ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জনবান্ধব হলেও আয়-ব্যয়ের মধ্যে বিশাল ফারাক : জাপা

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১৫ জুন ২০১৯

জনবান্ধব হলেও আয়-ব্যয়ের মধ্যে বিশাল ফারাক : জাপা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, ২০১৯-’২০ সালের প্রস্তাবিত বাজেট জনবান্ধব হয়েছে। তবে সংশোধনীতে হত দরিদ্র, তরুন ও বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বরাদ্দ যেন কাটছাট না হয়। তিনি বলেন, শেয়ার বাজারে শৃংখলা আনতে বিদ্যমান আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সেবায় বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং কৃষিতে প্রণোদনা এবং ভর্তুকি আরো বাড়াতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি। শনিবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে ২০১৯-’২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। এসময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি বলেন, প্রবাসীদের প্রণোদনা দেয়ায় রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পারে। কৃষকদের লাভবান করতে উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে এলে হত দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তিনি বাজেটকে ব্যবসা বান্ধব করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। কর্মসংস্থান এবং দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিতে ড্রাইভিং শিখাতে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতেও সরকারের প্রতি আহবান জানান জাতীয় পার্টির মাহসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি। এসময় উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, এ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, একরাম হোসেন মিয়া, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য- আশরাফ উদ দৌলা, এ্যাড. নুরুল আজহার, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, মোঃ জহিরুল ইসলাম জহির, জহিরুল আলম রুবেল, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, শফিকুল ইসলাম শফিক, গোলাম মোঃ রাজু, শফিকুল ইসলাম মধু, হাসিবুল ইসলাম জয়, মনিরুল ইসলাম মিলন, আমির উদ্দিন আহমেদ ঢালু প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি বিশ্বাস করে গণমানুষের জন্যই বাজেট প্রণয়ন করা হয়। ২০১৯-২০২০ সালের প্রস্তাবিত ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট এ যাবত কালের সর্ববৃহত বাজেট। আকৃতি বেশ বড়। বড় অংকের অর্থ রাজস্ব খাতে আয় করতে হবে। আবার নির্ধারিত খাতে বড় ধরনের ব্যয়ও করতে হবে। দুটিই বড় চ্যালেঞ্জ সরকারের জন্য। আয়ের প্রশ্নে আমরা চাই, অপেক্ষাকৃত অবস্থাপন্ন থেকে বেশী হারে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা ও স্বল্প আয়ের মানুষের ঘাড়ে কম দায় চাপানো হোক। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ কর যেমন আয়কর থেকে যতদুর সম্ভব রাজস্ব আদায় হোক ও পরোক্ষ কর (যেমন আমদানী শুল্ক ইত্যাদি) থেকে কম অংশ আয়ের ব্যবস্থা করা হোক। লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, সরকারের বাজেট প্রস্তাবে তেমনটি দেখানো হয়েছেঃ মোট রাজস্ব আয়ে (৩,২৫,৬০০ কোটি)র মধ্যে আয়কর ৩৫ ভাগ + মূল্য সংযোজন করঃ ৩৭.৮ভাগ (এটাকেও প্রত্যক্ষ করা বলা যায়) + আমদানী শুল্ক ২৭.২ ভাগ প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে সংশয় আছে। আয়কর থেকে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ও যে পদ্ধতির মাধ্যমে করা হবে বলা হয়েছে তা বর্তমান আয়কর বিভাগের অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ও লোকবল ইত্যাদির কারনে প্রায় অসম্ভব। ফলে, আয়কর থেকে মোট আদায়ের যে অংশ আশা করা যাচ্ছে তার থেকে অনেক কম আয় হবে। অশংঙ্কা আছে। একই কথা মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। প্রস্তাবিত বাজেটে, উপরে বর্ণিত আয় ও ব্যয়ের মধ্যে একটি বিশাল ফারাক আছে, যা বাজেট ঘাটতি ও যার আকার অংকে ১,৪৫,৩৮০ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে, ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহন (৪৭,৩৬৪ কোটি) + বিদেশী ঋণ ও সাহায্য (৬৩,৮৪৮ কোটি) + ব্যাংকের বাইরে (সঞ্চয় পত্র ইত্যাদি) থেকে নেয়া ঋণ (৩০,০০০ কোটি) টাকা। কাদের বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলোতে তারল্য সংকট চলছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়। কারন হিসেবে বলা হচ্ছে, সরকারের অধিক হারে ঋণ গ্রহণ। ফলে, বেসরকারী খাতে নতুন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী দরকার মত যথেষ্ট ঋণ পাচ্ছেন না। বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সমস্যা হচ্ছে। এবারকার ঘাটতি মেটাতে সরকার যখন আবার ব্যাংক ঋণের সাহায্য নিবেন তা বিরাজমান সংকটকে আরো ঘনিভূত করতে পারে। দেশের এ মুহুর্তে সবচেয়ে বড় সংকট বেকার সমস্যা। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে বাধা হোক এ ধরনের পদক্ষেপ যে কোন ভাবেই পরিহার করতে হবে বলে মনে করি। এছাড়া বিদেশী ঋণ, প্রায় সময়ই কঠিন শর্তসহ দেয়া হয়। ফলে, এ ধরনের ঋণের বোঝা বেশী ভারী হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঋণ দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারকে সর্তক হতে হবে, বলে মনে করি। তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি, এ স্লোগানকে সামনে রেখে যে উদ্যোগ সমূহ বাজেটে উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, যেমন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে সারাদেশে ১১১টি প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং উপজেলা পর্যায়ে ৪৯৮টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে; বলা হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল সমূহে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সৃষ্টি করা হবে; যুবকদের মধ্যে সকল প্রকার ব্যবসা, উদ্যোগ সৃষ্টির জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। তবে আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের দ্রুত বাস্তবায়ন আশা করি। আমরা ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ আরো বৃদ্ধি করে কমপক্ষে এ খাতে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার ও ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রদানের আহ্বান করছি।
×