ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিত শর্মার সেঞ্চুরিতে রেকর্ড রান ভারতের

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ১৭ জুন ২০১৯

 রোহিত শর্মার সেঞ্চুরিতে  রেকর্ড রান  ভারতের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পাকিস্তানকে ইদানীং সামনে পেলেই যেন রোহিত শর্মার ব্যাট গর্জে ওঠে। একটি সেঞ্চুরি যেন অবধারিত হয়ে যায়। বিশ্বকাপে রবিবারও যেমন পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন রোহিত। ১৪০ রানের ইনিংস খেললেন। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিপক্ষে এবং বিশ্বকাপে নিজের সেরা ইনিংসটিও খেললেন। তার এ অসাধারণ ব্যাটিংয়ের সঙ্গে সবচেয়ে কম ইনিংসে ১১ হাজার রানের রেকর্ড গড়া বিরাট কোহলির ৭৭ রানের ইনিংসে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে রেকর্ড রানও করল ভারত। ৫ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ৩৩৬ রান করেছে ভারত। শুধু রেকর্ড রানই নয়, পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে রেকর্ড জুটিও হলো। রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল যে ওপেনিংয়ে ১৩৬ রানের জুটি গড়েছেন তা ওপেনিংয়েই শুধু নয়, পাকিস্তানের বিপক্ষে যে কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়া হয়েছে। এর আগে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৩০০ রান করেছিল ভারত। সেটি গত বিশ্বকাপে, এ্যাডিলেডে। এবার ম্যানচেস্টারে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগেই সেই রেকর্ডকে পেছনে ফেলে ভারত। ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৬.৪ ওভারে ভারত যখন ৩০৫ রান করে তখনই বৃষ্টি পড়া শুরু হয়। খেলাও বন্ধ থাকে। তার আগে ৪৬তম ওভারেই ৩০০ রান অতিক্রম করে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করার নতুন রেকর্ড গড়ে ভারত। আধাঘণ্টা বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকার পর আবারও খেলা শুরু হয়, শেষ পর্যন্ত ৩৩৬ রান করে ভারত। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ডও হয়ে গেল। উদ্বোধনী জুটিতে রেকর্ড জুটিও হয়েছে। রোহিতের সঙ্গে লোকেশ রাহুল ওপেনিংয়ে নামেন। শিখর ধাওয়ান ইনজুরিতে পড়াতেই রাহুল ওপেনিংয়ে নামার সুযোগ পান। পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে, যেখানে উত্তেজনা ছড়াবেই, উত্তাপ থাকবেই, উন্মাদনায় সবাই ভাসবেই; এমন ম্যাচে রাহুলও ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরেন। রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে রোহিতও পাকিস্তানের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। ১৩৬ রানের জুটি গড়েন। এর আগে ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে ব্যাঙ্গালুরুতে দুই দলের মধ্যকার লড়াইয়ে নভোজৎ সিং সিধু ও শচীন টেন্ডুলকর যে ৯০ রানের জুটি গড়েছিলেন, সেটিই রবিবার পর্যন্ত সেরা ওপেনিং জুটি ছিল। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে সেরা জুটিও হয়েছে। এর আগে গত বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে এডিলেডে শিখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলি মিলে দ্বিতীয় উইকেটে ১২৯ রানের জুটি গড়েছিলেন। সেটি রবিবার পর্যন্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল। রোহিত ও রাহুল মিলে তা ভেঙ্গে নতুন জুটি গড়েন। রোহিতও পাকিস্তানকে দেখিয়ে দেন তিনি কতটা ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান। পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ এশিয়া কাপেও রোহিত সেঞ্চুরি করেছিলেন। এবার বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নেমে আবারও সেঞ্চুরি করলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন রোহিত। ক্যারিয়ারের ২৪তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন আবার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর গড়ে। এর আগে গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে যে ১৩৭ রান করেছিলেন, সেটিই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর ছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষেও নিজের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর গড়েন রোহিত। এশিয়া কাপে যে অপরাজিত ১১১ রান করেছিলেন, সেটি পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ও সর্বোচ্চ স্কোর ছিল। এবার সেই স্কোরকেও ছাপিয়ে গেলেন রোহিত। ১১৩ বলে ১৪ চার ও ৩ ছক্কায় ১৪০ রান করেছেন রোহিত। বিশ্বকাপে তিন সেঞ্চুরি হলো রোহিতের। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে একটি সেঞ্চুরি করার পর এবার বিশ্বকাপে দুটি সেঞ্চুরি করেন রোহিত। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই অপরাজিত ১২২ রানের ইনিংস উপহার দেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫৭ রান করে আউট হন। এক ম্যাচ পরই আবার সেঞ্চুরির দেখা পান। তাও আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান দলের বিপক্ষে। মোহাম্মদ আমিরকে বুঝে খেল। বাকিদের ওভারে রান তুলো। ভারত ব্যাটসম্যানদের যেন এই তালিমই দেয়া ছিল। অক্ষরে অক্ষরে তা পালনও করেছেন ভারত ব্যাটসম্যানরা। আমিরের বলগুলোকে এমনই বুঝে খেলেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত ও রাহুল, প্রথম ওভারে কোন রানই নেননি। প্রথম স্পেলে আমিরের করা ৪ ওভারে ৮ রানের বেশি নেননি। কিন্তু হাসান আলী, ওয়াহাব রিয়াজ, ইমাদ ওয়াসিম, শাদাব খানদের বলগুলোতে ঠিকই বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। শুরুতে অবশ্য রাহুলকে রান আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করেছে পাকিস্তান। শুরুতেই ওপেনিং জুটি ভেঙ্গে দেয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। কিন্তু এরপর যে সতর্ক হন দুই ওপেনার, আর কোন সুযোগই দেননি। ভারতের এবার বিশ্বকাপে যেন পরিকল্পনাই এমন, শুরুতে উইকেট রাখতে হবে। দেখে বুঝে এগিয়ে যেতে হবে। এরপর গিয়ে স্কোরবোর্ডে রান তুলতে হবে। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে তাই ৫৩ রানের বেশি হয়নি। তবে এরপরই মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন দুই ওপেনার। ১৭.৩ ওভারে গিয়ে ১০০ রান স্কোরবোর্ডে জমা হয়। তখনই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওপেনিং জুটির রেকর্ড হয়ে যায়। যখন ১৩০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হয়, তখন বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে যে কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটিও হয়ে যায়। কোনভাবেই উইকেট শিকার করতে পারছিলেন না পাকিস্তান বোলাররা। এর মধ্যে ৮৫ বলে সেঞ্চুরিও করে ফেলেন রোহিত। রাহুলও হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন। দুইজন মিলে অসাধারণভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন। অবশেষে দলের রান যখন ১৩৬ এ পা দেয়, তখন রাহুলকে (৫৭) আউট করা যায়। হাফ ছেড়ে যেন বাঁচেন পাকিস্তান ক্রিকেটাররা। অবশেষে একটি উইকেট যে শিকার করা গেছে। রাহুল আউটের পর যিনি ব্যাট হাতে নামেন, তাকে নিয়েতো আরও বেশি চিন্তা থাকে পাকিস্তানের। তিনি বিরাট কোহলি। ভারতের এ মুহুর্তে সেরা ব্যাটসম্যান। তার সামনে আবার ৫৭ রান করলেই রেকর্ড গড়ার সুযোগ ছিল। সবচেয়ে কম ২২১ ইনিংস খেলে ১১ হাজার রানের ক্লাবে ঢোকার সুযোগ ছিল। সেই সুযোগ অনায়াসেই কাজে লাগিয়েছেন কোহলি। রোহিতের সঙ্গে ৯৮ রানের জুটি গড়েছেন। আবার ৫১ বলে ৫০ রান করার পর আরও ৭ রান করতেই রেকর্ডের মালিক হয়েছেন। ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকর ২৭৬ ইনিংস খেলে দ্রুত ১১ হাজার রান করেছিলেন। শচীনের সঙ্গে এই মাইলফলকে থাকা আরও আট বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানকে পেছনে ফেলেছেন কোহলি। দলের ২৩৪ রানের সময় রোহিত যখন আউট হন তখনই ভারত যে অনেক বড় স্কোর গড়তে যাচ্ছে, তার আলামত মিলে যায়। এরপর হার্দিক পা-িয়া ব্যাট হাতে নেমে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করে ১৯ বলে ২৬ রান করে আউট হন। মোহাম্মদ আমিরের ভেল্কিও শুরু হয়ে যায়। পা-িয়াকে আউট করার কিছুক্ষণ পরই মহেন্দ্র সিং ধোনিকেও সাজঘরে ফেরান আমির। এর কিছুক্ষণ পরই ভারতের স্কোরবোর্ডে ৩০০ রান যোগ হয়, বৃষ্টিও নামে। বৃষ্টির পর যখন খেলা শুরু হয় কোহলিকেও আউট করে দেন আমির। ৬৫ বলে ৭ চারে ৭৭ রান করে আউট হন কোহলি। এরপর বিজয় শঙ্কর (১৫*) ও কেদার যাদব (৯*) মিলে ৫০ ওভার খেলে আসেন। দলের রানও ৩৩৬ হয়ে যায়। তবে প্রথম দুই উইকেটে যেভাবে খেলেছিলেন ভারত ব্যাটসম্যানরা, মনে হয়েছিল ৩৫০ রান অনায়াসেই হবে। কিন্তু আমির (৩/৪৭) শেষদিকে ঠিকই নিজের দ্যুতি ছড়িয়ে দিয়ে ভারতকে ৩৩৬ রানের বেশি এগিয়ে যেতে দেননি। তারপরও পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে ভারতের রেকর্ড রান হয়ে গেল।
×