ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অপরাধ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ঢাকায় বসবাসরত নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ চলছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১৫ জুন ২০১৯

অপরাধ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ঢাকায় বসবাসরত নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ চলছে

অনলাইন ডেস্ক ॥ আজ শনিবার সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছে, ঢাকায় বসবাসরত নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর ৬২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৭ জনের তথ্য সংগ্রহ করে সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিআইএমএস) সংরক্ষণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এদের মধ্যে দুই লাখ ৪১ হাজার ৫০৭ জন বাড়িওয়ালা, ১৮ লাখ ২০ হাজার ৯৪ জন ভাড়াটিয়া, পরিবারের সদস্য ৩১ লাখ ৬৬ হাজার ৮২১ জন, মেস সদস্য এক লাখ ২১ হাজার ৪০ জন, চালক ও গৃহকর্মী ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮৪ জন রয়েছেন। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ঢাকায় বসবাসরত নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি আরো জোরদার করতে ১৫ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ পালন করছে ডিএমপি। এরমধ্যে ঢাকায় ৫০টি থানাকে ৩০২টি বিটে ভাগ করে নাগরিকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুলিশ তথ্য সংগ্রহ করবে। এরপর ২১ জুন থেকে ডিএমপি সদর দফতর থেকে আটটি টিম আট বিভাগে ভাগ হয়ে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ক্রস চেক করবে। কোথাও কোনো ত্রুটি পেলে তারা সংশ্লিষ্ট বিট পুলিশকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসবে। গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করে সিআইএমএস সফওয়্যারে সংরক্ষণ শুরু করে ডিএমপি। অনুষ্ঠানের শুরুতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সিআইএমএস সফওয়্যারের কিছু সফলতার চিত্র তুলে ধরেন। এসময় তিনি বলেন, হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর আমরা নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করি। যারা পরিচয় গোপন করে ঢাকায় বাড়ি ভাড়া নিতে চান তারা এখন ভাড়া নিতে পারছেন না। এছাড়া এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভিকটিম, অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। কারণ সংরক্ষিত তথ্যে একজন ব্যক্তির জন্য আলাদা ইনডেক্স রয়েছে। ফলে একজন ব্যক্তি এলাকা পরিবর্তন করলেও আমরা তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, উন্নত বিশ্বের আদলে ডিএমপি প্রথমে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে। এখন অন্যান্য জায়গায়ও তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। কঠোর গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার মাধ্যমে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গত তিন বছরে কোনো নাগরিকের তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর অপরাধের মাত্রা কমে এসেছে। এছাড়া কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তার উদঘাটনের হার ৯০ শতাংশের উপর বেড়েছে। আগে ৫০ শতাংশের বেশি রহস্যের উদঘাটন করা যেত না। আমরা সম্প্রতি লক্ষ্য করেছি, ভাড়াটিয়া, বাড়িওয়ালা এবং পুলিশ তথ্য দেওয়া বা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছেন। বসিলায় জঙ্গী আস্তানায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) চালানো অভিযানের পর খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ভাড়াটিয়া বা মালিক থানায় তথ্য দেননি। এ রকম আরো অনেক থাকতে পারে। এজন্য তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। পুলিশের কাছে তথ্য থাকলে চুরি, ছিনতাই, সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র, সন্ত্রাসী বা জঙ্গী হামলার মতো বিষয় প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য পুলিশকে তথ্য দিতে নাগরিকদের আহ্বান জানান ডিএমপি কমিশনার। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাজধানীতে আমরা হাজার হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছি। এর মাধ্যমে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অপরাধের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের সাহায্যেই আমরা মালিবাগে পুলিশের গাড়িতে ককটেল হামলার ঘটনার রহস্য উদঘাটনের কাছাকাছি চলে এসেছি। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর উত্তরা-১৪ নম্বর সেক্টরে উবার চালক মো. আরমান (৪২) হত্যার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উত্তরায় উবার চালক খুন হয়েছেন, এটি আমাদের মাথায় আছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওই এলাকায় ব্যাপকভাবে সিসিটিভি ক্যামেরা ইন্সটল করা রয়েছে। এরমধ্যে মহাখালী থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত এক হাজারের মতো উচ্চক্ষমতা সম্পূর্ণ নাইটভিশন সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। প্রযুক্তি ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ব্যবহার করে দ্রুতই উবার চালকের হত্যার রহস্য উদঘাটন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
×