ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য খাতে ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৮:০৫, ১৩ জুন ২০১৯

 স্বাস্থ্য খাতে ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাস্থ্য খাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পরিচালন ব্যয় ১০ হাজার ৭ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ৯ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার ক্যলাণ বিভাগের পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ধারা হয়েছে ২ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। বরাদ্দ বেড়েছে ২ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতে উন্নয়নের মাধ্যমে মানসম্মত স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও সবার জন্য সাশ্রয়ী ও গুণগত পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিশ্চিত করে একটি স্বাস্থ্য সচেতন সুস্থ, সকল ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সরকার নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ মাতৃ মৃত্যুহার, নবজাতকের মৃত্যুহার , অনুর্ধ্ব -৫ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুহার , অপুষ্টি, খর্বতা, কম-ওজন ইত্যাদি হ্রাসে ক্রমাগত উন্নতি সাধিত হচ্ছে। জানুয়ারি , ২০১৭-জুন,২০২২ মেয়াদে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচী(৪র্থ এইচপিএনএসপি) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যার আওতায় মোট ২৯টি অপারেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে সারাদেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান ও চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়ন করা হচ্ছে। উক্ত কর্মসূচীর ৮৪ শতাংশই সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সরকারের গৃহিত উল্লেখযোগ্য প্রকল্পসমূহ তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ, সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সকল জেলাসদর হাসপাতালে নেফ্রোলজি ইউনিট ও কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন এবং বিভাগীয় শহরে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসা ইউনিট স্থাপনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গৃহিত হয়েছে। এছাড়া, হবিগঞ্জ, নীলফামারী, নেত্রকোনা, মাগুরা ও নওগাঁ জেলায়@ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত হোস্টেল নির্মাণ, মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থাপন এবং প্রতিটি বিভাগীয় হাসপাতালের শিশু কার্ডিয়াক ইউনিট স্থাপনের জন্যও প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকারমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য গৃহীত কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি বেজড প্রসূতি সেবার ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের কমিউনিটি বেজড৪ স্কিলড বার্থ এটেনডেন্ট প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সেবা গ্রহণে উৎসাহ প্রদান, মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম সম্প্রসারণ এবং সার্জিক্যাল ও ব্রেস্ট ক্যান্সার আগাম সনাক্তকরণ। অন্যদিকে নবজাতকের চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারণের জন্য ১০ টি জেলা হাসপাতাল এবং ৬১ টি উপজেলা হাসপাতালে স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিট চালু করা হয়েছে। একই সাথে জনগণের স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকার ৯ হাজার ৭৯২ জন মেডিকেল অফিসার নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, বিজ্ঞানের নতুন নতুন উদ্ভাবন ও উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিকিৎসা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বিগত দশ বছরে সারাদেশে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা এবং এমবিবিএস কোর্সের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ৪৬ টি থেকে ১১১ টিতে উন্নীত হয়েছে। একই ভাবে এমবিবিএস কোর্সের সংখ্যা ২ হাজার ৫০ টি থেকে ১০ হাজার ৩০০ টি করা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার বিস্তার নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ওষুধখাতের বিকাশের বিষয়ে তিনি বলেন, ওষুধখাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ওসুধর কাঁচামাল ও ল্যাবরেটরি বিকারক উৎপাদনকারীদের রফতানি উৎসাহিতকরণে ১০ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে। অটিস্টিক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবার ওপর জোর দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, অটিস্টিকসহ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের জন্য চিকিৎসা ও অন্যান্য সামাজিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। তারা যেসকল কর্ম সম্পাদনে পারদর্শী ও সক্ষম সেকাজে বিশেষাষিত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে কর্মক্ষম করে তোলা হবে।
×