ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘বড় ভাইয়ের বদলে’ ছোট ভাই জেলে- অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে সজল

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১৩ জুন ২০১৯

  ‘বড় ভাইয়ের বদলে’  ছোট ভাই জেলে- অবশেষে মুক্তি  পাচ্ছে সজল

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে ‘বড় ভাইয়ের বদলে’ গ্রেফতার হওয়া ডাব বিক্রেতা সজল মিয়াকে (৩৪) দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে আসামি না হয়েও কেন যাবজ্জীবন কারাদন্ড পাওয়া আসামি হিসেবে সজলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তার জবাব দিতে রাজশাহী মহানগর পুলিশের শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজকে শোকজ করেছে আদালত। বুধবার বেলা ৩টার দিকে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের (প্রথম) বিচারক মোঃ মনসুর আলম এ আদেশ দেন। আদেশ অনুযায়ী ওসি মাসুদ পারভেজকে সাত দিনের মধ্যে আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে জবাব দিতে হবে। গত ৩০ এপ্রিল সজলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সজলের বাড়ি নগরীর ছোট বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ায়। বাবার নাম তোফাজ উদ্দিন। সজলের বড় ভাইয়ের নাম সেলিম ওরফে ফজল। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় ২০০৯ সালে ফজলের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। রায় ঘোষণার আগে থেকেই তিনি পলাতক। গত ৩০ এপ্রিল শাহ মখদুম থানা পুলিশ ফজলের পরিবর্তে সজলকে গ্রেফতার করে। এর পর ফজল হিসেবে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সজলকে যখন আদালতে উপস্থাপন করা হয় তখন তার নাম ফজল বলেই পুলিশের গ্রেফতারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। দুই সাক্ষী এ ব্যাপারে এফিডেভিট করে দেয়ায় তাকে সেদিন কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু গত ২৬ মে সজল আসামি নন দাবি করে আইনজীবীর মাধ্যমে নিজের মুক্তির জন্য আবেদন করেন। এর পর মঙ্গলবার শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। এদিন আদালত না বসায় পরদিন আবারও শুনানি হলো। প্রায় দেড় মাস কারাভোগের পর এদিন অব্যাহতি পেলেন সজল। আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০১ সালে আসামি ফজলের বয়স ছিল ২৭ বছর। বর্তমানে তার বয়স হবে ৪৫ বছর। কিন্তু সজলের জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর। এছাড়া আসামি ফজল মামলার রায়ের আগে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। তখন তার শারীরিক গঠন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সংরক্ষণ করা হয়। এখন আবার পর্যাবেক্ষণ করে দেখা যায়, গ্রেফতার সজলের সঙ্গে সে বর্ণনার উল্লেখযোগ্য তারতম্য রয়েছে। পুলিশ ভুল করে তাকে ফজল ভেবে গ্রেফতার করেছে। এদিন সজলের ছয় ভাই-বোন আদালতে এফিডেভিট করে জানান, দ-প্রাপ্ত আসামি ফজল দীর্ঘদিন ধরেই নিখোঁজ। তারা ফজলের কোন খোঁজ জানেন না। তিনি বেঁচে আছেন কিনা তারা সেটিও জানেন না। আর ফজল হিসেবে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি আসলে সবার ছোট ভাই সজল। এসব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই সজলকে দায় হতে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। তবে আদালতের আদেশের পর তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আদালত থেকে আদেশের অনুলিপি সেখানে পাঠানো হবে। এর পর কারাকর্তৃপক্ষ যাচাই করে দেখবে তার বিরুদ্ধে অন্য কোন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে কিনা। তা না থাকলে সজলকে মুক্তি দেয়া হবে। এদিন আদালত থেকে সজল হাসিমুখেই কারাগারে গেছেন। তবে পুলিশ তার সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের কথা বলতে দেয়নি। অবশ্য আগের দিন শুনানির জন্য আদালতে আনা হলে হাজতে ঢোকানোর সময় সজল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ওই দিন তিনি বলেন, কোন দোষ করিনি। আমি আসামি নই। তার পরও আমি কয়েদি!’ সজল বলেন, পুলিশ আমাকে বিনাদোষে জেলে পাঠিয়েছে। জেলে কয়েদি হিসেবে কাঠমিস্ত্রির কাজ করতে হয়। বিনা দোষে এসব সহ্য করতে হচ্ছে। সজলের আইনজীবী মোহন কুমার সাহা বলেন, অপরাধী না হয়েও সজল কয়েদি হিসেবে সাজা ভোগ করেছেন। তার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। ওসির শোকজের জবাব পাওয়ার পর আদালত এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত দেবে সেটির জন্য আমরা অপেক্ষা করব। তারপর প্রয়োজনে মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা ভুক্তভোগী সজলের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করে আদালতে আবেদন করব। এদিকে বিনা দোষে গ্রেফতার করায় শাহ মখদুম থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজের শাস্তি দাবি করেছেন সজলের ভাই মোঃ বাবু। তিনি বলেন, সজলকে গ্রেফতারের পর আমরা অনেক বুঝিয়েছি। ওসি কোন কথা শোনেননি। ছেড়ে দেয়ার আশ্বাসে আমাদের সন্ধ্যা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছিলেন থানায়। তারপর সকালে আসতে বলেন। আমরা আবার ভোর ৬টায় থানায় যাই। দুপুর পর্যন্ত বসিয়ে রেখে সজলকে আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দেড়মাস ধরে আমরা হয়রানি হলাম। তাই ওসির শাস্তি চাই। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফফর হোসেন বলেন, নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর জন্য ওসির শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু এখানে দুজন সাক্ষী ওসিকে এফিডেভিট করে দিয়ে বলেছিলেন, এটাই আসামি। তাই ওসির জবাবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আদালতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে।
×