ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেলের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ১৩ জুন ২০১৯

 পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেলের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে রেলখাতে। গত অর্থবছরে যোগাযোগ সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে সংশোধিত বাজেট ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। তবে ২০১৯-২০ এর প্রস্তাবিত বাজেটে ১৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দিন দিন দেশের নৌপথ সংকুচিত হওয়ার মুখে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব পেশ করেন। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট। এটি দেশের ৪৮তম এবং বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি। বিকেল ৩টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অধিবেশন শুরু হয়। কিছুক্ষণ বাজেট পেশ করার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের অনুরোধে বাজেট উপস্থাপন করন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যোগাযোগ খাতে এবারের বাজেটে মোট প্রস্তাব করা হয়েছে ৬১ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। যা গত বাজেটে ছিল ৫৩ হাজার ৮১ কোটি টাকা। এরমধ্যে সড়ক বিভাগের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এই সেক্টরে সংশোধিত বাজেট ছিল ২৩ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। সেতু বিভাগের জন্য এবারের প্রস্তাবিত বাজেট ধরা হয়েছে আট হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা যা গত বছরে সংশোধিত বাজেট ছিল ৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এছাড়া এবারের বাজেটে যোগাযোগ খাতের অন্যান্য খাতে ৭ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমান সরকার রেলওয়েকে একটি সাশ্রয়ি, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ খাতের উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এ খাতের উন্নয়নে সরকার ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬-৪৫ সাল পর্যন্ত ৩০ বছরব্যাপী মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ মহাপরিকল্পনায় ২০৪৫ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য ২৩০টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যাত্রীদের যাতায়াত আরো সহজ হবে পাশাপাশি পরিবহন ব্যয় হ্রাস, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, জনসাধারণের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ধারণা। সারাদেশে রেলপথ সম্প্রসারণ, নতুন রেলপথ নির্মাণ ও সংস্কার, রেলপথকে ডুয়েলগেজে রুপান্তরকরণ, নতুন ও বন্ধ রেল স্টেশন চালু করা, নতুন নতুন ট্রেন চালু ও ট্রেনের সার্ভিস বাড়ানো, কোচ সংগ্রহের কাজ চলমান আছে। আগামী অর্থবছরে এক হাজার ১১০ কিলোমিটারের বেশি ডুয়েলহেজ রেলপথ নির্মাণ, ৫২ কিলোমিটার নতুন রেলট্র্যাক নির্মাণ, ১০০টি লোকমোটিভ সংগ্রহ, ২টি আইসিডি নির্মাণ, লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ, তিনটি মেজর ব্রিজ নির্মাণ, এক হাজার ১২০টি যাত্রীবাহি কোচ সংগ্রহ, তিনটি রেলওয়ে ওয়ার্কশপ আধুনিকায়ন/নির্মাণ এবং সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া ই-টিকেটিং চালুর ফলে যাত্রীদের রেলভ্রমণ যেমন সহজতর হয়েছে তেমনি মোবাইল ্এ্যাপস চালুর ফলে বর্তমানে অতি সহজেই যাত্রীরা রেলের অবস্থান সম্পর্কে সহজে জানতে পারেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম দ্রুতগতির ট্রেন লাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। বাণিজ্য সহায়ক নৌপথ ও বন্দর উন্নয়ন বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সমুদ্র-নদী-স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো ও দক্ষ পরিচালন ব্যবস্থার গুরুত্ব বিবেচনা করে নদ-নদীসমূহের ক্যাপিটাল ড্রেজিং সহ বন্দরসমূহের মান উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং কার্যক্রম গ্রহণ কার হয়েছে। নদীপথের পাশাপাশি সমুদ্রবন্দরসমূহের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুবিধাদি উন্নয়নের লক্ষে কার্যক্রম চলমান আছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বে-টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত। আগামী অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডেলিং ক্যাপাসিটি দুই দশমিক আট মিলিয়ন থেকে তিন মিলিয়ন (টিইইউ) পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হবে। পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুবিধা নির্মাণের কাজ চলমান আছে।
×