ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় বাল্যবিয়ে ॥ প্রান দিতে হলো কুলসুমকে

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১৪ জুন ২০১৯

নওগাঁয় বাল্যবিয়ে ॥ প্রান দিতে হলো কুলসুমকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ নওগাঁর সাপাহারে বাল্যবিয়ের কুপ্রভাবে অকালে প্রান হারালো কুলসুম। বাল্য বিয়ের গ্লানী নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো তাকে। ঘটনাটি এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী ইউনিয়নের পাতাড়ী গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও রেহেনা খাতুনের মেয়ে কুলসুম। শিশুকাল থেকে সে স্থানীয় বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে আসছিল এবং এলাকায় অবস্থিত বে-সরকারী সংস্থা বিডিও, বিএসডিওর শিশু বিকাশ কেন্দ্রের স্পন্সর শিশু সদস্যও ছিল কুলসুম। যে সময় শিশুটি ৫ম শ্রেণীতে লেখা পড়ায় মগ্ন ঠিক সে সময় সুন্দরী ও সুশ্রী হওয়ার কারণে দরিদ্র পরিবারের ওই শিশুটির ওপর নজর পড়ে পার্শ্ববর্তী তিলনী গ্রামের উকিল মন্ডলের ছেলে আব্দুল করিমের (২৫)। সে ঢাকায় চাকুরি করার সুবাদে বিয়ের প্রস্তাব দেয় কুলসুমের মা’বাবার কাছে। শিক্ষিত ও চাকুরিজীবী জামাই কুলসুমের মা’বাবাও রাজি হয়ে যায় এ বিয়েতে। দরিদ্র বাবা রফিকুল কারো কোন কথার তোয়াক্কা না করে বিয়ের পর মেয়ের পিরিয়ড চালু না হওয়া পর্যন্ত মেয়ে তার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করবে শর্তে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কুলসুমের বিয়ে দেয়া হয় বিগত ২০১৭ সালের ১জানুয়ারিতে। শর্ত মোতাবেক বিয়ের পর কুলসুম থেকে যায় তার বাবার বাড়িতে। কিন্তু শিক্ষিত চাকুরিজীবী জামায় আব্দুল করিম বিয়ের পর কিছুতেই তার স্ত্রীকে ছেড়ে থাকতে পারবেনা বলে কুলসুমকে তার চাকুরিস্থল ঢাকায় নিয়ে যেতে উঠে পড়ে লাগে। জামাইয়ের জেদ ও ইচ্ছা মেটাতে বাবা রফিকুল পাঠিয়ে দেয় তার মেয়ে কুলসুমকে তার স্বামীর কাছে। অবশেষে বৃহস্পতিবার কুলসুম পেটের ব্যথায় কাতর হয়ে পড়লে এক সময় তার পেট থেকে ৭মাসের গর্ভপাত ঘটে এবং তার গোপনাঙ্গ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এরপর বিকেলে কুলসুম তার জ্ঞান হারিয়ে ফেললে অবস্থা বে-গতিক দেখে শশুর বাড়ির লোকজন কুলসুমকে সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সএ নেয়ার পথেই তার মৃত্যু ঘটে। খবর দেয়া হয় কুলসুমের মা’বাবাকে। মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে মা’বাবা কাঁদতে কাঁদতে ছুটে চলে আসেন মেয়ের বাড়িতে। কুলসুমের এই অকাল মৃত্যুতে এলাকার সকলেই মর্মাহত হয়ে পড়েন এবং বাল্য বিয়েই এইমৃত্যুর জন্য দায়ী বলে মন্তব্য করেন।
×