ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকিতে পরিবেশ

দূষণ ও দখলের কবলে বালু নদী

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ১৯ জুন ২০১৯

দূষণ ও দখলের কবলে বালু নদী

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ১৮ জুন ॥ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকা থেকে শুরু হওয়া বালু নদী এখন দূষণ ও দখলের কবলে পড়েছে। একশ্রেণীর প্রভাবশালী নদী দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে নদীর প্রশস্থতা কমে এনেছে। বিষাক্ত বর্জ্য ফেলে নদী দূষণ করছে তারা। ওই শ্রেণীর প্রভাবশালীরা এখনও দখল ও দূষণ অব্যাহত রেখেছে। শুধু তাই নয়, এ নদীর শাখা-প্রশাখাগুলো উৎসে পানির সঙ্কট, দখল, দূষণ ও নাব্য সঙ্কটে ভুগছে। দূষণের কারণে নদীর পানিতে পচা গন্ধে পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। দূষণের ফলে জলজ পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ছে। এতে করে মৎস্য সম্পদ বিনষ্ট হয়ে গেছে। গত শনি ও রবিবার দু’দিনব্যাপী বালু নদী পরিদর্শন করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনসহ একটি প্রতিনিধি দল। নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান হাওলাদারের নেতৃত্বে পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের উপসচিব শাহাদাত হোসেন, ঢাকা জেলার এডিসি (রেভিনিউ) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাফ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল মতিন, রাজউকের অথরাইজড অফিসার মাকিদ এহসান, বিআইডব্লিউটিএর ট্রেসার আব্দুল হাই, কালীগঞ্জ উপজেলার ইউএনও শিবলি সাদিক, রূপগঞ্জের এসিল্যান্ড তরিকুল ইসলাম, তেজগাঁও সার্কেলের এসিল্যান্ড এবিএম কুদরত ই খুদাসহ রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের একটি প্রতিনিধিদলসহবিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা। পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, ৫৪ স্থানে দখল ও ২৩ স্থানে দূষণ করছে প্রভাবশালীরা। নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, যে কোন শূল্যে নদী বাঁচাতে হবে। নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। নদী না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। যারা নদী দখল ও দূষণ করেছেন, তারা যে ব্যক্তি, যে গোষ্ঠী, যে রাজনৈতিক দল বা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন কোন ছাড় দেয়া হবে না। আমরা সিএস রেকর্ড দেখে সীমানা নির্ধারণ করে নদী দখলমুক্ত কার্যক্রম শুরু করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে শীঘ্রই দখল ও দূষণমুক্ত করে নদীকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। তাই সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন তিনি। জানা গেছে, ৫৪ স্থানে দখল, ২৩ স্থানে দূষণ, ৩ স্থানে ডুবোচর, ৩ স্থানে প্রায় ২৫০০ মিটার ভাঙ্গন ও ৩০টি ব্রিজ আছে। প্রায় ৪০টি খাল ও ছোট-বড় মিলিয়ে ৭টি বিলের নদীর সরাসরি সংযোগ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পুবাইল মৌজার সরকারী মেডিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, নদীর জমিতে ভবন নির্মাণ ও বর্জ্য সরাসরি নির্গত করছে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমির বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে নদীর জমি দখল করে। মান্নান ব্রিকফিল্ড দখলে রেখেছে নদীর জমি। এএনডি ট্রাউজার ফ্যাক্টরির বর্জ্য, আবর্জনার স্তূপ ও ময়লার পাইপ সরাসরি নদীতে ফেলছে। টঙ্গী সার্কেলে বাবু গার্মেন্টস, আজমেরি গার্মেন্টস, নীলা কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি, এলইডি স্টার ফ্যাক্টরির বর্জ্যও সরাসরি বালু নদীতে ফেলা হচ্ছে। কোন প্রকার ইটিভি প্ল্যান ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠান এসব দূষণ করছে। রূপগঞ্জ ইউনিয়নের পর্শি এলাকায় ক্রাউন সিমেন্ট ফ্যাক্টরির বর্জ্য ও ময়লার স্তূপ বালু নদীতে ফেলা হচ্ছে। বালু নদীর দুই পারে বসবাসরত জনগণও বর্জ্য ও ময়লা সরাসরি ফেলছে। এ ধরনের অভিযোগের শেষ নেই। ঢাকা জেলার এডিসি (রেভিনিউ) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নির্দেশনা পেলে বালু নদীর দুই পাশে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করব।
×