ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নতুন দশ উদ্যোগ ॥ বৈচিত্র্যময় বাজেট

প্রকাশিত: ১০:৫২, ১৮ জুন ২০১৯

নতুন দশ উদ্যোগ ॥ বৈচিত্র্যময় বাজেট

কাওসার রহমান ॥ নতুন অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেটে অন্তত ১০ নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যা প্রস্তাবিত বাজেটকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। সে সঙ্গে রাজনৈতিক ইশতেহারের মূল প্রতিশ্রুতিগুলোও ঠাঁই পেয়েছে শেখ হাসিনার তৃতীয় মেয়াদের সরকারের প্রথম বাজেটেই। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও লক্ষ্যই বাজেটে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। আর এক বছরের বাজেটেই সব সিদ্ধান্ত, সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটাই শুরু হয়েছে এবারের বাজেটে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’জনে মিলে গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন। ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার এই বাজেটে পরিচালন তথা অনুন্নয়ন ব্যয় হবে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় হবে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আকার হচ্ছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এই বাজেট ২০০৫-০৬ অর্থবছরের চেয়ে ৮ গুণ বড়। ফলে এই বৃহৎ বাজেটের জন্য অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যটাও নির্ধারণ করেছেন বড় আকারে। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এই ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস থেকে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা এবং আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেটকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করলে দেখা যায়, সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এক লাখ ৪৩ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা, ভৌত অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা এবং সাধারণ সেবা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এক লাখ ২৩ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাজেটে সামাজিক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যার সরাসরি সুবিধা পাবে এদেশের সাধারণ মানুষ। আর দেশের জনসাধারণকে সুবিধা দিতে প্রস্তাবিত বাজেটে অন্তত ১০টি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে বাজেট বাস্তবায়িত হলে এই উদ্যোগগুলোর সরাসরি সুফল পাবে দেশের মানুষ। যা দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বাজেটের ১০টি উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে, ১. শিক্ষাখাতের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার ঘোষণা। এক্ষেত্রে জাপানের স¤্রাট মেইজির দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা হতে পারে। ২. শ্রমিক শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ। ৩. আগামী ১১ বছরের (২০৩০ সাল) মধ্যে দেশে ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এর মাধ্যমে বেকারত্বের অবসান ঘটানোর চেষ্টা। ৪. যুবক উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা। ৫. সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে এবং পরিবহন খাতের উন্নয়নে ১ লাখ দক্ষ পেশাদার গাড়িচালক তৈরির বিশেষ কার্যক্রম হাতে নেয়া। ৬. যেসব এলাকা নদীভাঙ্গন কবলিত ওইসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ। ৭. নারীদের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে নারী করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা করা। ৮. যে কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট জনবলের ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী অগ্রাধিকার দেয়া। প্রতিবন্ধীদের এই সুবিধা দিলে সেই প্রতিষ্ঠানকে করের ৫ শতাংশ রেয়াত দেয়া। ৯. নারী উদ্যোক্তারা ব্যবসা পরিচালনার জন্য শোরুম করলে শোরুম নির্মাণের ওপর মূসক অব্যাহতি প্রদান এবং ১০. বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে জনসাধারণের প্রতিরক্ষার জন্য লাইটিং সিস্টেম স্থাপন করা। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক সরকারের বাজেটে তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও লক্ষ্যগুলোই বাজেটে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। হিসাবে প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী ইশতেহারের মূল বিষয়গুলোরই প্রতিফলন ঘটেছে। এটা বাজেটের বড় ইতিবাচক দিক।’ তিনি বলেন, সমৃদ্ধি অর্জন করতে হলে গরিব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে। সেটাই করা হয়েছে বাজেটের ‘আমার গ্রাম আমার শহর কর্মসূচীতে’। এর মাধ্যমে গ্রামের রাস্তাঘাট উন্নয়ন করা হবে, ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেয়া হবে। এতে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন হবে। দেশে এখন সাড়ে ৫ কোটি তরুণ। এদের কাজে লাগানো না গেলে উন্নয়নের মহাসড়কে বেশি দ্রুত এগুনো যাবে না। তাই এই তারুণ্যকে কাজে লাগাতে তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য একশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে আশার কথা হলো, এবার যোগাযোগ, শিক্ষা, কৃষি ও প্রযুক্তিতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এই বরাদ্দ মানসম্পন্ন শিক্ষা ও প্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে সাহায্য করবে। এছাড়া জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলায় বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। দেশের দ্রুত প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধনী-গরিদের মধ্যে বৈষম্য বেড়ে চলেছে। এ নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। আবার অনেকেই সমালোচনা করছেন প্রস্তাবিত বাজেটে বৈষম্য কমানোর দিকে নজর দেয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলছেন, ‘বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক ইশতেহারে যেমন বৈষম্য কমানোর কথা বলা আছে, তেমনি প্রস্তাবিত বাজেটেও বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ আছে। বাজেটে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তাদের আয় বাড়িয়ে বৈষম্য কমাতে সাহায্য করবে। এ উদ্যোগের ফলে বলা যায়, অন্তত বৈষম্য না কমলেও আর বাড়বে না। আর আগামী বাজেটেও এ ধারা অব্যাহত থাকলে বৈষম্য ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে।’ তিনি আরও বলেন, এখানে বুঝতে হবে, বাজেট ঘোষণা করা হয় এক বছরের জন্য। আর এক বছরে সব কিছু করে ফেলা সম্ভব নয়। এটি একটি ধারাবাহিক ব্যবস্থা। আর অর্থনৈতিক উন্নয়নটা যেমন ক্রমান্বয়ে হয়, তেমনি সামাজিক উন্নয়নটাও পর্যায়ক্রমে হয়ে থাকে। এখানে এক বছরে রাতারাতি কোন সমস্যার সমাধান করে ফেলা সম্ভব নয়। বর্তমান সময়ে দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। কয়েক বছর ধরেই ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলায় ছিল খেলাপীঋণসহ বিভিন্ন অনিয়ম। মূলত অর্থ জালিয়াতিই প্রধান আলোচনার বিষয় হওয়ায় বারবার বিভিন্ন মহল থেকে পরামর্শ আসছিল আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক কমিশন গঠনের। জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন মহলের সমালোচনার পর নড়েচড়ে বসে সরকার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও বলা হয়েছে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে গঠন করা হবে ‘ব্যাংক কমিশন’। ব্যাংকিং খাতের সংস্কার ও কমিশন গঠনের আলোচনা অনেক পুরনো হওয়ায় আশ্বাস আর প্রত্যাশার মধ্যে না রেখে এমন প্রস্তাবের দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চান অর্থনীতিবিদরা। এক্ষেত্রে কমিশনের নীতিমালা ও সদস্য কারা হবেন তাও স্পষ্ট করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। উপযুক্ত দক্ষ নিরপেক্ষ লোক দিয়ে যেন কমিশনটা করা হয়। আবার পর্যালোচনা করে দেখা উচিত অতীতে বিভিন্ন ব্যাংকিং কমিশন বা যে সমস্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেগুলো কতটা ফলদায়ক হয়েছে এবং যে পরিস্থিতিতে এই কমিটিগুলো করা হয়েছিল, তার সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির মিল রয়েছে কিনা। সেই আলোকেই গঠন করা উচিত ব্যাংক সংস্কার কমিশন। এ প্রসঙ্গে খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘বাজেটে শুধু ব্যাংকিং খাত সংস্কারের কথাই বলা হয়নি, ইচ্ছাকৃত খেলাপী হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা উচিত। যাতে তাদের সুপারিশগুলো এই অর্থবছরের মধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু করা যায়।’ তিনি বলেন, ব্যাংকে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। ব্যাংক সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। বরাবরের মতো এবারও বাজেটের প্রধান চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন। প্রতিবছরই বাজেটের আকার বাড়ছে। কিন্তু বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে না। আবার বছরের শেষ দিকে এসে তাড়াহুড়া করে অর্থ ব্যয়ের হিড়িক পড়ে যায়। এতে প্রকল্পের গুণগম মান নিশ্চিত করা যায় না। অর্থনীতিবিদরা এ সংস্কৃতির অবসান চান। এ প্রসঙ্গে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘বাজেটের প্রধান সমস্যা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়াটা। বছরের প্রথম দিকে কাজ হয় না। শেষ দিকে এসে তাড়াহুড়া করে কাজ করা হয়। এই সংস্কৃতির অবসান হওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, প্রকল্প দীর্ঘায়িত হলে খরচ বেড়ে যায়। এটা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আর বাজেট বাস্তবায়ন হলে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও অর্জিত হবে। গত কয়েক বছর ধরেই মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আছে। ফলে আগামী অর্থবছরও মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে ভূমিকা রাখতে হবে। মূলত বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়ার একটি অন্যতম অন্তরায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় না হওয়া। এ কারণে বাজেট বাস্তবায়নও কঠিন হয়ে পড়ে। জিডিপির তুলনায় আমাদের ট্যাক্স প্রদানের অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন একটি। এ প্রসঙ্গে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ ট্যাক্স দিতে চায় না। উল্টো প্রণোদনা চায়।’ তিনি বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। তবে এবার নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আয় বাড়বে। ফলে বাজেটের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হবে। তবে আয়কর দাতার সংখ্যা এক কোটিতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীকে সচেষ্ট হতে হবে। লক্ষ্য নির্ধারণ করে ছেড়ে দিলে হবে না। আয়করের আওতা বাড়াতে হবে সত্যিকার অর্থে।’ কৃষিখাতে বরাদ্দ বেড়েছে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে। প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব রেখে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। তবে কৃষিপণ্য কেনার ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিয়ে মূল্য কমিশনের মতো কার্যকরী কোন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ না থাকায় হতাশ হয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা। জলবায়ুর পরিবর্তন আর প্রতিকূল আবহাওয়া কৃষিতে প্রভাব ফেলেছে ব্যাপক। যার ফলে নিয়মিত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কৃষককে। এর মধ্যেও গেল এক দশকে কৃষিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তিন দশমিক সাত শতাংশ। এ ক্ষেত্রে কৃষিতে ভর্তুকি বড় ভূমিকা রাখায় এবারের বাজেটেও রাখা হয়েছে বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি। কৃষিখাতে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি শস্যের বহুমুখীকরণ, খামার যান্ত্রিকীকরণ, তাপমাত্রা সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবনে নানা প্রতিশ্রুতির কথা উঠে এসেছে বাজেট বক্তৃতায়। যাকে কৃষিতে সরকারের সুনজরের প্রতিফল বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেন, ‘এখনও অর্থনীতির চালিকাশক্তি কৃষি খাত। মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ এখনও কৃষি থেকেই আসছে। ফলে সরকার এদিকে সঠিক মনোযোগই দিয়েছে। বরাদ্দ ও ভর্তূকি বাড়ানো হয়েছে। কৃষি পণ্য রফতানি ও সেচে বিদ্যুতে রেয়াতের সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে। যন্ত্রপাতি কেনায় প্রণোদনাও দেয়া হবে। গবেষণায় টাকা বাড়ানো হয়েছে। তবে কৃষি বিজ্ঞানীরা অনেক জাত উদ্ভাবন করেছেন। কিন্তু সেগুলো মাঠে যাচ্ছে না। এগুলোকে মাঠে নিয়ে যেতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যাতে উৎপাদন বাড়ে এবং তা ধরে রাখা যায় তার পদক্ষেপ নিতে হবে। গত কয়েক মাসে ধানের দাম নিয়ে সারাদেশ তোলপাড় হলেও কৃষিপণ্য কেনায় কোনও দিকনির্দেশনা না থাকায় হতাশ হয়েছেন অনেকেই। এ প্রসঙ্গে একুশে ও স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ধানের মূল্যের বিষয়ে দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে মূল্য কমিশনই একমাত্র সমাধান। এই কমিশন উৎপাদন, আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ধানের দাম কত হওয়া উচিত তা সুপারিশ করবে। আবার দাম পাওয়ার জন্য কৃষক যাতে ধান ধরে রাখতে পারে তারও ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সহজ শর্তে ঋণ ও গুদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
×