ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শক্ত মনিটরিংয়ের অভাবে খাদ্যে ভেজাল রোধ করা যাচ্ছে না

প্রকাশিত: ১০:১৩, ১৩ জুন ২০১৯

 শক্ত মনিটরিংয়ের অভাবে খাদ্যে ভেজাল রোধ করা যাচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খাদ্যপণ্যে ফরমালিন মেশানোর প্রবণতা কমলেও মাছ এবং দুধে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, খাবারে ভেজাল রোধে সরকার অনেক আইন করেছে। কিন্তু শক্ত মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় ভেজালের প্রবণতা রোধ করা যাচ্ছে না। ভেজাল প্রতিরোধে অনেক সংস্থা রয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ভোক্তা অধিদফতর এবং বিএসটিআইয়ের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর পরও ভেজাল নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। তারা বলেন, ভেজাল প্রতিরোধে এত প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই। একটিমাত্র শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ভেজাল প্রতিরোধে। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। স্বাধীনতা সেনিটারিয়ান পরিষদ খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে মওলানা মোহাম্মাদ আকরম খাঁ হলে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় বক্তারা অভিমত প্রকাশ করে বলেন, সারাদেশে ভেজাল প্রতিরোধ করতে হলে উপজেলাভিত্তিক আলাদা বিভাগ গঠন করতে হবে। এ সময় তারা উপজেলায় সেনিটারিয়ান পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এই খাতে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। তারা বলেন, মানুষ বেড়েছে। সেই সঙ্গে চাহিদা মেটাতে খাদ্য উৎপাদন অনেক বেড়েছে। কিন্তু এই খাতে জনবল বৃদ্ধি না পাওয়ায় উৎপাদন পর্যায়ে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা সম্ভব হচ্ছে না। খাদ্যের উৎপাদন পর্যায় থেকেই যে বিষ মেশানো হচ্ছে তা ঢাকা থেকে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশ আজ ধানের পাশাপাশি মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসর্ম্পূতা অর্জন করেছে। এছাড়া ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে। দুধ উৎপাদনে দেশ এখনও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, দাম না পেয়ে খামারিরা দুধ রাস্তায় ঢেলে ফেলছে। এর কারণ হলো, সাধারণ ভোক্তার মধ্যে দুধ নিয়ে এক ধরনের সন্দেহ কাজ করছে। অনেকেই মনে করছেন, এই দুখ খাঁটি কিনা ? দুধ খাওয়া ঠিক হবে কিনা। এই সন্দেহ মানুষের ভেতরে থেকে যাওয়ায় তারা দুধ কিনতে এক ধরনের অনীহা প্রকাশ করছেন। ফলে খামারিরা উৎপাদন করলেও আসল ওঠাতে পারছেন না। রাস্তায় দুধ ঢেলে প্রতিবাদ করছেন। এ খাতে তৃণমূল পর্যায়ে মনিটরিং ব্যবস্থা থাকলে দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হতো। অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক আবম ফারুক বলেন, সরকার ভেজাল প্রতিরোধে অনেক আইন করেছে। এছাড়া সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ভেজাল প্রতিরোধে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের একটার সঙ্গে অন্যটার কোন সমন্বয় নেই। তিনি বলেন, ভেজাল প্রতিরোধের জন্য দেশে এত প্রতিষ্ঠানেরও দরকার নেই। প্রয়োজন একটি শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা। কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হলে ভেজাল প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো। কিন্তু এখনও ভেজালের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাচ্ছে না এত আইন করার পরও। তিনি বলেন, আগে প্রায় সব পণ্যে ফরমালিন দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু সরকার আইন করে ফরমালিন আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। আগে যেখানে ৭শ’ টন ফরমালিন আমদানি করা হতো। এখন তা নিয়ন্ত্রণ করে বছরে ১শ’ টন আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু আগে যে ৭শ’ টন আমদানি করা হয়েছে এগুলো কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে? নিশ্চয় তা মানুষের পেটে হজম হয়েছে। তা না হলে এখন যে ১শ’ টন ফরমালিন আমদান করা হচ্ছে, কেউ তো অভিযোগ করছে না যে, দেশে ফরমালিনের ঘাটতি রয়েছে। কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ করা অবশ্যই সম্ভব। তিনি বলেন, আগে সব পণ্যেই ফরমালিন মেশানের অভিযোগ ছিল। কিন্তু এই প্রবণতা অনেক কমেছে। এর পরও মাছ এবং দুধে এখনও ফরমালিন মেশানোর প্রবণতা রয়ে গেছে। তিনি বলেন, আগে মৌসুমি ফলে রাসায়নিক মেশানের ব্যাপক প্রবণতা ছিল। এখনও অভিযোগ রয়েছে। বাজারে এখন হিমসাগর আম থাকার কথা। কিন্তু বাজার ঘুরে দেখা গেছে আম্রপালি, ল্যাংড়া আমও বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এই জাতের আম এখনও পাকার সময় হয়নি। তাহলে এটা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কিভাবে? নিশ্চয়ই আগেই বাগান থেকে সংগ্রহ করে বিশেষ কায়দায় পাকিয়ে বাজারে আনা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে মৌসুমি ফলে কেমিক্যাল মেশানোর প্রবণতা রোধ করা যাবে না বলে উল্লেখ করেন।
×