ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তাবিত বাজেট শেয়ারবাজারবান্ধব

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ১৭ জুন ২০১৯

 প্রস্তাবিত বাজেট শেয়ারবাজারবান্ধব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারের সঠিক দিক নির্দেশনা এবং কর্মপ্রচেষ্টায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট শেয়ারবাজারবান্ধব হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান। রবিবার ডিএসইর প্রধান কার্যালয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় ডিএসইর চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হাশেম, পরিচালক রকিবুর রহমান, পরিচালক শরীফ আতিউর রহমান এবং পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী উপস্থিত ছিলেন। কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য যেসব প্রস্তাব রাখা হয়েছে এতে বাজারে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং জাতীয় অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। তিনি আরও বলেন, এসব প্রস্তাবের মাধ্যমে বেসরকারী খাত আরও শক্তিশালী এবং বিকশিত হয়ে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে। যা দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আরও আকৃষ্ট করবে। সংবাদ সম্মেলনে কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা নগদ লভ্যাংশ প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর মধ্যে নগদের পরিবর্তে বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এতে বিনিয়োগকারীগণ তাদের প্রত্যাশিত প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কোম্পানিসমূহের বোনাস লভ্যাংশের পরিবর্তে নগদ লভ্যাংশ প্রদানকে উৎসাহিত কার জন্য কোন কোম্পানি বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বোনাস লভ্যাংশের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের বিধান প্রস্তাব করেন। কোম্পানির অর্জিত মুনাফা থেকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার পরিবর্তে রিটেইনড আর্নিংস বা বিভিন্ন ধরনের রিজার্ভ হিসেবে রেখে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এতে প্রত্যাশিত লভ্যাংশ প্রাপ্তি থেকে বিনিয়োগকারীগণ বঞ্চিত হন এবং শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ধরনের প্রবণতা রোধে কোন কোম্পানির কোন আয় বছরে রিটেইনড আর্নিংস, রিজার্ভ ইত্যাদির সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে যতটুকু বেশি হবে তার ওপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের বিধান প্রস্তাব করেন। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা প্রদান এবং শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের জন্য পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি হতে প্রাপ্ত লভ্যাংশ আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার টাকায় নির্ধারণের প্রস্তাব। এর ফলে বিনিয়োগকারীগণ শেয়ারবাজারে অধিক বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে এবং বছরের তারল্য সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীগণ দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে। নিবাসী কোম্পানির লভ্যাংশ আয়ের ওপর একাধিকবার করারোপ রোধ করার বিধান গতবছর কার্যকর করা হয়েছিল। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য এ অর্থবছরে নিবাসী ও অনিবাসী সকল কোম্পানির ক্ষেত্রে লভ্যাংশ আয়ের ওপর একাধিকবার করারোপ রোধ করার বিধান কার্যকর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে নিবাসী কোম্পানির পাশাপাশি অনিবাসী কোম্পানির লভ্যাংশ আয়ের ওপর একাধিকবার করারোপন হবে না। এছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক, শেয়ারবাজার, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক খাতের সংস্থার ও উন্নয়নে সরকার নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য পর্যায়ক্রমে ব্যাংকের মূলধনের পরিমাণ বাড়ানো, ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংস্কার, প্রয়োজনবোধে ব্যাংক একীভূতকরণ, খেলাপী ঋণ গ্রহিতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, সুদের হার এক অঙ্কের মধ্যে আনা এবং হোল্ডিং কোম্পানি ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানিসমূহের কার্যক্রম যুগোপোযুগী করার লক্ষ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার কথা বলা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে শেয়ারবাজারে আরও উন্নতি হবে। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ শিল্পখাতে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। অপ্রদর্শিত অর্থ শিল্পখাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এছাড়াও অঞ্চলভিত্তিক বেশ কিছু শিল্পখাতে বর্তমানে ৫ বছর পর্যন্ত সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা দেয়া আছে। অন্যদিকে গভীর সমুদ্রবন্দর, আন্ডারাইন্ড রেলপথ, ফ্লাইওভার, হাইটেক পার্কসহ বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে ১০ বছর পর্যন্ত ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা দেয়া আছে। বাজেটে উভয় ক্ষেত্রে এই কর অবকাশ সুবিধার মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়ানো হয়েছে। যা সরকারের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনারই বহির্প্রকাশ। এই উদ্যোগ দেশের শিল্প উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করবে। আর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি শেয়ারবাজারের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী। সিএসইর বাজেট প্রস্তাব ॥ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য যেসব প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম ফারুক। রবিবার ঢাকাস্থ সিএসইর প্রধান কার্যালয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিএসইর সচিব রাজিব শাহা এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক হাসনাইন বারী। সিএসই ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম ফারুক বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রুগ্ন কোম্পানিকে ভাল কোম্পানি কর্তৃক একত্রীকরণ/অধিভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এটি শেয়ারবাজারের জন্য একটি ভাল প্রস্তাব। তিনি আরও বলেন, ঘোষিত বাজেটে নগদ লভ্যাংশের পরিবর্তে বোনাস লভ্যাংশের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে রিটেইনড আর্নিংস বা রিজার্ভ যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয় তবে বাড়তি রিজার্ভের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা কোম্পানিগুলোকে নগদ লভ্যাংশ প্রদানে উৎসাহিত করবে বলে এবং বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য লভ্যাংশ আয়ের দ্বৈত কর তুলে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
×