ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

অনলাইনে হ্যাকাররা তৎপর, মেয়েদের গ্রুপ নিয়ে চলছে ব্ল্যাকমেল

প্রকাশিত: ১০:১৯, ১৭ জুন ২০১৯

 অনলাইনে হ্যাকাররা  তৎপর, মেয়েদের  গ্রুপ নিয়ে চলছে  ব্ল্যাকমেল

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ অনলাইনেও শান্তি নেই মেয়েদের। নিজেদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি তুলে ধরতে অনলাইনে ঘরে বসে যে আয় করবে সেই সুযোগও দিচ্ছে না হ্যাকাররা। তবে হ্যাকারদের ব্যবহার করছে একশ্রেণীর অসাধু চক্র। ঈর্ষান্বিত হয়ে এ ধরনের কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে এমন ধারণা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক আফতাব হোসেনের। এদের উদ্দেশ্য হচ্ছে উন্নয়নের দিকে ধাবিত হওয়া নারী বা তরুণীদের অনলাইন ডেভেলপমেন্ট গুঁড়িয়ে দিয়ে বিতর্কিত ওয়েবসাইট চালু করে কুৎসা রটানো। এসব তথ্য উঠে এসেছে সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযানে গ্রেফতার হওয়া হ্যাকার সালমানের স্বীকারোক্তিতে। ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, এনআইডিসহ বিভিন্ন দলিল দিয়ে ফেসবুক আইডি হ্যাক করছে চক্রের সদস্যরা। আরও জানা গেছে, হ্যাকাররা গত ১১ মে বাদীর স্ত্রীর ফেসবুক আইডির বিপরীতে নকল ডেথ সার্টিফিকেট বানিয়ে ফেসবুকে রিপোর্ট করে যে, ইশতিয়াকের স্ত্রী জীবিত নেই। তাই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ঐ রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বাদীর স্ত্রীর কাজ থেকে ফেসবুক এক্সেস নিয়ে ফেলে। তার পর থেকে বাদীর স্ত্রীর আইডির পাশে মৃত ব্যক্তির ফেসবুক আইডির মত ‘রিমেম্বারিং’ শব্দটি যোগ হয়ে যায়। মামলা অনুযায়ী সালমান মোহাম্মদ ওয়াহিদ গ্রেফতারের পর নানা তথ্য পেয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সালমানের মোবাইল পর্যালোচনায় দেখা যায় সে ফটোশপের মাধ্যমে বিভিন্ন নামে-বেনামে কয়েকটি নকল ডেথ সার্টিফিকেট, এনআইডি, পাসপোর্ট, বার্র্থ সার্টিফিকেট, স্কুল কলেজের আইডিসহ বিভিন্ন দলিল তৈরি করেছে সে। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে, মূলত সে মেয়েদের বিভিন্ন ফেসবুক এ্যাকাউন্ট ও ফেসবুক গ্রুপ হ্যাক করে। অন্য মেয়েদের ফেসবুক এ্যাকাউন্টগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে সে। আটক সালমান নিজে চিটাগাং সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড সাপোর্ট (সিসিএসএস) নামে একটি সাইভার সলিউশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। সালমান মোহাম্মদ ওয়াহিদের কাছ থেকে ফেসবুকে সাঁটিয়ে দেয়া বাদীর স্ত্রীর ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেট উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। এ ব্যাপারে কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের পরিদর্শক আফতাব হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, তিনি মামলাটি তদন্ত করছেন। আসামি গ্রেফতারের পর তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। সোমবার শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। রিমান্ডে আনা গেলে আরও কিছু তথ্য উদ্ধার করা যাবে। ফলে হ্যাকার চক্রকে ধরতে ও আইনের আওতায় আনতে সুবিধা হবে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের তদন্তে উঠে এসেছে, অনলাইনে থাকা ‘গার্লস গ্রুপ’ নামের এক ফেসবুক আইডি পরিচালনা করেন বাদরি স্ত্রী। তিনি এতে নারী ও তরুণীদের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন ও স্বাবলম্বী করার চেষ্টায় রয়েছেন দীর্ঘ প্রায় ৪/৫ বছর। এই নারীর স্বামী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসতিয়াক হাসান (৩০)। হ্যাকার চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে এই নারীর আইডি হ্যাক করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বিষয়টি ইশতিয়াক অনুমান করতে পেরে কৌতূহলী হয়ে উঠেন। অবশেষে নিশ্চিত হয়ে হ্যাকার সালমান মোহাম্মদ ওয়াহিদের (২৪) বিরুদ্ধে সিএমপির পাঁচলাইশ থানায় একটি জিডি করেন গত বছরের ১৬ অক্টোবর। সালমানের পিতার নাম আব্দুল মতিন ও মায়ের নাম গুলজার বেগম। নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন কমার্স কলেজ রোড এলাকার এবি ম্যানশনে থাকত এই হ্যাকার। এর আগে সালমান গত বছরের ৩০ এপ্রিল ওই নারীর একটি ফেসবুক এ্যাকাউন্ট হ্যাক করে গত বছরের মে তা নিষ্ক্রিয় বা ডিসএ্যাবল করে দেয়। এর আগে ‘মেহেদি সাজ’ নামের আরেকটি এ্যাকাউন্ট হ্যাক করেছিল এই সালমান। গত বছরের অক্টোবরের ৬ তারিখে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগে এ বিষয়টি নিয়ে এক নারী অভিযোগের পর সালমানকে ধরে নিয়ে আসে গোয়েন্দা বিভাগ। পরে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায় সালমান। এই হ্যাকারকে জনসমক্ষে তুলে ধরতে মামলা করতে বাধ্য হন ইশতিয়াক। জানা গেছে, মূলত হ্যাকার সালমান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হলো ফেসবুক হ্যাকার গ্রুপ ‘দ্য ডারটি এনোনিমাস আর্মি’ এর অন্য সদস্যদের ব্যবহার করে। বিভিন্ন হ্যাকারের পি-নাইন মোবাইল ডিভাইস দিয়ে ইশতিয়াকের স্ত্রীর একটি ফেসবুক আইডি হ্যাক করে। পরে আরও একটি আইডি হ্যাক করে প্রিটেন্ডিং রিকোয়েস্ট দিয়ে ফেসবুক আইডি ডিজেবল করে দেয়। যা ইশতিয়াক বিভিন্ন জনের মাধ্যমে এবং ফেসবুক, জি-মেইল ম্যাসেজের এলার্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন। এ ঘটনায় ইশতিয়াক গত ২৬ পাঁচলাইশ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ১৭/১৮/২৪/২৫/৩৪/৩৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। ইশতিয়াক জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, হ্যাকার সালমান ও তার গ্রুপের কিছু সদস্য বাদীর স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ফেইক আইডি খুলে তাহার স্ত্রীর নামে মিথ্যা কুৎসা রটাচ্ছে। এতে তিনি আত্মসম্মানহীন হয়ে পড়ছিলেন। মামলাটি এখন তদন্তনাধীন রয়েছে। আসামি সালমানও গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে।
×