ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি ফল সাম্মান চাষে সাফল্য

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ১৫ জুন ২০১৯

 সৌদি ফল সাম্মান চাষে সাফল্য

ফলের নাম সাম্মান। এসেছে সৌদি আরব থেকে। এনেছেন চাষী মনিরুল ইসলাম। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার অজপাড়াগাঁয়ে। তিনি একজন কৃষি শ্রমিক। সেই সুবাদে তার সৌদি আরব যাওয়া। সেখানে সৌদি বাদশার এক আপনজনের কৃষি খামারে কাজ পেয়েছিলেন। সেখানেই তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এই খামারে সাম্মানের আবাদ হয়েছে। সাম্মান দেখতে অনেকটা বাঙ্গির মতোই। তবে আছে কিছু কিছু পার্থক্য। বাঙ্গির মতো গায়ে শির নেই। গায়ের রং এবং গন্ধ আকার অনেকটা আলাদা। স্বাদেও আছে কিছু পার্থক্য। বাঙ্গি রবি মৌসুমের ফল, পাকতে শুরু করে চৈত্র মাসে। তবে সৌদি এই ফল বছরে দুইবার হয়ে থাকে। শেষ বার চৈত্র মাসে বপন করলেও ফল আসে বা ধরে এবং পাকে জ্যৈষ্ঠ মাসে। অর্থাৎ মধু মাসে এর আগমন। তাই এবার দ্বিতীয় বারের ফলন রোজা ধরতে পেরেছে। দামও পেয়েছে হেভি। ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। প্রতিটির ওজন প্রায় তিন কেজির কাছাকাছি। সাম্মান ফল দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলুদ মসৃণ আবৃত চামড়া ভেতরের অংশ একদম দেখতে আমাদের দেশের বাঙ্গির মতো। অন্যটির চামড়ার অংশ খস খসে এবং চামড়ার ভেতরের অংশ হালকা হলুদ এবং বাদামি বর্ণের। খেতে একটু মিষ্টি ভাব রয়েছে। তবে পুরো অংশ থাকে বেশ শক্ত। পাকলেও শক্ত থাকার কারণে কাঁটা চামচ ব্যবহার করতে হয়। আরব দেশে এ ফলের উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে। রোপণের ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে পেকে যায়। তবে কৃষি গবেষণা বিভাগ অধিক মূল্যায়ন ও উন্নয়নের জন্য শুরু করেছে গবেষণা। প্রবাসী মনিরুল সৌদি আরবে কাজ করতে করতেই তার ধারণা হয় এই ফল দেশে চাষ করতে পারলে ভাল লাভ আসবে। তাছাড়া সৌদির মরুভূমিতে এর আবাদ যেহেতু বেশি সেহেতু বাংলাদেশেও এর চাষ করা সম্ভব। তাছাড়া এই ফল আবাদ করতে তেমন একটা সেচের প্রয়োজন বা সারের দরকার হয় না। তাই প্রবাসী মনিরুল বীজ সংরক্ষণ করা শুরু করে। কাজটি শুরু করে খুবই গোপনীয়ভাবে। ফলে বীজ আনতে সক্ষম হন। কিন্তু তার তো জমিজমা নেই। চাষ করবে কোথায়? তাই মনিরুল দেশে বীজ আনার পর চাঁপাই সদরের জামতলার মনামিনা কৃষি খামারের স্বত্বাধিকার মতিউর রহমানের দ্বারস্থ হন। বিদেশ ফেরত চাষী মনিরুল ইসলামের বিদেশী ফল সাম্মানের চাষের জন্য তিন বিঘা জমি দান করেন। মনিরুল ইসলাম প্রথমবার ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয়বার সফল হন। বাণিজ্যিকভাবে মনিরুল সাম্মান চাষ শুরু করেন। মনিরুল জানান, তিনি মাস আগে এ ফলের বীজ রোপণ করি। জমিতে যা যা করণীয় ফল ও গাছের পরিচর্যা করেছি। আমি খুব আশাবাদী। ফল পাকতে শুরু করে। মে মাসের আধাআধি সময়ে ফল পাড়া শুরু হয়ে আজও চলছে। সৌদি আরবে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খেতেও বেশ সুস্বাদু। সেখান থেকেই মনিরুল প্রেরণা নিয়ে দেশে এসে এর চাষ শুরু করেন। জামতলার মনামিনা কৃষি খামারের মালিক মতিউর রহমান জানান, মনিরুলের চাষকৃত বিদেশী ফল সাম্মান বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তে এর চাষ করা সম্ভব। তবে বরেন্দ্রের আবহাওয়া ও খরা এই ফল চাষে বেশি প্রেরণা জোগাবে। বাংলাদেশের মাটিতে এ ফল উৎপাদন যেহেতু সম্ভব সেহেতু কৃষি সম্প্রসারণ গবেষণা করলে এর উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে যাবে। এ বিষয়ে হর্টিকালচার সেন্টার চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক ড. মোঃ সাইফুর রহমান জানান, বিদেশী ফল সাম্মান দেশীয় ফল বাঙ্গির মতো। এটা চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটিতে ফলন হওয়া বিরাট অর্জন। সঠিক নিয়ম মেনে সাম্মান চাষ করা যায় তবে অবশ্যই এর সুফল পাওয়া যাবে। তিনি আরও জানান, যে কোন বিদেশী ফলের দাম অনেক বেশি। যদি বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন করা যায় অবশ্যই কৃষক লাভবান হবে। তবে তিনি জানান, তার ফার্মে আগামী বছর ব্যাপক চাহিদার কথা চিন্তা করে সাম্মান ফল আবাদ করা শুরু করবেন। যেহেতু এই ফল সৌদি আরবের। তবে এই দেশে এর আবাদ ভাল হলে হয়তবা সৌদি আরব এগিয়ে আসবে সব ধরনের পরিচর্যায়। তাছাড়া এদেশে বাঙ্গির চাহিদা প্রচুর। -ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে
×