ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জাহাজ-ট্যাঙ্কার সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ১৭ জুন ২০১৯

জাহাজ-ট্যাঙ্কার সংঘর্ষ

চট্টগ্রাম নৌ-বন্দর আবারও হয়েছে সংবাদ শিরোনাম। কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা পয়েন্টে শুক্রবার একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কারের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ ঘটেছে কন্টেনারবাহী একটি জাহাজের। তবে রক্ষা, কর্ণফুলী মোহনায় এ সময়ে ভাটা থাকায় তেমন বড় কোন বিপর্যয় তথা দুর্ঘটনা ঘটেনি। বিপদ ঘটলে স্বভাবতই ট্যাঙ্কার থেকে তেল ছড়িয়ে পড়া অথবা কন্টেনারগুলো পানিতে গড়িয়ে পড়ে সমূহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারত, যা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। সংঘর্ষের কারণে বন্দরে কয়েক ঘণ্টা জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। পরে জোয়ারের পানিতে মোহনা স্ফীত হলে একাধিক টাগবোট দিয়ে জাহাজ দুটিকে আলাদা করা সম্ভব হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও সংঘর্ষের কারণ নির্ণয়ে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। কিছুদিন আগে জাঁকজমকের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৩ বছর পূর্তি উৎসব হলেও সময়ের চাহিদা পূরণে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেক আগেই। ইতোমধ্যে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিসহ আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। সেই অনুপাতে সক্ষমতা তথা পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি বন্দরের। প্রতি বছর কর্ণফুলীবাহিত বিপুল পরিমাণ পলি জমে নৌ-বন্দরটি নাব্য হারিয়েছে। বড়সড় পণ্য পরিবাহী জাহাজ দীর্ঘদিন থেকেই ভিড়তে পারে না বন্দরটিতে। মাল খালাস করতে হয় লাইটারেজ জাহাজ দিয়ে। পণ্যদ্রব্য উঠাতে-নামাতেও সময় বেশি লাগে। নিয়মিত ড্রেজিংয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকলেও তা হয় না বললেই চলে। এর পাশাপাশি ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম-নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। অতঃপর বিকল্প বন্দর হিসেবে সরকার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে মংলার আধুনিকীকরণসহ পায়রা বন্দর নির্মাণের। ইতোমধ্যে পায়রা সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে ক্রমশ। দেশ-বিদেশের পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়ছে, ছেড়ে যাচ্ছে, রাজস্ব আদায় হচ্ছে নিয়মিত। কর্মসংস্থান হয়েছে বহু লোকের। আগামীতে বন্দরটি আরও সচল ও বহু ব্যবহার্য হলে বাড়বে অধিক কর্মচাঞ্চল্য। চাপ কমবে চালনা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে। মাত্র কয়েক বছর আগে ২০১৩ সালের নবেম্বরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় টিয়াখালীতে এর সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সর্বাধিক মনোযোগ দেয় বিদ্যুত উৎপাদন, বন্দর স্থাপন ও যোগাযোগের উন্নয়নে, যা যে কোন দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যক। চট্টগ্রাম ও চালনার পর পায়রায় হয়েছে তৃতীয় সমুদ্র বন্দর। সর্বোপরি মাতারবাড়িতে হচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক নৌ-বাণিজ্যের অঙ্গনেও রয়েছে। ফলে জরুরী ভিত্তিতে চালনা ও পায়রা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোসহ আরও একাধিক বিকল্প বন্দর তথা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মাণ হলে এর সক্ষমতা বাড়বে বহুগুণ। বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়কে অবস্থান করছে, যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০৪১ সাল নাগাদ জাতীয় প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে রূপান্তরিত হতে পারে। সে অবস্থায় গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজন ও গুরুত্ব আরও অর্থবহ হয়ে উঠেছে বৈকি। এক্ষেত্রে জাইকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা, জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও সুহৃদ এবং সর্বোচ্চ দাতা দেশ হিসেবে স্বীকৃত। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক জাপান সফরে এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়াও মিলেছে। তাই বলে চট্টগ্রাম বন্দরকে অবহেলা করলেও চলবে না।
×