ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকিং খাত সংস্কারের ব্যাপক উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ১৯ জুন ২০১৯

ব্যাংকিং খাত সংস্কারের ব্যাপক উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নতুন প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকিং খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ব্যাংক কোম্পানি আইন, দেউলিয়া আইন। একই সঙ্গে ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক সক্ষমতা বিষয়ে একটি নতুন আইন করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া অর্থের জোগান বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়ী উপকরণ ও বন্ড বাজারে ছাড়া হবে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোয় তারল্যপ্রবাহ বাড়ানো হবে, কমানো হবে ঋণের সুদের হার। একই সঙ্গে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যারা পরিশোধ করবে না বা ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠার ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, আর্থিক খাতে বিশেষ করে ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা উন্নয়নে সরকার নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এ লক্ষ্যে এবারের বাজেটে ব্যাংকিং কমিশনের কথা বলা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা সুদৃঢ় করতে একটি ব্যাংক কমিশন গঠন করার কথা দীর্ঘদিন ধরে শুনে এসেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। ব্যাংকিং কমিশন গঠনের বিষয়ে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই কমিশন যেসব সুপারিশ করবে সেগুলো যেন সরকার যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে এই কমিশন গঠন করা জরুরী। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাত সংস্কারের জন্য শক্তিশালী কমিশন গঠন করা জরুরি। একই সঙ্গে কমিশন যেসব সুপারিশ করবে, সেগুলোও বাস্তবায়ন করতে হবে। ব্যাংক থেকে কোন ঋণগ্রহীতা ঋণ নিয়ে শোধ করতে ব্যর্থ হলে তার কাছ থেকে ঋণ আদায়ের জন্য তেমন কোন আইনী কাঠামো নেই। একই সঙ্গে পরিস্থিতির কারণে খেলাপী হলে এর বৃত্ত থেকে বের হওয়ার কোনো আইনী প্রক্রিয়াও নেই। এসব ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত খেলাপীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া এবং পরিস্থিতির কারণে যারা খেলাপী হবে, তাদের বের হওয়ার একটি বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে। এই কার্যক্রমটি আইনী প্রক্রিয়ায় সুরাহা করার জন্য একটি কার্যকর আর্থিক সক্ষমতা আইন প্রনয়ন ও দেউলিয়া আইন সংস্কার করা হবে। ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য সরকার বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিয়েও এখনও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এখন সুদের হার কমাতে আইনী কাঠামো তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। এর জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের কথা বলা হয়েছে বাজেটে। এর মাধ্যমে মুদ্রাবাজারে তারল্যপ্রবাহ বাড়িয়ে ঋণের সুদের হার কমানো হবে। তারল্যপ্রবাহ বাড়াতে বাজারে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়ী উপকরণ ও বন্ড ছাড়া হবে। যেটি বর্তমানে মুদ্রাবাজারে নেই। এগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আগে থেকে কিছু কাজ শুরু করেছে। সোমবারও এ নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংক নীরবে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। খেলাপী ঋণের উর্ধগতি ঠেকাতে দেশে উন্নত ঋণ সংস্কৃতি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে যেসব ঋণগ্রহীতা নিয়মিত ঋণ শোধ করবেন, তাদের নানাভাবে পুরস্কৃত করা হবে। আর যারা খেলাপী হবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আইনী কাঠামো করা হবে। যাতে গ্রাহকরা নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধে সক্ষম হন, সে ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে খেলাপী ঋণে লাগামহীন বৃদ্ধি ঠেকাতে বৃহৎ ঋণগুলোকে আরও নিবিড়ভাবে পরিবীক্ষণ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ মনিটরিং ব্যবস্থাকে জোরদার করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি বড় অঙ্কের ঋণ তদারকি ব্যবস্থা ‘সেন্ট্রাল ডাটাবেজ ফর লার্জ ক্রেডিট’ (সিডিএলসি) গঠন করা হয়েছে। এর আওতায় বড় অঙ্কের ঋণগুলোকে নিয়মিতভাবে তদারকি করা হচ্ছে। ফলে বড় অঙ্কের ঋণখেলাপী হওয়ার প্রবণতা ঠেকানো যাবে। কেননা একটি বড় অঙ্কের ঋণখেলাপী হলেই মোট খেলাপী ঋণ ৩ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যায়। বাজেটে আর্থিক খাতের ৬ দফা সংস্কার কর্মসূচীর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের শিল্প ও ব্যবসা খাতকে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অঙ্কের উপরে দেখতে চাই না। এ লক্ষ্যে তারা কাজ শুরু করেছেন। প্রয়োজনে ব্যাংক একীভূতকরণ করা হবে। হোল্ডিং কোম্পানি ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমে সমন্বয় ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হবে।
×