ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রূপপুরে বালিশ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলী ছাত্রদল করতো

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ১৭ জুন ২০১৯

রূপপুরে বালিশ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলী ছাত্রদল করতো

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতীয় সংসদে সোমবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ১৫ হাজার ১৬৬ কোটি ১৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট পাস হয়েছে। নির্দিষ্টকরণ (সম্পুরক) বিল ২০১৯ নামের বিলটি কণ্ঠভোটে সংসদে গৃহিত হওয়ার মধ্যদিয়ে এই বাজেট পাস হয়। অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে সম্পূরক বাজেট পাসের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এ সময় তিনি নির্দিষ্টকরণ (সম্পুরক) বিল ২০১৯ সংসদে উত্থাপন করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এর আগে গণপূর্ত মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে মঞ্জুরি দাবি নিষ্পত্তি করতে গিয়ে রূপপুর বিদ্যুত প্রকল্পের বালিশ দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জন্ম থেকে দুর্নীতি বিএনপির চরিত্রেই আছে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুতকেন্দ্র প্রকল্পের বালিশ দুর্নীতির সঙ্গে যে প্রকৌশলী জড়িত সে ছাত্রদল করতো। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ছাত্রদলের নির্বাচিত ভিপিও ছিল। আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে সম্পুরক বাজেটের অর্থ অনুমোদনের জন্য ৩৪টি মঞ্জুরি দাবি উত্থাপন করা হয়। এসব দাবির মধ্যে ৪টি দাবির ওপর আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। এগুলো হচ্ছে- জননিরাপত্তা বিভাগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বাকি মঞ্জুরি দাবিগুলো সরাসরি ভোটে অনুমাদন করা হয়। অবশ্য সব ছাঁটাই প্রস্তাবগুলোই কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পুরক) বিল-২০১৯’ উত্থাপন করলে তা কন্ঠভোটে পাস হয়। বাংলাদেশের সংসদীয় ইতিহাসে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পুরক বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। অবশ্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কমালের অসুস্থতার কারণেই এটি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য সম্পুরক বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ ছাড়াও কয়েকজন মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তাদের ছাটাই প্রস্তাবও সংসদে উত্থাপন করেন। জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় সদস্যারা ৩৪টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে মোট ২১৭টি ছাটাই প্রস্তাব আনেন। এগুলোর ওপর আলোচনা করেন জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান, লিয়াকত হোসেন খোকা, বেগম রওশন আরা মান্নান, রুস্তম আলী ফরাজী, ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশিদ, বিএনপির হারুনুর রশীদ ও গণফোরামের মোকাব্বির খান। তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমালোচনার পাশাপাশি সম্পুরক বাজেট বরাদ্দ না দেওয়ার দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী যা বলেন ॥ সোমবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ সম্পূরক বাজেটে অর্থবছরের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় খাতে দাবির বিষয়ে সংসদ সদস্যদের ছাটাই প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর অনুপুস্থিতিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের অর্থের অধিক অর্থ প্রদান দাবিটিও তিনি উপস্থাপন করেন। সংসদ সদস্যদের ছাটাই প্রস্তাবের বক্তব্য শেষে মন্ত্রীর পক্ষে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কারণে সম্পূরক অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে সেটা হলো ঐতিহাসিক ভবন, সরকারি ভবন সংরক্ষণ, কুড়িলে ১শ ফুট খাল খনন হচ্ছে। শেষ হলে বহুমুখী-চমৎকার রাস্তা করা হবে। সরকারি কর্মচারীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য এই বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বালিক দুর্নীতির প্রসঙ্গে বলেন, এখানে রূপপুর পারমানবিক বালিশ নিয়ে কথা বলা হয়েছে। বালিশ নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে। যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তার কিছু পরিচয় পেয়েছি। এক সময়ে তিনি বুয়েট ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। জন্ম থেকেই দুর্নীতি তাদের চরিত্রে আছে। এর কারণ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালেল ১৫ আগস্ট মোস্তাকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত। পরে অবৈধ ভাবে রাষ্ট্রপতি সায়েমকে সরিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ক্ষমতায় এসেই বলেছিলেন, মানি ইস নো প্রবলেম। এদের চরিত্রই হচ্ছে দুর্নীতি। তাই আমি বলতে চাই, বালিশ নিয়ে আন্দোলন দেখেছি। এত বালিশ কোথা থেকে এলো। কারা সাপ্লাই দিলো। আমি বলতে পারি যখনই যে অভিযোগ পাচ্ছি, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এমপিদের একাধিকবার প্লট দাবি প্রসঙ্গে দাবি করা হয়েছে, যতবার এমপি হবে, ততবার প্লট বরাদ্দ দিতে হবে। আমি ৭ বারের এমপি, কিন্তু একবারও প্লট পাইনি। একবারই একটি বুলেট প্রুফ গাড়ি কিনে দিয়েছিল আমার দল। দল সেদিন এই গাড়িটি কিনে দিয়েছিল বলেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম। কাজেই প্রতিবার প্লট পেতে হবে এটা ঠিক না। আবার স্বামী এমপি হলে প্লট পাবে, স্ত্রী এমপি হলে প্লট পাবে। এটা ঠিক না। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দীর্ঘদিন যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। তারা জঞ্জাল ছড়িয়ে রেখে গেছে। আমরা সেগুলো ঠিক করছি। দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো ভুয়া প্রমান হয়েছে। বনানীর ভবন অগ্নিকান্ডের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এই ভবনের মালিক কিন্তু বিএনপি ঘরানার লোক। অবৈধ ভাবে যে তিনতলা করা হয়েছে। সেটাও বিএনপির আমলে করা। রাজধানীর লেকগুলো প্রথমে জিয়া, তারপর এরশাদ ও খালেদা জিয়া ভরাট করে। ঢাকা একটি পুরোনো শহর। ঢাকাকে তিলোত্তমা শহর করে দেওয়া সম্ভব না। তারপরেও যতটুকু সম্ভব আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আরেকজন সংসদ সদস্য বললেন সুশাসনের অভাব। নবগঠিত দল (গণফোরাম) আওয়ামী লীগ ভেঙে করা হয়েছিল। উনাদের নেতা আওয়ামী লীগই করতেন। উনাদের দলে কি ডিসিপ্লন আছে। কিছু বললেই বলে খামোস। তার কাছে কি আশা করা যায়। জননিরাপত্তা বিভাগ ॥ জননিরাপত্তা বিভাগে ৬৭৪ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের বিরোধীতা করে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা বলেন, মন্ত্রী ১৪ চলমান প্রকল্প ও ১৪টি নতুন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ চেয়েছেন। জননিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ দিতে হবে। কিন্তু এখনো ধর্ষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন চলছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় আছে। আরো খরচ করে হলেও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে। জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাস ও মাদক দমনসহ নানা ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছি। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি-সন্ত্রাসের দেশ হিসেবে আমরা পরিচিত হচ্ছিলাম। সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। তিন আরো বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। হত্যা-ধর্ষণসহ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের তারা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এই কাজটি আরো ভালোভাবে করতে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ॥ আবাসন সংকট নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ নেই উল্লেখ করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে এক হাজার ১৮২ কোটি ৯৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দে আপত্তি জানান বিরোধী দলীয় সদস্যরা। তারা বলেন, মন্ত্রীটি দুর্নীতিগ্রস্থ অবস্থায় রয়েছে। রূপপুরে বালিশ কিনে এই মন্ত্রণালয় তার রূপ প্রকাশ করেছে। এখানে অতিরিক্ত বরাদ্দ দিলে তা দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট হবে। তারা বলেন, ঢাকা শহর বসবাসের অনুপোযোগী হয়েছে। আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। জবাবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখানে পারমানিক কেন্দ্রে বালিশ কেনা নিয়ে কথা উঠেছে। কিন্তু যিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন তার কিছু পরিচয় পেয়েছি। তিনি বুয়েটে ছাত্রদল করতেন এবং নির্বাচিত ভিপিও ছিলেন। তাকে ইতোমধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ওই বালিশটি কি বালিশ? তুলা, ঝুট, সিনথেটিক না অন্যকিছুর বালিশ। সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তারপরও আমি এবিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি আরো বলেন, পচাত্তরের পর থেকে দুর্নীতি শুরু হয়েছে। যা এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমি এই দুর্নীতি নির্মূলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রুণালয় ॥ স্থানীয় সরকার বিভাগের এক হাজার ৫৪২ কোটি ৮৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের বিরোধীতা করে ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপনকারী এমপিরা বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপুর্ণ একটি মন্ত্রণালয় এটা। কিন্তু উন্নয়নে সমতা নেই। কাজের মান ভালো হয় না। প্রকল্প কর্মকর্তারা দুর্নীতি জড়িয়ে পড়েন। এবিষয়ে সতর্ক হতে হবে। তারা আরো বলেন, স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। স্থানীয় নির্বাচনকে ঘিরে শত শত আওয়ামী লীগের নেতা মারা গেছে। অতিরিক্ত বরাদ্দের আগে স্থানীয় সরকারগুলোতে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে। জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, এটা একটি উন্নয়নমুখি প্রতিষ্ঠান। এই বিভাগের কাজ দেশব্যাপী অবকাঠামো উন্নয়ন। তাই এ মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ বেশী হলেও অসংখ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হয়। কোন প্রকল্পে যে অনিয়ম নেই, তা নয়। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, সংসদ সদস্যদের উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। তাদের স্থানীয় উন্নয়নে নিবিড় ভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সকলের প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তাই দেশের জনগণ ও জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ॥ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সবচেয়ে কম ৮৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা বরাদ্দ চাইলেও তার বিরোধীতা করেছন বিরোধী দলীয় সদস্যরা। তারা বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে দেশের উন্নয়ন হয়। কিন্তু প্রবাসীরা যখন দেশে ফিরে তখন এয়ারপোর্টে নানা হয়রানির স্বীকার হতে হয়। প্রবাসীদের লাশ দেশে আনা নিয়েও নানা জটিলতায় পড়তে হয়। অনেককে বিদেশে কর্মস্থলে সংকটে পড়তে হয়। প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী। তারা প্রবাসীদের বিনিয়োগের জন্য উপজেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার দাবি জানান। জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে সরকার প্রবাসীদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের বিনিয়োগের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রবাসীরা অনেক সময় সমস্যায় পড়লেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানতে পারেন না। এবিষয়ে সচেতনতার উদ্যোগ নিয়েছি। এ সকল কাজের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ মোটেও অযৌক্তিক নয়। তাই আপত্তি প্রত্যাহার করে সম্পুরক বরাদ্দের প্রস্তাব পাসের আহ্বান জানান তিনি। এই বাজেট পাসের মধ্য দিয়ে সংসদ ৩৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অতিরিক্ত ১৫ হাজার ১৬৬ কোটি ১৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয় করার অনুমতি দিয়েছে। এরমধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সম্পুরক বাজেটের আওতায় ৩৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সর্বাধিক দুই হাজার ৪৪৭ কোটি ৮৮ লাখ ২৩ হাজার টাকা নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়কে বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরপরই রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৬০৪ কোটি ৬৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। এছাড়া এক হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে- স্থানীয় সরকার বিভাগ খাতে এক হাজার ৫৪২ কোটি ৮৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগ এক হাজার ২৭৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এক হাজার ১৮২ কোটি ৯৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সম্পুরক বাজেটে সবচেয়ে কম ৮৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা বরাদ্দ অনুমোদন পেয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১৭ কোটি ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ ৮ কোটি ৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ৩৩ কোটি ৭২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২২৯ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা, সরকারী কর্ম কমিশন ৪৬ কোটি ৯৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় দুই কোটি ৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৪২৮ কোটি ৪ লাখ ৭ হাজার টাকা, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ১৪১ কোটি ৮৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৫১ কোটি ৬৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, আইন ও বিচার বিভাগ ৫৪ কোটি ১২ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, জননিরাপত্তা বিভাগ ৬৭৪ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ দুই কোটি ৮৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৯৭২ কোটি ৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১৯০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৪৪ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১১৫ কোটি ৯৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩২৬ কোটি ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২১ কোটি ৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ৫৭ কোটি ৫৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয় ২২০ কোটি ৯৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ৮৭৬ কোটি ১৬ লাখ ১১ হাজার টাকা, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৩০৫ কোটি ৪৩ লাখ তিন হাজার টাকা, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ৬৯ কোটি ৩৭ লাখ ৭ হাজার টাকা, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৫৮৬ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৫৯ কোটি ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ৬৭৭ কোটি ৭৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৫১ কোটি ৫৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, দুনীতি দমন কমিশন ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ ৫৫ কোটি ২৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগ ৬৭৪ কোটি ৭১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারেনি তাদের হ্রাসকৃত বরাদ্দের জন্য সংসদের অনুমতির কোন প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে কেবলমাত্র তাদের বরাদ্দই সংসদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এরই প্রেক্ষিত্রে সংসদে এই সম্পুরক বাজেট পাস হয়।
×