেঞ্জ।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু এক বছরের জন্য নয়, সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে বিশেষ করে ২০৪১ সালকে টার্গেট করে তৈরি হবে এবারের বাজেট। সাধারণ মানুষের জন্যই তৈরি হচ্ছে এ বছরের বাজেট।’ স্বাধীনতার সুবর্ণ রজতজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করতে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আরও প্রায় ১৩ লাখ গরিব মানুষকে আগামী বাজেটে নতুন করে এ কর্মসূচীর আওতায় আনা হচ্ছে। ফলে আগামী অর্থবছরে সামাজিক ভাতা প্রাপ্ত সুবিধাভোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে বর্তমান প্রায় ৭৬ লাখ থেকে ৮৯ লাখে। এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। এই কর্মসূচীতে সুবিধাভোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভাতাও বৃদ্ধি করা হবে। সেই সঙ্গে বাড়বে দেশের সূর্যসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার পরিমাণও। এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচনকে ত্বরান্বিত করতে প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়ে নানা পদক্ষেপ থাকছে। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে যে বাজেট রয়েছে তা ঠিকমতো ব্যবহার হচ্ছে কি না, সেটা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। এজন্য দরকার যথাযথ তদারকি ও সমন্বয়। যে সম্পদ রয়েছে সেটারও সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় আমাদের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। আগামী বাজেটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালনের বড় প্রতিফলন থাকবে। ঘটা করে এই জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দও রাখা হবে বাজেটে। তবে বেশি মনোযোগ থাকবে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে। সরকারের ইশতেহার অনুযায়ী এবারের বাজেটে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ শীর্ষক একটি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে। এ কর্মসূচীর আওতায় গ্রামের কাঁচা, আধা কাঁচা রাস্তা পাকা করার পাশাপাশি দেশের সব গ্রামে বিদ্যুত ও ইন্টারনেট সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। আমার গ্রাম আমার শহর কার্যক্রম বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকবে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের হাতে। তবে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে এ কাজে সম্পৃক্ত করা হবে। একইসঙ্গে সরকার টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) বাস্তবায়ন এবং আগামী দুই বছরের মধ্যে সরকারের ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে বাজেটে। এ ছাড়া নতুন বাজেটে উন্নয়নের পাশাপাশি বেশকিছু খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষতা উন্নয়ন। সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়নে নানা ধরনের পরিকল্পনাও নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিও অগ্রাধিকার খাতে থাকছে। অগ্রাধিকার তালিকায় আরও রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন, সরকারী সেবাদানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন। এ ছাড়া বহির্বিশ্বের অর্থনৈতিক সুযোগ অধিক ব্যবহার, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি ও নতুন রফতানির বাজার অনুসন্ধানের বিষয় অন্তর্ভুক্ত। আর্থিক দিক দিয়ে বিবেচনায় এবারের বাজেটের নতুনত্ব হচ্ছে নতুন মূল্য সংযোজন কর আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা। বেশ কয়েক বছর ধরেই নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের তোড়জোড় চলছে। মাঝে নির্বাচনের কারণে ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে আইনটি দুই বছরের জন্য স্থগিতও রাখা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরেই বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে নতুন ভ্যাট আইনটি। নতুন এই আইনে কর হার ৭ স্তর থেকে নামিয়ে ৫ স্তরে করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় দুই হাজার পণ্যকে করের আওতার বাইরে রাখা হচ্ছে। বছরে ৫০ লাখ টাকার কম লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানকেও বাইরে রাখা হচ্ছে ভ্যাট আইনের। আর টার্নওভার করের ক্ষেত্রে লেনদেনের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ লাখ টাকা করা হচ্ছে। আর টার্নওভার করের হার ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হচ্ছে। মূলত নতুন ভ্যাট আইনে ভ্যাটের নতুন স্তর হচ্ছে ৪টি। এগুলো হচ্ছে ৫, ৭.৫, ১০ ও ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ পণ্যের আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ, উৎপাদনে ১০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ৭.৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট রাখা হবে। তবে নতুন ভ্যাট আইন করতে গিয়ে পুরনো প্যাকেজ ভ্যাট তুলে দেয়া হচ্ছে। সে স্থলে ২ শতাংশ ভ্যাট হার কার্যকর করা হচ্ছে। অর্থাৎ আগে যেসব পণ্য ও সেবায় ট্যারিফ মূল্য ও সংকোচিত ভিত্তি মূল্যের ওপর প্যাকেজ ভ্যাট দিত, তারাই নতুন আইন অনুযায়ী ২ শতাংশ হারে ভ্যাট দেবে। যাকে ভ্যাট আইনে স্পেশালাইজড ট্যাক্স হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ পেট্রোলিয়াম ও নির্মাণ সামগ্রীর অন্যতম উপকরণ রড, মসলা, কাগজসহ বেশ কিছু পণ্য সর্বনিম্ন ২ শতাংশ হারে ভ্যাট দেবে। ফলে সব মিলিয়ে নতুন আইনে ভ্যাটের স্তর দাঁড়াচ্ছে ৫টি। উল্লেখ্য, পুরনো আইনে ভ্যাটের ৭টি স্তর ছিল যথা- ২, ৩, ৪.৫, ৫, ৭, ১০ ও ১৫ শতাংশ। নতুন ভ্যাট আইনে ১ হাজার ৯৮৩টি পণ্যকে করের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে এই আইনে থাকছে না প্যাকেজ ভ্যাট। এ ছাড়াও বছরে ৫০ লাখ টাকার কম লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট দিতে হবে না। পাশাপাশি ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দেয়া প্রতিষ্ঠানের জন্য রাখা হচ্ছে রেয়াত সুবিধা। এ ছাড়া, মৌলিক খাদ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, গণপরিবহন, গণস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, কৃষি, মাছ চাষ, দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অবাণিজ্যিক কার্যক্রম, অলাভজনক সাংস্কৃতিক সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে মোট ১ হাজার ৯৮৩টি পণ্য ও সেবা। সাধারণ মানুষের বিনিয়োগের কথা বিবেচনা করে আগামী বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হচ্ছে না। তবে বড় ধরনের সংস্কারের আওতায় আনা হচ্ছে সরকারের অর্থ সংগ্রহের এ খাতটিকে। এ ছাড়া ক্রেতাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে প্রণয়ন করা হচ্ছে কঠোর নীতিমালা। বৈদেশিক মুদ্রা আয়কে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের প্রণোদনা বাড়ানো হচ্ছে বাজেটে। এ প্রণোদনার পরিমাণ বিদ্যমান ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। পাশাপাশি দেশীয় কাপড় ব্যবহার করে ইউরোপে পোশাক রফতানিতে বিদ্যমান ২ শতাংশ প্রণোদনাও বহাল রাখা হচ্ছে। বর্তমানে সরকার ৩৫টি রফতানিমুখী পণ্যে নগদ সহায়তা দিচ্ছে। এজন্য ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। এর ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে তৈরি পোশাক খাতে। আগামী অর্থবছরে পোশাক খাতে নগদ সহায়তা এক শতাংশ বৃদ্ধির ফলে সরকারের ব্যয় বাড়বে আরও দেড় হাজার কোটি টাকা। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রণোদনা ক্ষেত্রে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এ ছাড়াও শেয়ার বাজার এবং আবাসন খাত চাঙ্গা করতেও বাজেটে প্রণোদনা রাখা হবে। মাত্রাতিরিক্ত নিবন্ধন ফি’র কারণে জমি ও ফ্ল্যাট কেনাবেচায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন ক্রেতারা। এ ছাড়া ফ্ল্যাট ক্রয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ থাকার পরও অতিরিক্ত কর থাকায় কালোটাকা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না ক্রেতারা। আবার নিবন্ধন ফি বেশি থাকার কারণে এখাতে দুর্নীতিও হচ্ছে ব্যাপক। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে ফ্ল্যাট ও জমির নিবন্ধন ফি কমানোসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হবে আবাসন খাতকে চাঙ্গা করতে। আগামী বাজেটে এই নিবন্ধন ফি অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। অন্যদিকে, বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বছরে যে পরিমাণ লভ্যাংশ দেয়, তার সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। আগামী বাজেটে এই অর্জিত লভ্যাংশ আয়ে আরও ছাড় দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে নতুন অর্থমন্ত্রীর নতুন বাজেট নিয়ে অর্থনীতিক ও বিশ্লেষকদের কৌতূহলের শেষ নেই। আবার সাধারণ মানুষেরও নজর রয়েছে এই সরকারের প্রথম বাজেটে। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি কিছুটা চাপের মুখে পড়েছে। রাজস্ব আহরণ, বেসরকারী বিনিয়োগ ও বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে বাজেটের আগে অর্থমন্ত্রীর সামনে এই তিনটি চ্যালেঞ্জ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী এই তিন চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবেলা করেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি প্রথম বাজেট উপস্থাপন হলেও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে বিগত পাঁচ বছরের বাজেট তৈরির সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) সব কিছুর সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন তিনি।
×