ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১০ বছর বিনা বেতনে বন পাহারা দিচ্ছেন ওরা ২৪ জন

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ১৫ জুন ২০১৯

 ১০ বছর বিনা বেতনে বন পাহারা দিচ্ছেন ওরা ২৪ জন

নওগাঁর ধামইরহাটে সংরক্ষিত শালবন বেষ্টিত আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান এলাকায় দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে বিনা বেতনে শালবন ও জাতীয় উদ্যান পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন এলাকার ১২ গ্রামের ২৪ জন দরিদ্র পরিবারের মানুষ। জানা গেছে, বিগত ২০০৯ সালে আরণ্যক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বেসরকারী সংস্থা ‘পদক্ষেপ’ ১২টি সমিতির ৬ নারীসহ ২৪ জনকে শালবন ও আলতাদীঘি দেখাশোনার জন্য সম্পৃক্ত করে। ২০১২ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে এনজিও ‘পদক্ষেপ’ তাদের কার্যক্রম স্থগিত করে। ইতোমধ্যে ২০১১ সালে আলতাদীঘিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে। পদক্ষেপ এনজিও তাদের কার্যক্রম স্থগিত করার পরও এলাকার স্বার্থে এ ২৪ জন অদ্যাবধি বনের দেখাশোনা, আলতাদীঘির মাছ রাতে পাহারা দেয়া, শালবন দেখাশোনা, জাতীয় উদ্যানে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা কাজে সহযোগিতা করে আসছিলেন। বন পাহারায় নিয়োজিত কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপ (সিপিজি) বা কমিউনিটি বন পাহারা দলের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সাইদুল ইসলাম ও সম্পাদক ফিরোজ বাবু জানান, আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান ঘোষিত হওয়ার পরে ২০১২ সালে কক্সবাজারে বন পাহারায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ‘এক্সপোজার ভিজিট’ কার্যক্রমে ৭ দিনের শিক্ষামূলক প্রদশর্নীতে অংশগ্রহণ করি। আমাদের ২০১০ সালে ধামইরহাটে আকস্মিক সফরে আসা তৎকালীন প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ আলী, রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা যথাক্রমে আবুল বাশার মিয়া ও অজিত কুমার রুদ্র উদ্যান এলাকায় কর্ম সংস্থানের আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু আমরা আজ পর্যন্ত কোন বেতন-ভাতা পাইনি। স্থায়ীকরণ হবে এই আশায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ আলতাদীঘিসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) সভাপতি মুশফিকুর রহমান জানান, জাতীয় উদ্যান ও শালবন এলাকার জয়জয়পুর, মইশড়, মোল্লাপাড়া, আলতাদীঘি, দাদনপুর, খয়েরবাড়ী, অমরপুর, বাখরপুর, শেখায়পুর উত্তর চকযদু (খড়ডাঙ্গা)সহ প্রায় ১২টি গ্রামের ‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার’ নামক ১২টি সমিতির প্রত্যেকটিতে দু’জন করে মোট ২৪ জনের সমন্বয়ে পিপলস ফোরাম ও বনবিভাগের সমন্বয়ে বন পাহারাদল তৈরি করা হয়। এবং তারা অদ্যাবধি বিনা পারিশ্রমিকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এখানে উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে আগত আরণ্যক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বেসরকারী সংস্থা ‘পদক্ষেপ’ ১২টি সমিতিতে প্রায় ১২ লক্ষাধিক টাকা এককালীন (রিভলবিং ফান্ড) প্রদান করেছে। এছাড়া আরও কোন উন্নয়ন তাদের জন্য কেউই করেনি। উপজেলা বনবিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উপরোক্ত ২৪ জনকে তাদের সমিতির মাধ্যমে এনজিও পদক্ষেপ বন পাহারার কাজে সম্পৃক্ত করেছে এবং পদক্ষেপ এনজিও কিছু অর্থ পাহারা কাজের নিয়োজিত সিপিজি’র সমিতিতে দিয়েছে। তাদের নিয়মিত পারিশ্রমিক প্রদানের ক্ষেত্রে বনবিভাগের সঙ্গে কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহমেদ নিয়ামুর রহমান জানান, ১০ বছর ধরে কারা জাতীয় উদ্যান ও শালবন দেখার দায়িত্বে আছে, কিভাবে আছে, কে তাদের নিয়োগ দিয়েছে, তা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×