ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গরমের স্বস্তি শরবত

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ১৫ জুন ২০১৯

 গরমের স্বস্তি শরবত

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল গেট এলাকায় যাত্রী নামিয়ে হাঁপাচ্ছেন রিক্সাচালক মানিক। পিঠের সঙ্গে লেপ্টে থাকা সাদা শার্টে ঢেউ খেলছে ঘাম। এক পাশে রিক্সা রেখে এগিয়ে গেলেন শরবতের দোকানের দিকে। নিমিষের মধ্যে খালি করে দিলেন এক গ্লাস লেবুর শরবত। ফেললেন স্বস্তির নিশ্বাস। শুধু রিক্সাচালক মানিক নন, শরবতের দোকানের চারপাশে ভিড় করে আছেন হাসপাতালের রোগীর স্বজনরা, ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি, পথচারীসহ তৃষ্ণার্ত অনেকে। এ চিত্র প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে যশোর শহরের বিভিন্ন গলি, রাস্তার মোড়ে। অসহনীয় গরমে একটু শান্তির ছোঁয়া পেতে গত দেড় মাসের বেশির ভাগ সময় যশোরবাসী এভাবেই ভিড় জমাচ্ছেন সড়কের বিভিন্ন মোড়ের ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে। তীব্র দাবদাহের কারণে এখন চলছে জমজমাট শীতল শরবতের ব্যবসা। শহরের দড়াটানা মোড়, হাসপাতাল গেট, নিউ মার্কেট, ঈদগাহ মোড়, কালেক্টরেট পার্ক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে, চাঁচড়া মোড়, মনিহার সিনেমা হলের সামনে, শহরের স্কুল-কলেজ গেটের সামনেসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায় ভ্রাম্যমাণ ভ্যানের ওপর সাজিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ ও উপকরণের বরফ মেশানো শরবত। রকম ভেদে প্রতি গ্লাস শরবত ৫, ১০, ১৫ ও স্পেশাল ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। শরবতের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, শরীর ঠান্ডা রাখার নানা উপকরণ মিশিয়ে শরবতে ভিন্ন স্বাদ আনার চেষ্টা করছেন দোকানিরা। যেমন বেল, ইসবগুলের ভুসি, হরীতকীর রস, ঘৃতকুমারী পাতার রস ও গুড় একসঙ্গে মিশিয়ে নানা স্বাদে তৈরি হচ্ছে শরবত। কালেক্টরেটের সামনের এলাকার আমিরুল হোসেন তোকমার শরবতে মেশাচ্ছেন ইসবগুলের ভুসি, তালমাখনা ও গুড়। সঙ্গে ঠা-াপানি তো আছেই। ঈদগাহ মোড়ের ভ্যানে ফিল্টার ভর্তি ইসবগুলের ভুসি, হরীতকীর রস, ঘৃতকুমারী পাতার রস ও ইসবগুলের ভুসি মেশানো ঠা-া পানি রাখা হয়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা মতো বিভিন্ন স্বাদে এনে শরবত বিক্রি করছেন নারী বিক্রেতা আলেয়া বেগম। আলেয়ার ভাষায়, বরফ ঠান্ডা বিশুদ্ধ পানিতে টেস্টি স্যালাইন, লেবু ও লবণ মিশিয়ে তৃষ্ণার্ত মানুষকে স্বাস্থ্যসম্মত শরবত পান করাচ্ছেন তিনি। তাদের দোকানের সামনে রীতিমতো ভিড় লেগে গেছে। খালেক নামে এক পথচারী আলেয়ার তৈরি শরবতের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললেন, যশোরে এসেছি এক উকিলের সঙ্গে দেখা করতে। গরমে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এখানে লেবুর শরবতে একটু স্বস্তি পেলাম। হাসপাতাল মোড়ে শরবত বিক্রেতা মফিজ পেশায় রিক্সা চালক। গরম সহ্য করতে পারেন না বলে বছরের এ সময়টাতে শরবত বিক্রি করেন। ফিল্টার মেশিন তাদের আগেই কেনা ছিল। শুধু শরবত বানানোর উপকরণ কিনতে তাদের বিনিয়োগ করতে হয়েছে হাজার তিনেক টাকা। প্রতিদিন শরবত বিক্রি করে তার আয় করেন এক থেকে দেড় হাজার টাকা। শহরের অন্যান্য এলাকার ভ্রাম্যমাণ শরবত ব্যবসায়ীর আয়ও প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শ’ থেকে হাজার টাকা। এদিকে গরমে ক্ষণিকের স্বস্তি মিললেও সড়কের খোলা পরিবেশে তৈরি শরবতের প্রায় সিংহভাগই স্বাস্থ্যসম্মত নয় বলে দাবি করছেন চিকিৎসকরা। বেসরকারী চাকরিজীবী খাইরুল আলম অভিযোগ করেন, ক্ষণিকের জন্য এই শরবতগুলো আরাম ও স্বস্তিদায়ক হয়। কিন্তু শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত বরফের সিংহভাগই বরফকল থেকে আনা মাছ সংরক্ষণের জন্য তৈরি বরফ। তবে শরবত বিক্রেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, আইসক্রিম তৈরিতে ব্যবহার বরফই তারা শরবত তৈরিতে ব্যবহার করেন। -সাজেদ রহমান, যশোর থেকে
×