যখন বৃষ্টি নামল
এখানে বৃষ্টি নেমেছে,
হলুদ হয়ে আসা দিগন্ত জুড়ে,
একটানা জলতরঙ্গ,
আকাশের কোন শিব কুমারে।
দূরে ভেসে আসা এফএম-র সুরে,
চায়ের ভাড়ে বৃষ্টি আদর মাখা,
কখন অজান্তে মনের বদলে
শরীরে আদরের প্রলেপ।
রাস্তায় মেসি, রোনাল্ডো, নেইমারদের
উল্লাস আর হতাশা মেশানো,
পাতার নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে,
বিন্দু ঝাঁপ দেয় রাস্তার সিন্ধুতে।
শুধু ধোঁয়া হয়ে আসা অন্ধকারে,
বৃষ্টি কাউকে খুঁজে ফেরে,
নির্জন নিঃস্তব্ধতার কড়া নাড়ে,
মন ও খুঁজছে যেন কাউকে।
বৃষ্টিভেজা এক সন্ধ্যাবেলায়,
যে আস্তে আস্তে অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছিল,
বৃষ্টির মতো নিরন্তর মন তো খোঁজে তাকেও।
.
জানলাটা বন্ধই থাক
ঘরময় ছড়ানো কাগজ,
দলা পাকানো ছেঁড়া পাতার দল।
জানলা বন্ধ করে দিই,
সশব্দে,
পাছে উড়ে যায় তারা,
দমকা অগোছালো হাওয়ায়,
আমার উচ্ছনে যাওয়ার গোপন ইতিহাস নিয়ে।
উড়লে যে খুব ক্ষতি কারুর হবে তা হলফ করে বলা যায় না,
কিংবা গোপন কথা জানলেও যে পৃথিবী রসাতলে যাবে তাও হয়ত নয়,
বড়জোর কোন সন্ধ্যে ছুঁই ছুঁই ট্রেনের কামরায়
কেলেঙ্কারি বলে কোন অনেকক্ষণ ক্ষিদের সঙ্গে লড়াই করা
কিশোর হকার চেঁচাবে,
তার হাতের কাগজের বান্ডিল বেচে রাতের স্টেসনের রুটি তরকারির আশায়।
আর হেডলাইনে চোখ বুলিয়ে ধুস সবকটা চোর
বলে সেই কাগজ ঢুকে যাবে কোন গহ্বরে,
সের দরে রদ্দি কাগজের স্তূপে ঠোঙা হওয়ার ললাট লিখন নিয়ে।
তাহলে আর উড়োখইয়ে ভয় কি?
উড়ুক না যতখুশি,
দৌড় তো ওই ঠোঙা অবধি!
কিন্তু যদি রয়ে যায়,
গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসে
ওর ওই সব সাদা কালো হরফগুলো নিয়ে?
কারুর আগুনের জ্বালানি হয়ে?
দাবানল জ্বলবে না তো ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ থেকে?
ছারখার করে দেবে না তো
অনেক গোপন লিপ্সায়,
অনেক জিঘাংসা মেটানো,
অনেক পিচ্ছিল দড়িতে ট্রাপিজের খেলা খেলে বানানো
এই সাধের জগৎটাকে?
তাই ভয় সেই আগুনটাকে।
তাই জানলাটা না হয় বন্ধই থাক,
পাখারও দরকার নেই, কি বলো?
কোথায় কোন কাগজ উড়েচলে গেল,
বলা তো যায় না,
যা দিনকাল পড়েছে!
শেষে সোফার কোনে ঘাপটি মেরে থাকা
কাগজের একরত্তি টুকরোই না মহাভারত হয়ে যায়!
আর খুব গরম লাগলে
ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল এসি তো আছেই।
ভয়েরও তো ঠান্ডা লাগে!!!!!
.
ঝিলমের গান
ঝিলমের গল্প, শুনবে না?
পড়ন্ত বিকেলের সোনালী চাদরে,
ঢেউয়ের দোলায় তীরে বাঁধা তরীর সঙ্গে দুলতে দুলতে,
শীতল হাওয়ায় প্রাণের পরশ নিয়ে,
দিন শেষের পালা গুনছি আমি।
আমার তীরে ওই যে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া গাছটা,
দিনান্তে কলকাকলিতে মুখরিত হয়,
সেও আদতে সারাদিন এক বুক রোদ্দুর নিয়ে অধীর অপেক্ষায়,
কখন আবার শুনবে ডানা ঝাপটানো।
তীরের যে বালুরাশি,
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হয়েও যারা অগণ্য,
যুথবদ্ধভাবে তটভূমি হয়ে টক্কর দেয় আমার সঙ্গে,
তাদের কোনও বিরাম নেই।
গভীরে যে বেদনা জমা রয়েছে তিল তিল করে,
রোদ্দুরে যে দীর্ঘশ্বাস হারিয়ে যায়,
রাতের অবগুণ্ঠনে তারাই কথা বলে,
হাসে, কাঁদে আনন্দ করে,
গল্প বলে।
সেই গল্প তো শোনো না তোমরা,
কেউ শোনে না,
কারুর শোনার সময় নেই যে।
সবাই যে জিততে চায়,
পৃথিবীকে পিছনে ফেলে।
আমার না বলা গল্প তাই হাহাকার করে ফেরে,
নির্জন চাঁদনি রাতে,
অথবা বৃষ্টিতে দুকূল ধোঁয়াশা কোনও আঁধারে।
আছড়ে পড়ে বেলাভূমির শক্তিক্ষয় চায়,
নিস্ফল আক্রোশে।
তবু আমি কথা বলি,
বলেই চলি।
শুনতে তোমাদের হবেই একদিন।
এই বন, ফুল, ফল আমি না থাকলে তো নেই।
আমি যে নদী।
আমি যে ঝিলম।
.
হঠাৎ দেখা আমার সঙ্গে
হঠাৎ দেখা আমার সঙ্গে,
কত না বসন্ত পেরিয়ে।
বহু যুগের ওপারের আমি শুধোয়,
কেমন আছিস?
ভাল আছিস তো?
সেই প্রাণখোলা হাসিতে ঘর ভরাস এখনও,
নাকি সব কান্না চোখেই আশ্রয় নেয়?
স্বপ্ন দেখিস এখনও?
খোলা জানালা দিয়ে ছুঁতে চাস নীল আকাশকে?
রাতের তারা গুনিস এখনও?
গভীর রাতের হাওয়ায় শিহরিত হোস?
কোন অজানা প্রেমের বার্তা জেনে?
আচ্ছা, এখনও কি রাস্তা হারাস,
জনস্রোতে ভালোবাসিস নিজেকে খুঁজতে?
ইট কাঠ কংক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে যেতে
মন চায় কোন অরণ্যে হারাতে?
অনেক পাল্টেছিসতো বহির্ঙ্গে,
মনটাও কি শান দিয়েছিস বাস্তবের কষ্টিপাথরে?
সেই আমি আরও কত না প্রশ্ন করে।
সব উত্তর তো জানি না।
আগামীর আমির কাছে চাইব জানতে।