ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুষ্টিয়ায় ২২ দোকানসহ দোতলা মার্কেট গুঁড়িয়ে দিল প্রভাবশালী

প্রকাশিত: ০৯:১০, ১৯ জুন ২০১৯

কুষ্টিয়ায় ২২ দোকানসহ দোতলা মার্কেট গুঁড়িয়ে দিল প্রভাবশালী

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া, ১৮ জুন ॥ কুষ্টিয়ায় বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই দোতলা মার্কেটের ২২ দোকান ঘর অবৈধভাবে এস্কেভেটর ও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৯ শতাংশ জমি জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক শিল্পপতির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই শিল্পপতি এবং কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ সুপারকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের বিচারক রেজাউল করিম। আগামী ২৫ জুন মামলাটির পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। মামলার বাদী হচ্ছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিশংকরপুর এলাকার রাকিবুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে ঠাকুরগাঁ চিনিকলের (কারখানা) জিএম। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক সংলগ্ন পৌর এলাকার অন্তর্গত বটতৈল মৌজায় শহরের হরিশংকরপুর এলাকার মৃত আনোয়ার আলীর ছেলে মামলার বাদী রাকিবুল ইসলাম ৯ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে ওই সম্পত্তির ওপর তিনি কোন রকম বাধা-বিপত্তি ছাড়াই ২২ দোকানসহ পাকা দোতলা মার্কেট নির্মাণ করেন। এ মার্কেটের ঠিক পেছনেই রয়েছে কেএনবি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠান। কেএনবি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির মালিক কামরুজ্জামান নাসিরের নজর পড়ে ওই মার্কেটের সম্পত্তির ওপর। তিনি মার্কেটের পুরো সম্পত্তি কিনে নেয়ার জন্য জমির মালিককে প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু সম্পত্তি বিক্রির প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শিল্পপতি নাসির নানা অপকৌশল, দাপট ও টাকা ছিটিয়ে মার্কেটের সম্পত্তি দখল নিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এরই মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন মার্কেটের ওই সম্পত্তির আরেক দাবিদার জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ মালিকানা দাবি করে কুষ্টিয়ার যুগ্ম-জেলা জজ প্রথম আদালতে একটি মামলা করেন। এদিকে মামলাটি চলমান থাকা অবস্থায় গত ৩ জুন (২০১৯) কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ব্যক্তি মালিকানাধীন ওই মার্কেটের ৯ শতাংশ জমি বেআইনীভাবে কেএনবি এ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মালিক কামরুজ্জামান নাসিরকে ইজারা প্রদান করে। এরপর কোনরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শুধু লিজ ও ক্ষমতাবলে আলোচিত ওই শিল্পপতি গত ১০ জুন বিকেলে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে বটতৈলে অবস্থিত ২২ দোকানঘরসহ ব্যক্তি মালিকানধীন দোতলা ওই মার্কেটটি কোন কর্তৃপক্ষের নোটিসে ছাড়া কয়েকশ’ মানুষের উপস্থিতিতে এস্কেভেটর-বুলডোজার চালিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মাটিতে মিশিয়ে দেয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কের পাশের ওই জায়গাটি বর্তমানে কেএনবি কর্তৃপক্ষ টিন দিয়ে ঘিরে ও প্রতিষ্ঠানের ২৫/৩০ ট্রাক রেখে দখল করে রেখেছে। আদালতে বিচারাধীন মামলার বিচারিক কার্যক্রম নিষ্পত্তির পূূর্বেই মার্কেট ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়ার এ ঘটনায় গত ১২ জুন বুধবার রাকিবুল ইসলাম বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ মামলার আসামি করা হয়েছে পাঁচ জনকে। এরা হলেন পোল্ট্রি ও হ্যাচারী ফিড কারখানা (কেএনবি) মালিক কামরুজ্জামান নাসির, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সী মোঃ মনিরুজ্জামান, সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল আজম, সার্ভেয়ার মনিরুজ্জামান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহিনুজ্জামান শাহিন। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের বিচারক রেজাউল করিম মামলাটি আমলে নিয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে আগামী ২৫ জুন। এ বিষয়ে কেএনবি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির মালিক কামরুজ্জামান নাসির জানান, বিধিমোতাবেক জেলা পরিষদের কাছ থেকে তিনি মার্কেটের সম্পত্তি ইজারা গ্রহণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে মার্কেট ভেঙ্গে জমি জবর দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবি করেন। মার্কেটটি কারা ভেঙ্গেছে তাও তিনি জানেন না বলে জানান। অপরদিকে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের বক্তব্য মতে, ওই জমি নিয়ে জেলা পরিষদ আদালতে মামলা করেছে (মামলা নং দেং ৬/২০১৬) এবং মামলাটি চলমান। জেলা পরিষদের সম্পত্তি ভুলক্রমে অন্য নামে রেকর্ডভুক্ত হয়। রাকিবুল ইসলাম জানান, সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ড মতে আমার স্বত্ব দখলীয় জায়গায় জেলা পরিষদের কোন অস্তিত্ব নেই। আমি জমি ও মার্কেটের বৈধ মালিক এবং ওই সম্পত্তির নিয়মিত খাজনা সরকারকে প্রদান করে আসছি। এবিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপসহ সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
×