ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষায় বড় দুশ্চিন্তা

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ১৭ জুন ২০১৯

 বর্ষায় বড় দুশ্চিন্তা

বর্ষা এসেছে প্রকৃতির নিয়ম মেনে। পঞ্জিকার দিনক্ষণ হিসাব করে অনেকেই মেতে উঠেছেন রোমান্টিকতায়। বাঙালী কিছুটা আবেগপ্রবণ জাতি। ফলে বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই বর্ষাবন্দনার জোয়ার লক্ষ্য করা যায়। কবিগুরু বলে গেছেন, এমন দিনে তারে বলা যায়। ফলে মনের ঝাঁপি খুলে কথা বলতে ইচ্ছে করে বহুজনের। কিন্তু যারা বাস্তববাদী, প্রতিদিন জীবিকার জন্য ঘরের বাইরে বের হতে হয়, তাদের কাছে বর্ষাকাল রোমান্টিকতার নয়, বরং বিপন্নতার সঙ্কেত। বর্ষায় জলাবদ্ধতা রাজধানীর একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষার শুরুতেই গণমাধ্যম আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৮ এলাকা জলাবদ্ধতাপ্রবণ। আমরা অভিজ্ঞতায় দেখি, সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানী ঢাকা ডুবতে বসে। এ বিষয়ে দুই মেয়র, ওয়াসার এমডি, এমনকি মন্ত্রী মহোদয় পর্যন্ত অনেক আশার বাণী শুনিয়েছেন; কথা দিয়েছেন দুর্দশা লাঘবের। কিন্তু পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। তাই কবির ভাষায় বলতে হয়- কেউই কথা রাখেনি! একটি আধুনিক নগরীতে জলাবদ্ধতার কোন সুযোগ নেই। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো আমাদের মহানগরগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠায় এবং মরণাপন্ন দশায় উপনীত হওয়ার পরও সাবধানতা অবলম্বন করে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ায় এগুলো এখন জলাবদ্ধতার শিকার। শুধু জলাবদ্ধতা না বলে এটাকে মহাজলাবদ্ধতা বললেই বোধ করি সঠিক হবে। ঢাকায় নতুন নতুন এলাকায় জলজট দেখা দেয়ায় এবং চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার রেকর্ড হওয়ায় এ কথা নির্দ্বিধায় বলা চলে। মেয়রদের আমরা বলে থাকি নগরপিতা। মেয়র আসেন মেয়র যান, প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়ান। কিন্তু নগরীর সত্যিকারের দায়িত্ব পালন করতে তাদের দেখা যায় না। একদিকে ঢাকার জলাশয় ও খালগুলোকে ভরাট করে বহুতল ভবন গড়ে তোলা হয়েছে, অন্যদিকে মহানগরীর চারপাশের নদীগুলোকে দখল-দূষণের মাধ্যমে অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। তাই স্বাভাবিক বৃষ্টিতে জল ধরে রাখা, জলের প্রবাহ এবং সর্বোপরি জলের গন্তব্য- সব এলোমেলো করে ফেলা হয়েছে। এক মহাবিপর্যস্ত পরিস্থিতি। ফলে কোন টেকনিকই আর কাজে আসছে না। এর ওপর রয়েছে অতিরিক্ত জনচাপ এবং যানবাহনের আধিক্য। জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানীর যানজট দুঃসহ আকার ধারণ করে। জলাবদ্ধতা আর যানজটের কবলে পড়ে রাজধানীবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বর্ষা মৌসুমেও রাজধানীর বহু সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দুর্বল হয়ে পড়েছে। রাজধানীবাসীর সেবায় নিয়োজিত একাধিক কর্তৃপক্ষের কাজে সমন্বয় নেই। এসব কারণে জলাবদ্ধতা নিরসনে নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ফলপ্রসূও হচ্ছে না। বর্ষা মৌসুম ছাড়াই সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কাজেই বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টির ভার যে রাজধানী বহন করতে পারবে না সেটা জানা কথা। প্রশ্ন হচ্ছে, পরিত্রাণের উপায় কী? যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, বছরের পর বছর ধরে উড়াল সড়ক নির্মাণ, কাটাকাটি, নতুন নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ, অপর্যাপ্ত পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি এবং সমন্বয়হীনতা, সর্বোপরি মৌসুমী বৃষ্টিপাত জনজীবনের এই প্রলম্বিত দুর্ভোগের জন্য প্রধানত দায়ী। বেদখল হয়ে যাওয়া ৫৩টি খালও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। বর্ষার জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে জলাবদ্ধতা মনিটরিং কমিটির সভা হয়েছে। তাতে জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকাগুলোতে অস্থায়ী পাম্প বসানোর সুপারিশ করা হয়েছে, যা ইতিবাচক। ঢাকা ওয়াসার যে ২৬টি খাল দেখভাল করার কথা সেগুলো দখলমুক্ত ও পরিষ্কার করে প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা হলে এবং বক্স-কালভার্ট ও ড্রেনের ময়লা নিয়মিত পরিষ্কার করা হলে অন্তত জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে আসতে পারে। একই সঙ্গে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনাও আধুনিক করা জরুরী।
×