ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাম্পাসের সাতকাহন

প্রকাশিত: ০৯:১১, ১৬ জুন ২০১৯

ক্যাম্পাসের সাতকাহন

ব্যাপারটি অপু-দুর্গার জীবনের প্রথম রেলগাড়ি দেখার মতোই। মফস্বলের সেই চিরচেনা গন্ডি ছাড়িয়ে আপনি যখন ইট-কংক্রিটের এই ব্যস্ত নগরীতে পা রাখবেন তখন চারপাশের সবকিছু অচেনা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। এ যেন এক নতুন জীবন। আপনার এতদিনের সঙ্গে যার কোন মিলই নেই। একদিকে চারপাশে নতুনের আবাহন, অন্যদিকে পরীক্ষার চাপ। টেনশন তো হবেই। এই টেনশন একদিন শেষও হবে। স্বপ্ন এসে ধরা দেবে হাতের মুঠোয়। এবার আপনি মুখোমুখি শহরের আয়নায়। পোশাক থেকে শুরু করে ভাষাগত অনেক সমস্যা। স্বভাবতই বিব্রত হবেন আপনি। গ্রামে ফিরে যাবেন- তাহলে স্বপ্নের মৃত্যু নিশ্চিত। সুনিশ্চিত পরাজয়। এর চেয়ে ভাল নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। পিছিয়ে না পড়ে নতুন বন্ধুদের পায়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলার চেষ্টা করা। বাড়িয়ে দিন বন্ধুত্বের হাত প্রথম দুদিন ক্লাসরুম আর বাড়ি ঠিকই আছে। কিন্তু এ দু’দিনের রুটিন যদি দু’বছর চলে তাহলে সর্বনাশ। একঘরে হবেন নিশ্চিত। তাই প্রথম দিনই বেঞ্চে বসা পাশের জনকেই বলুন, আমি সুমন। তুমি? এভাবে পরিচয় পর্বটা সেরে ফেলুন। এক, দুই, তিন, গাণিতিকহারে বাড়িয়ে তুলুন বন্ধুর সংখ্যা। যদিও সবাই বন্ধু হবে এমন নয়; তবুও চেষ্টা করতে হবে। থাকতে হবে রসবোধ বন্ধুত্ব থেকে আড্ডা। আর ক্যাম্পাসের আড্ডার প্রথম শর্ত হলো প্রখর রসবোধ। ক্যাম্পাসের আড্ডা উপভোগ করুন। আপনিও যে রসিক কম নন দেখিয়ে দিন ওদের। গ্রাম থেকে এসেছেন বলে হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না। ক্যাম্পাসের চারদিকে ভাল করে তাকালে দেখবেন আপনার আশপাশের ৮০ ভাগ ছাত্রছাত্রীই গ্রাম, নয় তো মফস্বল শহর থেকে এসেছে। হোক সে মুখগুলো অচেনা, তাতে কী? ইয়ারমেটদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখুন। দেখবেন এই অচেনা শহরে বিপদেআপদে তারাই প্রথমে পাশে এসে দাঁড়াবে। তাছাড়া এই চারটা বছর তো তাদের সঙ্গেই কাটাতে হবে আপনাকে। শুনুন এমনই এক আড্ডাবাজের স্মৃতিকথা : প্রথমে ক্যাম্পাসে এসে কিছুই ভাল লাগত না। মনে পড়ত এলাকার বন্ধু-বান্ধবের কথা। বাসায়ও সময় কাটত না। সব সময় অস্থিরতা বিরাজ করত। কিন্তু না। পরে ক্যাম্পাসের বন্ধু-বান্ধবদের ছাড়া এক মুহূর্তও ভাল লাগে না। এমনই হয়। সময়ের ব্যবধানে সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার মতো হয়ে যাবে আপনারও। ভাবতে হবে নতুন করে কলেজের গন্ডি পেরিয়ে আপনি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি হওয়ার পর জেনে নিন আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন। কোন্ ভবন কোথায়, কখন ক্লাস হবে জেনে নিন তাও। এবার শিক্ষকদের সম্পর্কে জানার পালা। এ বিষয়ে আগ বাড়িয়ে কোন কিছু করতে না যাওয়াই ভাল। ভরসা রাখুন সিনিয়র বড় ভাইদের প্রতি। তারাই আপানাকে জানিয়ে দেবে কোন্ শিক্ষকের কেমন মেজাজ। তাদের পড়ানোর ধরনই বা কেমন। তারপর একদিন সুযোগ বুঝে পরিচিত হয়ে নিন তাদের সঙ্গে। পোশাকও গুরুত্বপূর্ণ শেখ সাদীর সেই বিখ্যাত গল্পের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। ঐ যে দামী পোশাকের কারণে যিনি আশাতীত সমাদর পেয়ে শেষমেশ খাবার টেবিলে বসে নিজে না খেয়ে পকেটে খাবার ভরেছিলেন। বলেছিলেন, এ খাবার তো আমার জন্য নয়; আমার এই দামী পোশাকের জন্য। সুতরাং খাবার পোশাকেরই প্রাপ্য। তাই পোশাক নিয়ে হেলাফেলা করবেন না। যদিও শহরের রংচঙে পোশাক পরতেই হবে এমন কোন কথা নেই। পোশাক বাছাই করুন দেহের গড়ন এবং রং অনুযায়ী। বিজ্ঞানের ছাত্র হলে পোশাকের প্রতি বাড়তি সতর্কতা জরুরী। কাসরুম আর ল্যাবরেটরির পোশাক এক রকম না হওয়াই ভাল। ক্যাম্পাস জীবনের সাত রং ক্যাম্পাস জীবনের প্রতিচ্ছবি বড়ই বিচিত্র। জগতের সমস্ত রঙের সমাহার ঘটে এখানে। কখনও স্বপ্নিল, কখনও ধূসর, কখনও রঙিন স্বপ্নগুলো মনের জানালায় উঁকি দেয়। আবার কখনও স্বপ্নগুলো কালো মেঘের অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসে। এবং রাজনীতি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়ছেন। ফলে স্বভাবতই আপনাকে রাজনীতি-সচেতন হতে হবে। তাই বলে ক্লাস বাদ দিয়ে প্রথম দিনই মিছিলে যোগ দেয়াটা বোধহয় ঠিক হবে না। বিষয়টি পুনরায় ভাবুন। আপনি এখানে কেন এসেছেন, আপনার ভবিষ্যত কি এর সঙ্গে জড়িত, রাজনীতি আপনার জন্য কতটা জরুরী, গ্রামে আপনার পরিবার কি এটা সমর্থন করে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কি আপনি সম্পূর্ণ একমত? এবার উত্তর আপনি নিজেই পেয়ে যাবেন। কারণ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পরিস্থিতি কমবেশি আপনার অজানা নয়। তাছাড়া ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ এই আপ্তবাক্যটিও আপনার কাছে নতুন নয়। ফেলে আসা দিনগুলো কবির ভাষায় বলতে হয়- স্মৃতি যেন মনের আয়না। মন থেকে কিছুতেই মুছে ফেলা যায় না। এ জীবনে যত ভুল, ঝরে যাওয়া ফোটা ফুল। সে ফুলের কাঁটা তো ঝরে যেতে চায় না। আসলেই কথাটি একেবারে সত্য। ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতিগুলো, ফেলে আসা দিনগুলো বার বার মনের জানালায় উঁকি মারে। যদি আরেকবার ফিরে যাওয়া যেত সেই সোনালি স্বপ্নের দিনগুলোতে। আহা! কতই না সুন্দর হতো! ক্যাম্পাস প্রতিবেদক
×