ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাবা, তোমার জন্য ভালবাসা সারাটি জীবন

প্রকাশিত: ১২:০১, ১৪ জুন ২০১৯

 বাবা, তোমার জন্য ভালবাসা  সারাটি জীবন

এক সময় সামাজিক অটুট বন্ধনে যৌথ পরিবার ছিল নিউক্লিয়াসের মতো। সভ্যতার বিকাশে ক্রমেই যৌথ পরিবারগুলো ভেঙ্গে খন্ড খন্ড হয়ে একক পরিবারে রূপান্তরিত হচ্ছে। এখন যে একক পরিবারের প্রাধান্য সেই পরিবারের সদস্যরা জীবনের সঠিক মূল্যবোধ সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছে না। এখনকার নাগরিক জীবনে ব্যস্ততা যান্ত্রিকতা গ্রাস করেছে সবাইকে। আজকাল বাবা মা’রা তাদের সন্তানদের যথাযথভাবে সময় দিতে পারছেন না। পেশাগত নানা ব্যস্ততায় অস্থির সময় কাটছে সবার। সন্তান তার বাবা-মাকে কাছে পাচ্ছে খুব কম। আমরা যারা এখন বাবা কিংবা মা, একবার ভেবে দেখুন, আমরা আমাদের সন্তানদের কতটা দেখভাল করতে পারছি আগের দিনের বাবা মায়েদের তুলনায়। আমাদের বাবা মায়েরাও কম ব্যস্ত মানুষ ছিলেন না। তাঁরা কর্মজীবনের অনেক অনেক ব্যস্ততা, ঘর গৃহস্থালি কাজের নিত্য ঝামেলার পরেও আমাদের খাওয়া দাওয়া, লেখাপড়া, জীবন গঠন, সঠিকভাবে যোগ্যভাবে মানুষ হয়ে ওঠা ইত্যাদি বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনোযোগ রেখেছেন, যেখানে যা করা দরকার তাই করেছেন। যেমনভাবে শাসন করেছেন তেমনিভাবে আদর স্নেহও করেছেন। আমাদের চাহিদা, সাধ আহ্লাদ পূরণের ক্ষেত্রে তাদের বিন্দুমাত্র অবহেলা কিংবা অমনোযোগ ছিল না। আজকের দিনে বাবা-মা’রা তাদের সন্তানদের সঠিকভাবে সময় দিচ্ছে না বলে সময়ের ধারাবাহিকতায় পারিবারিক অপশাসনে সন্তান হচ্ছে বিপথগামী, সন্ত্রাসী, মাদকাসক্ত, উচ্ছৃঙ্খল, ভয়ঙ্কর অপরাধ। অসৎ সঙ্গে তাদের জীবন হচ্ছে পংকিলতায় পরিপূর্ণ। সন্তান ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছে। বাবা মাকে এ জন্য শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরতে হবে। সন্তানের প্রতি বাবা হিসেবে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। যার ঔরসে সন্তানের পৃথিবীতে আগমন সেই বাবা সন্তানের জন্য যেন এক নিবিড় ছায়া। যার কাজ দুঃখ কষ্ট থেকে দূরে সরিয়ে রেখে সন্তানকে ভালবাসার আর্দ্রতা উপহার দেয়া। রক্তের বাঁধনে বাধা চমৎকার সম্পর্ক বাবা ও সন্তানের। সন্তান ও বাবার সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে শ্রদ্ধা। বাবা দিবসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসগুলো সেজেছে নানান মোটিফে। যেমন টিশার্ট ও পলো টিশার্টে শোভা পাচ্ছে বাবার প্রতি ভালবাসা নিয়ে বিভিন্ন বাণী ও স্লোগান। তেমনি বেশ কিছু শোপিসেও এ ধরনের স্লোগান দেখা যাচ্ছে। আধুনিক জীবন যাপনে বাবা ও সন্তানের সম্পর্কের সমীকরণ অনেকটা ওলটপালট হয়ে গেছে। এখন বাবার কাছে আপন সন্তানকে অনেক সময় বড্ড অচেনা মনে হয় আজকাল বাবা ও ছেলের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক অবনতি ঘটেছে। কমিউনিকেশন গ্যাপটা দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে। ব্যক্তিত্বের সংঘাত পারিবারিক জীবনে অস্বস্তি, বিশৃঙ্খলা, অবিশ্বাস, দুঃখ যন্ত্রণা বাড়িয়ে তুলছে কেবলই। সন্তানের কোনভাবেই ভুলে যাওয়া উচিত নয়, তাকে বড় করে তুলতে যোগ্য মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হতে এবং পথ চলতে বাবা তার জন্য কত ত্যাগ করেছেন, জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আনন্দ বিসর্জন দিয়েছেন। এ জন্য বাবাকে কতটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। আবার অন্যদিকে সন্তানেরও উপলব্ধি করা উচিত বাবা বিনিময়ে কিছু পাবার উদ্দেশ্যে তার জন্য এত কিছু করেননি। পিতারও বোঝা উচিত সন্তাকে যুগের দাবি মেটাতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে একটি মেয়ের জীবনে প্রথম পুরুষই হচ্ছে তার বাবা। বাবার সঙ্গেই তার যত খুনসুটি। বাবার কাছে যত চাওয়া পাওয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিস্টার রাইট হচ্ছে তার বাবা। এত বড় জগৎ সংসারে একটি শিশুর জন্য বাবা হলেন সবচেয়ে বড় শক্তি। পরিবারে একটি শিশু তার নিষ্পাপ চোখে বাবাকে দেখে পরিবারের সবচেয়ে ক্ষমতাধর, জ্ঞানী, স্নেহশীল ও পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে। শিশুদের কাছে বাবাই হন আদর্শ মানুষ ও অনেক শক্তি আর অনুপ্রেরণার উৎস। আমরা যদি প্রত্যেকে নিজের জীবনটাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে চেষ্টা করি তাহলে বাবা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে চোখের সামনে, মনের পর্দায় ছায়া ফেলেন। বাবা যে বাবাই। তার সঙ্গে অন্য কারো তুলনা চলে না। যার কারণে এই পৃথিবীর রঙ, রূপ, সৌন্দর্য দেখার সুযোগ লাভ করেছি সবাই সেই বাবা নামটির সঙ্গে যে অপার স্নেহ আর মমতার অদ্ভুত এক মিশেলে আর দৃঢ় বন্ধনে আমরা জড়িয়ে থাকি। একজন ছেলে কিংবা মেয়ের জীবনে সবচেয়ে প্রিয় এবং সর্বাধিকবার উচ্চারিত শব্দগুলোর মধ্যে ‘বাবা’ই অন্যতম। একজন শিশু পৃথিবীতে আসার পর আধো আধো বোলে যখন কথা বলতে শুরু করে তখন তার মুখ থেকে ‘বাবা’ এবং ‘মা’ শব্দ দুটি প্রথম উচ্চারিত হয়। বাবা যেন সন্তানের কাছে এক মহীরুহ। সন্তানের মুখে ‘বাবা’ ডাক শুনে যে কোন বাবাই পুলকিত হন। বাবার জন্য সন্তানের ভালবাসা প্রকাশের জন্য বিশেষ কোন দিনের প্রয়োজন নেই। সীমাবদ্ধ বলয়ে বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসাকে আবদ্ধ করা সম্ভব নয়। বাবার প্রতি সন্তানের ভালবাসার অবিরাম ধারা বয়ে চলে বছরের প্রতিটি দিন। জীবনের ঘানি টানতে টানতে বাবা এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন, বয়সের ভারে ন্যুব্জ হন, বার্ধক্য তাকে গ্রাস করে। তখন তিনি হয়ে পড়েন অনেকটা অসহায়, দুর্বল। রোগ ব্যাধি তাঁকে আরও বিপর্যস্ত করে তোলে। এ সময় বাবা চান সন্তান যেন তার পাশে থাকে সব সময় যেমন তিনি ছিলেন সন্তানের পাশে তার সব প্রয়োজনে পাশে, যখন সন্তান ছিল শিশু অবস্থা। সন্তানের কাছ থেকে অবহেলা কিংবা দুর্ব্যবহার পেলে বাবার হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। প্রতিবছর জুনের তৃতীয় রবিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাবা দিবস পালিত হয়। আমাদের দেশেও আজকাল বেশ ঘটা করেই বাবা দিবস পালিত হয়ে থাকে। বাবার প্রতি সন্তানের ভালবাসা প্রকাশের জন্য দিনটি বিশেষভাবে উৎসর্গ করা হয়ে থাকে। যদিও বাবার প্রতি সন্তানের ভালবাসা প্রকাশের জন্য দিনটি বিশেষভাবে উদযাপনের প্রয়োজন হয় না। তারপরেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে এখন বাবা দিবস পালন করা হয়। তাই বলে এ ধরনের দিবসগুলো যে একেবারেই অপ্রয়োজনীয় তা কিন্তু বলা যাবে না। সন্তানের জন্য বাবার ভালবাসা সীমাহীন। নিজের সন্তানের জন্য মোগল সম্রাট বাবরের ভালবাসার উদাহরণ ইতিহাস হয়ে আছে। সম্রাট বাবর নিজের সন্তান হুমায়ুনের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন। এমন স্বার্থহীন যার ভালবাসা সেই বাবাকে সন্তানের খুশির জন্য জীবনের অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়। বাবা দিবসের প্রাক্কালে সন্তানের সামনে সুযোগ আসে বাবাকে অন্তরের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা জানানোর। আমাদের সবার উচিত বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া। তারা বৃদ্ধ বয়সে যাতে কোনভাবে অবহেলার শিকার না হন সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। অনেক সন্তান রয়েছে, যারা মা বাবার দেখাশোনার প্রতি খুব একটা মনোযোগী নয়। মা দিবস বা বাবা দিবস তাদের চোখের সামনের পর্দাটি খুলে ফেলে বাবা মায়ের প্রতি তার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে বলতে পারিবারিক বন্ধনকে আরও অনেক সুদৃঢ় করতে বাবা দিবসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের পারিবারিক জীবনে এবং সমাজে বাবার যে গুরুত্ব তা আলাদাভাবে তুলে ধরতেই বাবা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। গ্রীক কবি হোমারের একটি কথা এ ক্ষেত্রে স্মরণ করতে হয়। তিনি বলেছিলেন- সেই জ্ঞানী বাবা যে তার সন্তানকে জানেন। যাদের বাবা রয়েছেন কাছে কিংবা দূরে তাদেরকে বাবা দিবসের প্রাক্কালে বিশেষভাবে সম্মান জানানো হলে তারা নিশ্চয়ই খুশি হবেন। আর যাদের বাবা নেই, এর মধ্যেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন, তাঁদের স্মরণ করুন শ্রদ্ধাভরে, তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করে সৃষ্টিকর্তার কাছে বিশেষভাবে প্রার্থনা করুন। এ কথা সবাইকে অবশ্যই মানতে হবে, মানবজীবনে বাবার অবদান এবং গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এবারের বাবা দিবসে নিজেদের বাবাকে পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করি, সব কিছুর উর্ধে তাঁকে স্থান দিই। আমাদের আচরণ যেন কোনভাবেই তাঁর মনে আঘাত করতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে সবাইকে। কৃতজ্ঞতা : নিত্য উপহার মডেল : রায়হান ও রুহি
×