ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসিকে কায়রোতে দাফন

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৮ জুন ২০১৯

মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসিকে কায়রোতে দাফন

অনলাইন ডেস্ক ॥ আদালতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার কয়েক ঘণ্টা পর মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে কায়রোতে দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার পূর্ব কায়রোতে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতেই সাবেক এ মুসলিম ব্রাদারহুড নেতার দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে তারা আইনজীবীরা জানিয়েছেন। ২০১৩ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে মুরসি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন। সোমবার এক মামলার শুনানিতে আদালত কক্ষেই অচেতন হয়ে পড়েন ৬৭ বছর বয়সী এ সাবেক প্রেসিডেন্ট। কর্তৃপক্ষ পরে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলে জানিয়েছে বিবিসি। মুরসির নির্জন কারাবাস এবং পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে তাকে দেখা করতে না দেওয়ার সমালোচনা করে আসা মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ মৃত্যুর ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে। তার পরিবার ও সমর্থকরা আগে থেকেই মুরসির স্বাস্থ্য এবং তাকে দীর্ঘ সময় ধরে নির্জন প্রকোষ্ঠে আটকে রাখা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিল। পরিবারের সদস্যরা মুরসির শেষকৃত্য তার নিজশহরে আয়োজন করতে চাইলেও মিশরের কর্তৃপক্ষ তাতে সম্মতি দেয়নি বলে সোমবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন সাবেক এ প্রেসিডেন্টের ছেলে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ মুরসি। ১৯৫১ সালে আল-আদওয়াহ গ্রামে জন্ম নেওয়া মুরসি গত শতকের ৭০-এর দশকে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিষয়ে পড়েন; পরে পিএইচডি করতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। মিশরে বর্তমানে নিষিদ্ধ মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষ নেতা মুরসি ২০১২ সালে মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার শাসনামলে দমনপীড়ন ও অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ দানা বাধে। মুরসির শপথ গ্রহণের বছরপূর্তিতে মিশরজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ দেখা দেয়। এর তিনদিন পর সেনাবাহিনী মিশরের সংবিধান স্থগিত করে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। সাবেক সেনাপ্রধান আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি পরের বছর ক্ষমতায় বসেন। গত বছরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সিসি ফের ক্ষমতায় বসলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ওই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছে। মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সেনাবাহিনীর চালানো দমনাভিযানে কয়েকশ মানুষের মৃত্যু হয়; গ্রেফতার করা হয় তার লাখ লাখ সমর্থক ও অন্যান্য আন্দোলনকারীদের। ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থি দল হামাসের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার সন্দেহে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে সোমবার কায়রোর আদালতে মুরসির শুনানি চলছিল বলে জানিয়েছে মিশরের রাষ্ট্রীয়টেলিভিশন। সাবেক এ প্রেসিডেন্টকে অন্যান্য সন্দেহভাজনদের সঙ্গে একটি কাঁচ দিয়ে ঘেরা খাঁচায় রাখা হয়েছিল। শুনানির এক পর্যায়ে তাকে জুরিদের সামনে আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু বলতে বলা হয়। মিনিট পাঁচেক বলার পর শুনানির বিরতিতে মুরসি অচেতন হয়ে পড়েন। “তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়,” এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন মিশরের সরকারি কৌঁসুলি। ময়নাতদন্তে সাবেক এ প্রেসিডেন্টের শরীরে নতুন ও দৃশ্যমান কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এর আগে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হৃদরোগের কারণে মুরসির মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। সোমবার শুনানিতে আসা মুরসি অন্য তিন মামলায় কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন। বিচারে একবার তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হলেও পরে তা বদলানো হয়। মুরসির মৃত্যুর জন্য সিসি সরকারের দুর্ব্যবহার, দীর্ঘদিন ধরে সাবেক প্রেসিডেন্টকে নির্জন কারাপ্রকোষ্ঠে রাখা, অপর্যাপ্ত চিকিৎসা এবং পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে কালেভদ্রে দেখারকরার সুযোগকে দায়ী করেছেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক সারাহ লেহ হুইটসন।
×