ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমি চাই না বাংলাদেশিরা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাক : ডা. দেবী শেঠী

প্রকাশিত: ০৭:৪৭, ১৫ জুন ২০১৯

আমি চাই না বাংলাদেশিরা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাক :  ডা. দেবী শেঠী

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ভারতের নারায়ণা ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী প্রসাদ শেঠী বলেছেন, চিকিৎসার জন্য প্রতিবছর অনেক বাংলাদেশি পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে যাচ্ছেন। যা সবদিক থেকে ক্ষতি। কিন্তু আমি এদেশে এসেছি একটি মিশন নিয়ে, সেটি হচ্ছে বাংলাদেশে থেকে বিদেশে রোগী যাওয়া বন্ধ করা। আমি চাই না বাংলাদেশিরা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাক। শনিবার সকালে নগরের পাহাড়তলি বিশ্বমানের ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সেবা চালু উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. দেবী প্রসাদ শেঠী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমেরিকার চেয়ে এ উপমহাদেশের চিকিৎসক-নার্সরা অনেক প্রতিভাবান। তারা খুবই পরিশ্রমী। সেটি অবশ্যই ইতিবাচক। ‘এ হাসপাতালটি আমি ঘুরে দেখেছি। এটি একটি বিশ্বমানের চিকিৎসাকেন্দ্র। এখানে রয়েছে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। নিজস্ব চিকিৎসক-নার্সরা রয়েছেন। যেটি অন্যান্য হাসপাতাল থেকে আলাদা করেছে।’ ডা. দেবী শেঠী বলেন, এ হাসপাতাল বাংলাদেশে সঠিক ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবার নতুন সংযোজন। এটি প্রতিষ্ঠার ফলে বিদেশে বাংলাদেশি রোগী যাওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে কমে আসবে। ডা. দেবী শেঠীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে চট্টগ্রাম ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ। ইতোমধ্যে বিভাগটির নামকরণ করা হয়েছে ইম্পেরিয়াল-নারায়ণা কার্ডিয়াক সেন্টার। ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. রবিউল হোসেন বলেন, ইম্পেরিয়াল-নারায়ণা কার্ডিয়াক সেন্টারটি ডা. দেবী প্রসাদ শেঠীর তত্ত্বাবধানে পরিচালনা হবে। ভারতের নারায়ণা ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সের চিকিৎসক-নার্সরা এখানে সেবা দেবেন। পুরো সেন্টারটি তারা নিয়ন্ত্রণ করবে। ইতোমধ্যে সব ধরনের যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাত একর জায়গার ওপর এ হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে রয়েছে নার্সেস এবং টেকনিশিয়ান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। উন্নতমানের সার্বক্ষণিক জরুরি সেবা এবং ১৪টি মডিউলার অপারেশান থিয়েটার। রয়েছে ১৬টি নার্স স্টেশন ও ৬২টি কনস্যালটেন্ট রুমের বহির্বিভাগ। বিশ্বমানের ৬৪টি ক্রিটিকাল কেয়ার বেড (আইসিইউ ও সিসিইউ) এ হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়েছে। রয়েছে নবজাতকদের জন্য ৪৪ বেডের নিওনেটাল ইউনিট ও ৮টি পেডিয়াট্রিক আইসিইউ।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি সংস্থা এ হাসপাতালের মূল নকশা প্রণয়ন করেছে। একটি ইউরোপিয়ান কনস্যালটেন্ট গ্রুপ এ হাসপাতাল তৈরিতে কারিগরি সহযোগিতা দিয়েছে। হাসপাতালে রয়েছে হেলিপ্যাড। যে কোনো স্থান থেকে হেলিকপ্টারে করে রোগীকে হাসপাতালে আনা যাবে।’ ‘সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ (ইনফেকশান কন্ট্রোল), রোগীদের নিরাপত্তা এবং কর্মীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে এ হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। রোগী ও স্বজনদের জন্য হাসপাতালের পাশে থাকার ব্যবস্থা ও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল রোগীদের জন্য ১০ শতাংশ শয্যা সংরক্ষিত আছে। এ ছাড়া অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ও হাসপাতাল জৈব বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করার পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, চট্টগ্রামে উন্নতমানের স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতার কারণে বহু সংখ্যক রোগী বিদেশে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে তাদেরকে আর্থিক, শারীরিক এবং মানসিক চাপের মুখে পড়তে হয়। এ অবস্থা থেকে কিছুটা পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ট্রাস্ট একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মিরসরাইয়ের সংসদ সসদ্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিশ্বমানের ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল এদেশের স্বাস্থ্যসেবায় পরিবর্তন আনবে। এ সময় তিনি বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকায় ডা. দেবী শেঠীকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানের সভাপতি ও দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এমএ মালেক বলেন, মুনাফা অর্জন নয়, চট্টগ্রাম সহ দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশাকরি সবাই এর সুফল ভোগ করবেন। এ ছাড়া বক্তব্য দেন হাসপাতালের কমিশনিং কনসালটেন্ট এডলি হ্যানসন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদুল ফেরদৌস চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ প্রমুখ।
×