ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদযাত্রায় ছিল স্বস্তি, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমেছে

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১৩ জুন ২০১৯

 ঈদযাত্রায় ছিল স্বস্তি, দুর্ঘটনা ও  প্রাণহানি কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবারের ঈদ-উল-ফিতরে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ১৮৫টি দুর্ঘটনায় ২২১ জন নিহত, ৬৫২ জন আহত ও ৩৭৫ জন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ২১২ দুর্ঘটনায় ২৪৭ জন নিহত ও ৬৬৪ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) জি এম কামরুল ইসলাম এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরেন। সংগঠনটির দুর্ঘটনা গবেষণা ও মনিটরিং সেল প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের ঈদে সরকারের সদিচ্ছা ও রেশনিং পদ্ধতিতে ছুটি থাকায় ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানিসহ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কিছুটা কমেছে। ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৩০ মে থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ১০ জুন পর্যন্ত ১২ দিনে ১৮৫টি দুর্ঘটনায় ২২১ জন নিহত ও ৬৫২ জন আহত এবং ৩৭৫ জন পঙ্গু হয়েছে। একই সময়ে নৌপথে পাঁচটি দুর্ঘটনায় চারজন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছে। রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে পূর্বাঞ্চলে ১৩ জন ও পশ্চিমাঞ্চলে নয়জনসহ মোট ২২ জন নিহত হয়। যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দুর্ঘটনা গবেষণা ও মনিটরিং সেলের সদস্যরা দেশের বহুল প্রচারিত বিশ্বাসযোগ্য ১৮ জাতীয় দৈনিক, ৬ আঞ্চলিক দৈনিক ও ১০ অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ এবং জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের তথ্য মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের ঈদে গাজীপুরে ভাড়া নিয়ে বিত-া হওয়ায় সালাউদ্দিন নামের এক যাত্রীকে বাসের চাকায় পিষে হত্যা করা হয়েছে, দ্বিতীয়বার ভাড়া না দেয়ায় কুয়াকাটায় চলন্ত বাসে যাত্রীদের বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। এছাড়া লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় পুলিশের হাতে নারী ট্রেনযাত্রী লাঞ্ছিত হওয়া, বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় যানজটে কুড়িগ্রাম এলাকার আফরোজা বেগম নামে এক নারীর পথেই সন্তান প্রসব করার ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে ময়মনসিংহের ভালুকায় ট্রাকচাপায় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম, সুনামগঞ্জে বাস-লেগুনা সংঘর্ষে শাল্লা ডিগ্রী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র নীতেশ দাস, নাটোরের বড়াইগ্রামে ডিএমপির পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবদুল জলিলের মেয়ে আসনিম মীরা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র সাদেকুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে এসে বালিয়াকান্দিতে ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে মমতাজ মৌ, রাজধানীর ফার্মগেটে বাসের ধাক্কায় সিভিল এভিয়েশন কলেজের ছাত্রী তানজিলা আক্তার, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় প্রাইভেটকার খাদে পড়ে অগ্রণী ব্যাংকের ট্রেনিং সেন্টারের ব্যবস্থাপক এমারত হোসেন, কুমিল্লার গৌরীপুরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন, আশুলিয়ায় ট্রাকচাপায় পুলিশ কনস্টেবল নাদিম হোসাইন প্রমুখ নিহত হন। এছাড়াও সাতক্ষীরায় কালীগঞ্জ থানার ওসি হাসান হাফিজুর রহমান দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় মোট যানবাহনের ৬৩ বাস, ৩৮ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ, ১৯ কার-মাইক্রো, ৩০ নছিমন-করিমন, ভটভটি-ইজিবাইক, অটোরিক্সা, ৬৪ মোটরসাইকেল ও ২৬টি অন্যান্য যানবাহন এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫১টি গাড়িচাপায়, ৮১টি সংঘর্ষ, ১৯টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ও অন্যান্য কারণে ৩৪টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঈদ কেন্দ্রিক অতিরিক্ত যাত্রী চাপ, চালকদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ও অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অদক্ষ চালক হাতে দৈনিক চুক্তিতে যানবাহন ভাড়া দেয়া, ফিটনেসবিহীন যানবাহনে যাত্রী বহন, মহাসড়কে অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, নছিমন-করিমন, মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, বিরতিহীন/বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো, যাত্রীদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সুপারিশমালা ॥ যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ, সড়ক বাঁক সোজা করা, যানবাহানের ফিটনেস পদ্ধতি ডিজিটাল করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা, হালকা গাড়ি চালানো লাইসেন্স নিয়ে ভারি গাড়ি চালাচ্ছেন এমন চালকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া, মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, অটোরিক্সা বন্ধে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত শতভাগ বাস্তবায়ন করা, মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধের উদ্যোগ নেয়া, রেশনিং পদ্ধতিতে ছুটির ব্যবস্থা, যাত্রী সচেতনতা বৃদ্ধি, ঈদযাত্রায় সরকারী-বেসরকারী সংস্থার স্টাফবাস যাত্রী বহনে ব্যবহার করা এবং প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে যানবাহন ভাড়া করা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের সভাপতি ইসমাইল গাজী দেলোয়ার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামারুল ইসলাম চৌধুরী, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল যুবায়ের, অর্থ সম্পাদক সায়মুন নাহার জিদনী প্রমুখ।
×