ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষাকে ‘বিশেষ শ্রেণির’ হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা চলছে : ছাত্র ইউনিয়ন

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৬ জুন ২০১৯

শিক্ষাকে ‘বিশেষ শ্রেণির’ হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা চলছে :  ছাত্র ইউনিয়ন

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ২০১৯-’২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রকৃত অর্থে শিক্ষাকে বেসরকারিকরণ করার একটি প্রচ্ছন্ন রূপরেখা। সরকার শিক্ষাকে একটি বিশেষ শ্রেণির হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টার অংশ হিসেবেই এ বাজেট প্রণয়ন করেছে। এমন দাবি করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। একইসঙ্গে সংগঠনটি বলছে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি দেখানো হলেও মূলত তা শুভঙ্করের ফাঁকি। শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে এক করে শিক্ষায় বড় বাজেটে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা। রবিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। ২০১৯-’২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের বিষয়ে সামগ্রিক পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ তুলে ধরতে কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়ন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৯-’২০ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাত নিয়ে শুরুতেই একটা ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বলা হয়েছে, ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণসংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন বাবদ মোট ৮৭ হাজার ৬২০ কোটি টাকা (বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও জিডিপির ৩ দশমিক ০৪ শতাংশ) বরাদ্দ করা হয়েছে। ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অভ্যন্তরীণ শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে জনপ্রশাসন বা নিজ নিজ বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ের বাইরে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দেখানোর একটা প্রহসন ও প্রতারণামূলক একটা প্রচেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় লক্ষণীয়। এতে আরও বলা হয়, ‘পুরো ব্যাপারই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে এক করে মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ১৯ শতাংশ বরাদ্দ করে শিক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেখানোর একটা বানোয়াট প্রচেষ্টাও বাজেটে লক্ষণীয়। প্রযুক্তি খাতকে বাদ দিলে শুধু শিক্ষা খাতের বরাদ্দ দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ২০১৮-’১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দটি ছিল ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ফলে, বর্তমান বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আগের বছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে শতাংশের হিসাবে ০ দশমিক ০৯ শতাংশ বেড়েছে। ছাত্র ইউনিয়ন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সব শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকদের অন্ধ দলীয় আনুগত্য, মাস্তানতন্ত্র, স্তাবকতা ও লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশা যে কলুষিত পর্যায়ে পৌঁছেছে, সে ব্যাপারে শিক্ষকদের নিজেদের আত্মোপলব্ধি না হলে বিদেশ থেকে শিক্ষক-প্রশিক্ষক এনে জনগণের অর্থের নিদারুণ সরকারি অপচয়ই করা হবে। বাজেটকে শিক্ষাবান্ধব করতে সাত দফা দাবি জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাজেটে সমতা ও ন্যায্যতা সৃষ্টির ভিত্তিতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক করপোরেট প্রতিষ্ঠান-বাণিজ্যিক ব্যাংক-বিমা-ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের আয় বা লভ্যাংশের ওপর শিক্ষা খাতের ওপর বিশেষ সারচার্জ আরোপ; অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় না করে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয়ের খাতগুলো আরও বিস্তারিত, সুস্পষ্ট ও সুবিন্যস্ত করা; প্রতিশ্রুত জিডিপির ৬ শতাংশ ও মোট বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা; শিক্ষার মৌল ভিত্তি, মৌলিক দর্শন ও কাঠামো কী হবে এবং উচ্চশিক্ষা, মাধ্যমিক-প্রাথমিক-কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা কিভাবে পরিচালিত হবে, সেই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজন, নাগরিক ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলোচনার লক্ষ্যে বিশেষায়িত টাস্কফোর্স বা কমিশন গঠন। ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেলের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনীষী রায় টুটুল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাগীব নাঈম, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক নজির আমিন চৌধুরী জয় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×