ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইচ্ছে করে যাই চলে যাই অচিনপুর

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ১৪ জুন ২০১৯

ইচ্ছে করে যাই চলে যাই অচিনপুর

ছোটদের মানসিক বিকাশে নতুন নতুন পরিবেশে ভ্রমণ খুবই উত্তম। সুস্থ ও স্বাভাবিক নিয়মে বেড়ে উঠতে এবং বাস্তব জীবনের শিক্ষা দেয়ার জন্য শিশুকে সময় সুযোগ করে প্রায়ই নিয়ে যাওয়া উচিত প্রকৃতির কাছে। উদার প্রকৃতিই হলো আমাদের উত্তম শিক্ষক। শহুরে পরিবেশে বড়দের সঙ্গে সঙ্গে ছোটরাও দিন দিন যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে। যার প্রভাব আমাদের অতি মূল্য দিয়ে শোধ করতে হচ্ছে। সুযোগ পেলে সন্তানদের নিয়ে প্রায়ই ছুটি প্রকৃতির অতল গহীনে। গত কিছুদিন আগে যান্ত্রিক জীবনে মিলেছিল দুই দিনের অবসর। ব্যাস! কে আর পায়। ভ্রমণ সারথী, জীবন সঙ্গিনী আর তিন কন্যা। রাতের গাড়িতে চড়ে সকাল দশটায় গিয়ে পৌঁছি কক্সবাজার। আগে থেকেই এন আজিম কটেজ ছিল রেডি। কলাতলী নেমে সোজা হোটেল লবি, খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে ছুটি সৈকত পানে। বালিয়াড়ি আর সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে আমাদের হয় মিতালি। বীচ বাইকে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট হতে কলাতলী ছুটে বেড়াই মহা আনন্দে। আমার তিন কন্যা কনিতা, রবিতা, বসিতাহ বলতেই আমি যে অজ্ঞান, তাদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে আমিও হই উচ্ছ্বসিত। এবার শুরু হয় উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে জলকেলি, তিন কন্যার প্রতি তিক্ষ্ন দৃষ্টি রাখতে গিয়ে আমি তখন মহাব্যস্ত। এ যে সন্তানের প্রতি পিতার অকৃত্তিম ভালবাসা এবং দায়িত্ববোধে অংশ। দীর্ঘক্ষণ সমুদ্রের নোনা জলের ঢেউয়ের সঙ্গে মাতামাতি, অতঃপর ঘোড়ার পিঠে সওয়ার, ফটো স্যুট অবশেষে হোটেলে ফেরা। ফ্রেস হয়ে বার্ড রেস্তরাঁয় কয়েক পদের ভর্তা, ভাত, রূপ চাঁদা ফ্রাই দিয়ে পেট পূজারি। চেটে পুটে খেয়ে দেয়ে সময়িক বিশ্রাম নিয়ে ঘুরে বেড়াই শহরজুড়ে, আচার কিনে ব্যাগ ভরি, শামুক ঝিনুকের হরেক পসরা কিনে লই বইতে গিয়ে মনে হলো এযেন চোরের বোঝা! কলাতলী বীচে সি-পপিস এ মজাদার সব বার্গার আর সি-ফুড হরদম খেয়ে চলে যাই ঘুমাতে। ওঠতে হবে সকাল সকালে, যেতে হবে সৌন্দর্যের আঁধার- নয়ন জুড়ানো প্রকৃতির রাজ্য উখিয়ার পাটুয়ার টেক। দুরন্ত-ছুটন্ত প্রাণবন্ত মেয়েদের জন্য কি আর চাইলেই ঘুমাতে পারি! কটেজে ছোটাছুটি করে বিছানায় শুই রাত ১২টারও পরে। এক ঘুমে রাত পার। সকালে নাশতা সেরে শফিকুলের সিএনজিতে চড়ে রওনা হই ওখিয়ার পথে। মেরীন ড্রাইভে পিচ করা সড়কে সিএনজি ছুটছে। সড়কের এক পাশে সাগর, আরেক পাশে পাহাড়, সারি সারি ঝাউ গাছের ছায়া ঘেরা সুন সান নিরিবিলি সড়ক পথে জার্নি করার মজাই আলাদা। মাঝে ইনানী ব্রেক, ঘণ্টা তিনেক বিশাল বালিয়াড়ী আর ঢেউয়ের সঙ্গে চলে খুনসুটি, কষ্ট পাই- যখন দেখি অগণিত চিপ্সের প্যাকেট, কলার খোসা সিগারেটের প্যাকেট, ফিল্টারসহ আরও অনেক প্রকারের আবর্জনা সুন্দর একটি সৈকত জুড়ে- যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। উচ্চ মাত্রার শব্দ দূষণ, সচেতনতার অভাব আর অবহেলা- এভাবে চলতে থাকলে, খুব শীঘ্রই সুন্দর এই সৈকতের অপমৃত্যু হবে। পেট বাবাজীর ডাক পড়ে-যাই সৈকত লাগোয়া নাম ডাক ওয়ালা এক রেস্টুরেন্টে চলে আমাদের দুপুরের আহার। দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের টাকা খসাতে জুড়ি মেলা ভার কিন্তু একটি ড্রেসিং রুমের জন্য সামান্য ব্যায় করতে রয়েছে কর্তৃপক্ষের ভীষণ কার্পণ্য। টয়লেটের ভেতরেই সারতে হয় ভ্রমণপিপাসুদের ভেজা কাপড় বদলানোর কাজ। আশ্চর্য! বাইরে কত সুন্দর সাজনো-গুছানো অথচ বাতির নিচে অন্ধকার। দেখা হয় ঢাকা থেকে যাওয়া নানা দেশে ঘুরে বেড়ানো হুমায়ুন সাহেবের সঙ্গে। তিনিও এমন একটি রেস্টুরেন্টে ড্রেসিং রুম না থাকায় উষ্মা প্রকাশ করলেন। এসব কারণেই আমাদের দেশে পর্যটন শিল্পর বিকাশ আজও অনঅগ্রসর। খাবার পর্ব চুকিয়ে আবারও ছুটি। ইনানী হতে মাত্র সাত কিলোমিটার। পাটুয়ার টেক যাবার পথের সৌন্দর্য যেন আরও হৃদয় গ্রাহি আরও বেশি কোমল। উদার করা প্রকৃতির মোহে মনের অজান্তেই গেয়ে উঠি- ইচ্ছে করে যাই চলে যাই অচিনপুর/যেখানে দুঃখ নেই কষ্ট নেই... সিএনজির ব্রেকে চেতনা ফিরে এল। একেবারে পাটুয়ারটেক বীচে লাগোয়া থেমেছে। ততক্ষণে ভাটা শুরু, পুরো পুরি মোক্ষম সময়। ওয়াও! এ যেন প্রবাল পাথরের স্বর্গরাজ্য। সৈকতজুড়ে শামুক ঝিনুকের ছড়াছড়ি, নেই কোন উটকো হকার কিংবা অসচেতন মানুষের উদ্ভট কোলাহল, অর্বজনা মুক্ত চিক চিক করা সাদা বালির সৈকত। ঝিনুক কুড়ানো শিশুদের সঙ্গে আমার তিন কন্যাও মিলে মিশে করেছিল সৌহার্দের মেলাবন্ধন। উচ্ছল উদ্যম প্রাণ চঞ্চল্য ছুটো ছুটি, সারিবদ্ধ নারিকেল গাছের ছায়া, সৈকতের পাশেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সবুজের গালিচায় মোড়ানো পাহাড়, রয়েছে জেলে পরিবারের জীবনচিত্র। হাত বাড়ালেই মিলবে হরেক পদের সদ্য ধরে আনা সামুদ্রীক মাছ। পুরো একটা বিকেল ঝড়ের দিনে মামার বাড়ি- আম কুড়াতে সুখ থুক্কু পড়ন্ত বিকেলে সাগর পাড়ে-শামুক-ঝিনুক কুড়াতে সুখ। পশ্চিমা অথৈ জলে সূর্য লুকানোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও উত্তরে ফেরার পথ ধরি। যোগাযোগ : ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের গাড়িতে কক্সবাজার কলাতলী। সেখান থেকে সিএনজি/মাইক্রোতে ওখিয়ার পাটুয়ার টেক। ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস রয়েছে। ভাড়া জনপ্রতি ৯০০ টাকা হতে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। প্রচুর হোটেল/মোটেল/কটেজ রয়েছে কক্সবাজার। ভাড়া রুম প্রতি ১২০০ টাকা হতে ৩২০০০ টাকা পর্যন্ত। আরও বেশি জানতে নেটে সার্চ দিন, পেয়ে যাবেন আপনার সাধ্যের মধ্যে থাকার জন্য হোটেল-মোটেলের ঠিকানা। তথ্য : প্রথম দিন কক্সবাজার রাত্রি থেকে পরেরদিন খুব ভোরে রওনা হলে যাবার পথে দরিয়ানগর ও ইনানী বীচে ঘুরে পাটুয়ার টেকের সৌন্দর্য মন ভরে উপভোগ করা যাবে, ভ্রমণ সূচীতে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পাটুয়ার টেক বীচে ঘোরার উপযুক্ত সময় হলো ভাটা। খরচপাতি তিন দিনের ভ্রমণে জন প্রতি চার হাজার টাকা হলেই যথেষ্ট। সতর্কতা : সঙ্গে ব্যাগ রাখুন, যে কোন খাবারের মোড়ক-বর্জ্য, সেই ব্যাগে ভরে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন।
×