ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে প্রথম কয়লা আমদানি চুক্তি হচ্ছে আজ

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১৭ জুন ২০১৯

দেশে প্রথম কয়লা আমদানি  চুক্তি হচ্ছে আজ

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুত উৎপাদনে কয়লা আমদানির জন্য প্রথম চুক্তি হতে যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার কোম্পানি পিটি বায়য়ান রিসোর্স টিবিকে এর সঙ্গে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) চুক্তিটি সই করবে। কয়লাচালিত বড় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও জ্বালানি সরবরাহে সঙ্কট নিয়ে প্রচার ছিল। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে সেই সঙ্কটের অবসান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে ১০ বছর মেয়াদী কয়লা সরবরাহ চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য পিটি বায়য়ানের প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছেন। বিসিপিসিএল এর নির্মাণাধীন বিদ্যুত কেন্দ্র পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রটি এই কয়লা দিয়ে চালানো হবে। ইন্দোনেশিয়ার কোম্পানি পিটি বায়য়ান রিসোর্স টিবিকে এই অঞ্চলের সব থেকে বড় কয়লা সরবরাহকারী কোম্পানির একটি। কয়লা উৎপাদনের সঙ্গে পিটি বায়য়ান এর রয়েছে বন্দর অবকাঠামো। পিটি বায়য়ান দাবি করছে এই অঞ্চলের মধ্যে তাদের কয়লা বন্দরটি অন্যতম। কোম্পানিটি বলছে তারা ইন্দোনেশিয়ার সব থেকে কম খরচে কয়লা উৎপাদন করে। তাদের কয়রা বিটুমিনাস শ্রেণীর যার তাপন ক্ষমতা অত্যধিক। যা কম সালফার এবং কম ছাই উৎপাদনকারী। কয়লা উৎপাদনে চীনের কারিগরি সহায়তা গ্রহণ করে পিটি বায়য়ান। বার্ষিক সাড়ে চার মিলিয়ন টন অর্থাৎ ৪৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা সরবরাহ করবে পিটি বায়য়ান। ইন্দোনেশিয়ার এই কোম্পানিটি সর্বোচ্চ ভালমানের কয়লা সরবরাহ করবে। আগামী জুলাইয়ে প্রথম ইন্দোনেশিয়ার কয়লাবাহী জাহাজ ভিড়বে পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রের জেটিতে। বিসিপিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদুল আলম বলেন, আমরা আশা করছি এ বছরের ২৬ নবেম্বর থেকে পায়ার বিদ্যুত কেন্দ্র গ্রিডে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুত সরবরাহ করবে। এর অন্তত দুমাস আগে থেকেই বিদ্যুত পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির কয়লা এখন সরাসরি ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হবে। তবে আগামী ১৬ মাস পর থেকে আন্দামানে ট্রান্সশিপমেন্ট শুরু হলে আমদানি ব্যয় কিছুটা কমে আসবে বলে জানান তিনি। বিসিপিসিএল সূত্র জানায়, দেশে প্রথম পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রই আমদানি করা কয়লা দিয়ে চালানো হবে। এখন নির্মাণাধীন মেগা বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে পায়রা কেন্দ্রের নির্মাণ অগ্রগতি সব থেকে বেশি। পায়রা ছাড়াও রামপাল এবং মাতারবাড়ি কয়লাচালিত মেগা প্রকল্প নির্মাণ কাজ চলছে। প্রতি টন কয়লার বর্তমান মূল্য ধরা হয়েছে ৫৫ ডলার। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ ২৫ ডলার যোগ হয়ে পায়রা কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে ব্যয় দাঁড়াবে ৮০ ডলার। কয়লা পরিবহনের জন্য জার্মানির কোম্পানি ওলডেনডরফ এর সঙ্গে পৃথক চুক্তি করছে বিসিপিসিএল। ওই চুক্তিটির মেয়াদ পাঁচ বছর। ওলডেনডরফ বিশ^ব্যাপী বাল্ক শিপিং এ পরিচিত নাম। পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শাহ আবদুুল মাওলা বলেন, এখন খনি থেকে সরাসরি কেন্দ্র পর্যন্ত ৫৫ হাজার টনের জাহাজে ২৬ হাজার টন করে কয়লা আনা হবে। এজন্য পায়রা চ্যানেলের ৬ মিটার ড্রাফট দরকার। যার কোথাও কোথাও তা ছিল না। আমরা নিজস্ব উদ্যোগে সেই খনন কাজ করছি। এরপর পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করেছে ২০২১ সালে তারা নয় মিটার ড্রাফট সৃষ্টি করতে পারতে পারবে তখন এক লাখ ৬০ হাজার টনের জাহাজ আনা যাবে। প্রসঙ্গত রাষ্ট্রীয় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের সিএমসি পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। এখানে বাংলাদেশ সরকার এবং চীনের সমান অংশীদারিত্ব রয়েছে কেন্দ্রটিতে। পায়রায় বন্দরকে ঘিরে বিশদ বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এখানে বিসিপিসিএল ছাড়াও রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল), আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন আরও দুটি বড় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। তবে এখনও কয়লা খালাস করার মতো কোন অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। এখনও বন্দর কয়লা আমদানির জন্য বন্দরের ড্রাফটও নিশ্চিত করতে পারেনি। বলা হচ্ছে এখনও দেশে কোথাও কয়লা খালাস করার মতো কোন অবকাঠামো নেই। মাতারবাড়িতে একটি কয়লা বন্দর নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্দরটি নির্মাণ করা হলে এখানেই ট্রান্সশিপমেন্ট কর যাবে। এখন আন্দামানের ওপর নির্ভর করা হচ্ছে।
×