খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে পারস্যের মহাকবি শেখ সাদীর জীবন ও কর্ম আশ্রিত নাটক শেখ সাদী। চন্দ্রকলা থিয়েটারের ১৮তম প্রযোজিত নাটকটির রচনায় অপূর্ব কুমার কুন্ডু এবং নাম ভূমিকায় একক অভিনয় ও নির্দেশনায় এইচ আর অনিক। নাটকটির প্রযোজনা সহযোগী ঢাকাস্থ ইরান কালচারাল সেন্টার। ইরানের মহাকবিকে নিয়ে নাটক রচনা, মহড়ার মূল্যায়ন, ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের দৃষ্টিভঙ্গি, ফজর ফেস্টিভ্যালে আমন্ত্রণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আনন্দ কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন- ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জনসংযোগ কর্মকর্তা এবং শেখ সাদী নাটকের প্রযোজনা উপদেষ্টা মোঃ সাইদুল ইসলাম। সাক্ষাতকারটি গ্রহণ
করেছেন- অবিনাশ পুরকায়স্থ।
আনন্দ কণ্ঠ : চন্দ্রকলা থিয়েটার, শেখ সাদী নাটক মঞ্চায়ন এই বিষয়ের সঙ্গে ইরান কালচারাল সেন্টারের মেলবন্ধন নিয়ে বলেন।
সাইদুল ইসলাম : চন্দ্রকলা থিয়েটারের দল প্রধান অভিনেতা-নির্দেশক এইচ আর অনিক এবং শেখ সাদী নাটকের নাট্যকার অপূর্ব কুমার কুন্ডু যৌথভাবে একদিন আমাদের এখানে আসেন। তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বলেন। আমরা বুঝতে পারি তারা শেখ সাদী নাটকটি মঞ্চায়ন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইরানের একজন বিখ্যাত কবিকে নিয়ে বাংলাদেশের কোন নাট্যদল নাটক করছে বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে আমাদের আকর্ষণ করে, উদ্বেলিত করে। আগ্রহের আতিশয্যে আমরা চন্দ্রকলা থিয়েটারের কাছে নাটকের পা-ুলিপিটি দেখতে চাই এবং যথারীতি তারা তা সরবরাহ করে। প্রাথমিক পর্বে আমরা পান্ডুলিপি পড়ি এবং মুগ্ধ হই আমাদের বিস্ময়, মহাকবি শেখ সাদীকে এতটা প্রাণবন্ত এবং জীবন্ত করে রচনা করা দেখে। প্রাথমিক পর্ব অতিক্রম করে আমরা স্ক্রিপ্ট পাঠাই ফারসী সাহিত্যের স্কলার, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ফারসী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ইরানী ভিজিটিং প্রফেসর ড. কাজেম কাহদূয়ী ও ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিক্ষা বিভাগের প্রধান ড. জহির উদ্দিন মাহমুদের কাছে। তারা শক্তিশালী রিভিউয়ের মাধ্যমে তাদের মতামত নোট আকারে দেন। তা পর্যালোচনা করে আমরা আবার চন্দ্রকলা থিয়েটারের সঙ্গে বসি এবং ন্যূনতম যেটুক সংযোজন-বিয়োজন এবং বিবর্তনের প্রসঙ্গ তা তুলে ধরি। এইচ আর অনিক এবং অপূর্ব সেটা বিবেচনায় নিয়ে স্ক্রিপ্ট ফাইনাল করেন। পান্ডুলিপি ফাইনাল হলে প্রসঙ্গ আসে প্রযোজনার। তখন চন্দ্রকলা থিয়েটারের দল প্রধান এইচ আর অনিক এবং আমাদের কালচারাল কাউন্সিলর এবং বিদ্বগ্ধ শিল্পানুরাগী ড. মাহদী হোসেইনি ফায়েক আলোচনায় বসেন। অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশের সেই আলোচনায় শেখ সাদী নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়নে হলের ভেতর-বাহিরের সাজসজ্জায় সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরানের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এভাবেই চন্দ্রকলা থিয়েটার, শেখ সাদী নাটকের মঞ্চায়নের সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত হলাম।
আনন্দ কণ্ঠ : শেখ সাদী নাটকটি নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলেন।
সাইদুল ইসলাম : সংক্ষেপে বলতে গেলে, দিল্লীর স¤্রাটের আমন্ত্রণে তখনকার বিশে^র প্রধানতম কবি হিসেবে শেখ সাদীর আমন্ত্রিত হওয়া এবং রাজকীয় ওই সফরে শিরাজ থেকে কবির দিল্লী যেতে না পারা, শৈশব-কৈশর ও যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্য বেলায় উপনীত হওয়া, যাপিত জীবনকে বর্ণিল আভায় ফিরে দেখা, জীবন রূপ সমুদ্র সেচে মুক্তা রূপ সাহিত্য তুলে আনা প্রভৃতির প্রেক্ষাপট নিয়ে অপূর্ব কুমার কু-ুর এক মরমীয় রচনা শেখ সাদী। প্রসঙ্গত ভাবতে ভাললাগে, নাটক রচনার গবেষণা পর্বে আমরা নাট্যকারকে যথেষ্ট বই দিয়ে সহযোগিতা করেছিলাম এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার তিন তিনবার যিনি ইরানের বিখ্যাত ফজর ফেস্টিভ্যালে গেছেন, শিরাজ নগরীতে উপচেপড়া গোলাপের ছায়ায় শেখ সাদী চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সেখানেও তার জিয়ারতের কথা নাট্যকারকে জানিয়েছিলাম। অপূর্ব’র কাছ থেকে জেনেছি রামেন্দু মজুমদার অকৃত্রিমভাবে ফজর ফেস্টিভ্যালের অভিজ্ঞতা, শিরাজবাসীর দৃষ্টিতে শেখ সাদীর মূল্যায়ন, মধ্যপ্রাচ্য তথা বিশ্ব জুড়ে শেখ সাদীর অবস্থান, গোলাপ বাগানে অন্তিম শয়ন প্রভৃতি এমন দৃশ্যকল্প রূপে বলেছেন যা তার রচিত নাটকের খন্ডে খন্ডে বিরাজমান। পক্ষান্তরে ইরান কালচারাল সেন্টারের রিভিউ কমিটির সামনে এবং মহড়া কক্ষের অনুশীলনে এইচ আর অনিকের নিমগ্ন এবং ক্ষিপ্র অভিনয় আমাদের শেখ সাদীর সান্নিধ্য পাইয়ে দিচ্ছে নিয়ত-প্রতিনিয়ত।
আনন্দ কণ্ঠ : শেখ সাদী নাটক নাকি তেহরানে ফজর ফেস্টিভ্যালে যাবে।
সাইদুল ইসলাম : আমাদের কালচারাল কাউন্সিলর ড. মাহদী হোসেইনি ফায়েক সার্বিক বিবেচনায় ফজর ফেস্টিভ্যালে অংশ গ্রহণের জন্য শেখ সাদী নাটকের নাম প্রস্তাব করবেন বলে জানিয়েছেন। আশা করছি নাটকের গুণগত মান বিবেচনায় খুব শীঘ্রই চন্দ্রকলা থিয়েটার আমন্ত্রণ পাবে।
আনন্দ কণ্ঠ : প্রযোজনা উপদেষ্টা হিসেবে শেখ সাদী নিয়ে আপনার প্রত্যাশা।
সাইদুল ইসলাম : পোশাককে খাবার খাওয়ানোর সূত্র ধরে কম বেশি সকল বাংলাদেশীর কাছে শেখ সাদী এক পরিচিত মহৎপ্রাণ। ইরানের বাইরের কোন দেশের নাট্যকারের পরিশ্রম আমরা দেখেছি, অভিনেতা-নির্দেশক-দলের পরিশ্রম দেখছি। আমার বিশ্বাস, একটা মানুষ মূল্যায়িত হয় তার পরিশ্রমে। চন্দ্রকলা থিয়েটারের পরিশ্রম দেখে আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। মঞ্চে যদি চন্দ্রকলা থিয়েটার সেই পরিশ্রমটা শেখ সাদী রূপায়নের মধ্য দিয়ে দর্শকদের সামনে তুলে ধরতে পারে তবে দর্শক তাদের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা-উৎসাহ-ভালবাসা গোলাপের ঘ্রাণের মতো বিলিয়ে দিতে কার্পণ্য করবে না। ফলে চন্দ্রকলা থিয়েটার তাদের সবটুকু শ্রমমঞ্চে উজার করে দেবে, দেশ এবং বিদেশের শিল্পানুরাগী দর্শকশ্রোতার শিল্প পিপাসা নিবৃত্ত করবে এটুকুই একজন সংস্কৃতি ও নাট্যানুরাগী হিসেবে আমার আন্তরিক প্রত্যাশা।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: