ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লঙ্কানদের সহজেই হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অসিরা

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ১৬ জুন ২০১৯

লঙ্কানদের সহজেই হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অসিরা

রুমেল খান ॥ একদিকে একবারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। অন্যদিকে সর্বাধিক পাঁচবারের শিরোপাধারী অস্ট্রেলিয়া। মুখোমুখি পরিসংখ্যানেও এগিয়ে অসিরাই। সেই পরিসংখ্যানকে শনিবার আরও সমৃদ্ধ করলো তারা। আইসিসি বিশ্বকাপের দ্বাদশ বিংশতম ম্যাচে এই আসরের সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নরা ৮৭ রানের বড় ব্যবধানে সহজেই হারায় লঙ্কানবাহিনীকে। লন্ডনে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭/৩৩৪ রানের জবাবে ৪৫.৫ ওভারে ১০/২৪৭ রানের বেশি সংগ্রহ করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। অনবদ্য শতক হাঁকানোর জন্য ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন বিজয়ী দলের এ্যারন ফিঞ্চ। এ পর্যন্ত মুখোমুখি মোট ৯৬ ওয়ানডের ৬১টিতেই জিতল অসিরা। ৩২টিতে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। পরিত্যক্ত ৪। আর বিশ্বকাপ ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৮ দেখায় ৭টিতেই জয় অস্ট্রেলিয়ার। মাত্র এক জয় শ্রীলঙ্কার, তাও আবার সেটি ফাইনালে (১৯৯৬)! এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলে তৃতীয় থেকে একেবারে দুই ধাপ টপকে শীর্ষস্থানে চলে গেল অসিরা। নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে এটা তাদের চতুর্থ জয়। পয়েন্ট ৮। পেছনে ফেলে দিল নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডকে। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে এটা শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় হার। ৪ পয়েন্ট নিয়ে আগের পঞ্চম স্থানেই আছে তারা। সিডনিতে গত বিশ্বকাপে (২০১৫) এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের শ্রীলঙ্কাকে ৬৪ রানে হারিয়েছিল মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া। সেই ম্যাচে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (৫৩ বলে ১০২)। লন্ডনে অনুষ্ঠিত এবারের আসরে শনিবার অসিদের জয়ের অন্যতম নায়ক আরেক সেঞ্চুরিয়ান, অধিনায়ক-ওপেনার এ্যারন ফিঞ্চ। টসে জিতে প্রতিপক্ষকে আগে উইলোবাজি করার আমন্ত্রণ জানায় লঙ্কানরা। সেই আমন্ত্রণ ‘লুফে’ নেয় অসিরা। গড়ে তোলে রানের পাহাড়। করে ৭ উইকেটে ৩৩৪ রান। দলের টপ স্কোরার হন ফিঞ্চ। হাঁকান ১৩২ বলে ১৫৩ রানের বিস্ফোরক শতক। ১৫টি চারের পাশাপাশি ছক্কা মারেন ৫টি। যদিও তার সঙ্গী ডেভিড ওয়ার্নার বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি (২৬)। তবে ওয়ার্নার-ফিঞ্চ জুটি ১৬.৪ ওভারে সন্তোষজনক ৮০ রানের জুটি গড়েন। এরপর উসমান খাজা (১০) এসেও বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি দলনায়ককে। ২৩ ওভারে ২/১০০ রান তখন অসিদের দলীয় সংগ্রহ। তবে এই প্রাথমিক বিপর্যয় এরপর ভালমতোই কাটিয়ে বড় সংগ্রহের দিকে যাত্রা করে তারা। স্টিভেন স্মিথের সঙ্গে ১৭৩ রানের জুটি গড়েন ফিঞ্চ। এর মধ্যেই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ফেলেন অসি ক্যাপ্টেন। ৪২.৪ ওভারে তিনি যখন ১৫৩ রান করে আউট হন, তখন দলীয় স্কোর ৩/২৭৩ রান। এটা ফিঞ্চের ওয়ানডেতে ত্রয়োদশ শতক এবং ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও। মজার ব্যাপার- এ বছরই শারজায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওই একই স্কোরে অপরাজিত ছিলেন তিনি! ফিঞ্চের বিদায়ের খানিক বাদেই স্মিথও দলীয় ৪/২৭৮ রানে (৫৯ বলে ৭৩) আউট হয়ে যান। এরপর বাকিরা এসে স্লগ ওভারে ঝড় তুলে দলীয় রান তিনশোর কোটা ছাড়িয়ে যান। এতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (২৫ বলে ৪৬*)। লঙ্কান বোলারদের মধ্যে উইকেট পান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা (২/৪০), ইসুরু উদানা (২/৫৭) এবং লাসিথ মালিঙ্গা (১/৬১)। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণভাবে করেন লঙ্কান ওপেনাররা। ১৫.২ ওভারেই নিজেদের স্কোরবোর্ডে জমা করে ফেলেন ১১৫ রান। এক বল পরেই হাফ সেঞ্চুরিয়ান কুসল পেরেরাকে (৫২) বোল্ড আউট করেন ন্যাটা পেসার মিচেল স্টার্ক। এরপর ওয়ানডাউনে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লাহিরু থিরিমান্নে (১৬)। ৩২.১ ওভারে লঙ্কার রান যখন ২/১৮৬, তখনই দলের অধিনায়ক-ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে আউট হয়ে লঙ্কানদের হতাশায় নিমজ্জিত করেন। হতাশার কারণ, মাত্র তিন রানের জন্য শতকবঞ্চিত হন তিনি (১০৮ বলে ৯৭ রান)! করুনারত্নের আউটে সেই যে মড়ক লাগে, সেটা আর থামেনি। অসি বোলিং তোপে নিয়মিত বিরতিতে একের পর এক উইকেট খোয়াতে থাকে লঙ্কানরা। আর মাত্র ১৩ ওভার খেলে বাকি ৭ উইকেট হারায়। গুটিয়ে যায় আড়াইশো রানের আগেই! যেখানে একসময় মনে হচ্ছিল অসিদের বাগে পেয়ে তাদের হারের স্বাদ উপহার দেবে লঙ্কানরা, সেখানে বিস্ময়করভাবে বিপুল ব্যাটিং-ধসে সহজেই প্রতিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে তারা! লঙ্কানদের প্যাকেটবন্দী করার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেন পেসার মিচেল স্টার্ক (৪/৫৫)। এছাড়া কেন রিচার্ডসন (৩/৪৭), প্যাট কামিংস (২/৩৮) এবং জ্যাসন বেহরেনডর্ফ (১/৫৯)-ও নাম লেখান উইকেটপ্রাপ্তির তালিকায়। ৮৭ রানের বড় জয় পায় অসিরা। সংক্ষিপ্ত স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে ৭/৩৩৪ রান (ফিঞ্চ ১৫৩, স্মিথ ৭৩, ম্যাক্সওয়েল ৪৬*, ধনাঞ্জয়া ২/৪০, ইসুরু উদানা ২/৫৭); শ্রীলঙ্কা ৪৫.৫ ওভারে ১০/২৪৭ রান (করুনারত্নে ৯৭, কুসল পেরেরা ৫২, মেন্ডিস ৩০; স্টার্ক ৪/৫৫, রিচার্ডসন ৩/৪৭, কামিংস ২/৩৮)। টস : শ্রীলঙ্কা, ফল : অস্ট্রেলিয়া ৮৭ রানে জয়ী। প্রোটিয়াদের জয় ॥ পয়েন্ট টেবিলের তলানীর দুই দলের লড়াই। তাতে জয়ী হয়ে নিজেদের প্রথম অধরা জয় কুড়িয়ে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আইসিসি বিশ্বকাপে শনিবারের দ্বিতীয় খেলায় তারা ৯ উইকেটে হেসে-খেলে হারায় আফগানিস্তানকে। কার্ডিফে অনুষ্ঠিত বৃষ্টিবিেঘ্নিত ম্যাচটি উভয় দলের জন্যই নির্ধারণ করা হয় ৪৮ ওভার করে। তাতে আগে টসে হেরে আগে ব্যাটিং করে আফগান দল ৩৪.১ ওভারেই ১২৫ রানে অলআউট হয়ে যায় (টপ স্কোরার : রশিদ খান, ৩৫ রান, সেরা উইকেটধারী : ইমরান তাহির, ৪/২৯)। জবাবে প্রোটিয়ারা ২৮.৪ ওভারে ১/১৩১ রান করে জয় কুড়িয়ে নেয় (টপ স্কোরার : কুইনটন ডি কক, ৬৮ রান; সেরা উইকেটধারী : নাইব, ১/২৯)। ম্যাচসেরা হন বিজয়ী দলের স্পিনার ইমরান তাহির। নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে এটা ‘চোকার্স’ খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম জয়। ৩ পয়েন্ট তাদের। পয়েন্ট টেবিলে দু’ধাপ ওপরে উঠেছে তারা (সপ্তম)। পেছনে ফেলল পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে। পক্ষান্তরে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচের সবকটিতেই হারা আফগানরা এখনও পয়েন্টশূন্যই! পয়েন্ট টেবিলে আছে একেবারে নিচে (১০ দলের মধ্যে দশম)।
×