ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫-এর পরিবর্তে জিপিএ-৪;###;পাস নম্বর ৩৩ থেকে বাড়িয়ে ৪০ ;###;আন্তর্জাতিক পর্যায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করাই লক্ষ্য

গ্রেডিং বদলাচ্ছে ॥ সকল পাবলিক পরীক্ষায় ফল মূল্যায়নে পরিবর্তন

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১৯ জুন ২০১৯

গ্রেডিং বদলাচ্ছে ॥ সকল পাবলিক পরীক্ষায় ফল মূল্যায়নে পরিবর্তন

বিভাষ বাড়ৈ ॥ সকল পাবলিক পরীক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায় ও বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার সঙ্গে সমন্বয় করার লক্ষ্যে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এতে পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফলাফলে সর্বোচ্চ গ্রেডিংয়ে পরিবর্তন এবং পাস নম্বর বাড়ানো হবে। এখনও বিষয়টি চূড়ান্ত না হলেও শিক্ষা বোর্ডগুলোর এমন মতামতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং পৃথিবীর উন্নত সকল দেশ ও বিশ^বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতেই পরীক্ষা মূল্যায়নে এ দুটি পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে। এতে সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৪ করা হবে। যুগের পর যুগ ধরে চলা পাস নম্বর ৩৩-এর পরিবর্তে পাস নম্বর ৪০ করার পক্ষে শিক্ষা প্রশাসন। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগে যেখানে একটি বিষয়ে ৮০ থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে পেলে হতো সর্বোচ্চ গ্রেড-৫ সেখানে এখন দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। যার একটি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ এবং অপরটি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০। কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন যে দুুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তার যে কোন একটি হলেও আগের মতো লাখ লাখ সর্বোচ্চ স্কোর আর হবে না। কমে আসবে সর্বোচ্চ গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, সারাবিশ্বে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সিজিপিএ-৪ স্কেলে হয়ে থাকে। আমরাও সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসএসসি লেভেল থেকে জিপিএ-৫ স্কেলের পরিবর্তে তা সিজিপিএ-৪ স্কেলে করার প্রস্তাব রেখেছি। অন্যদিকে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেছেন, বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয় তবে আমরা চাই এ পরিবর্তন হোক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও সকলে এ পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন। আমরা এখন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বৈঠক করব। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ফল পর্যালোচনা করব। কত নম্বর থেকে কত নম্বর পেলে সিজিপিএ-৪ হবে এবং সেটা কিভাবে প্রয়োগ হবে তা আলোচনা করে ঠিক করা হবে। সবার সম্মতি থাকলে চলতি বছরের জেএসসি থেকেই আমরা সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে ফল প্রকাশ করতে চাই। কারণ আমাদের সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ অথচ আন্তর্জাতিক পর্যায় ও দেশের বিশ^বিদ্যালয়েও এ গ্রেড হচ্ছে সিজিপিএ-৪। এতে সমস্যায় পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। জানা গেছে, সকল পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে নম্বর গ্রেড পরিবর্তনের উদ্যোগটি প্রথমত চিন্তা করেছে মূলত শিক্ষাবোর্ড। এ লক্ষ্যে সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে সিজিপিএ-৪ নির্ধারণের জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে আন্তঃ শিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি। এ কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, আমরা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বৈঠক করব। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ফল পর্যালোচনা করব। সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে কীভাবে ফল দেয়া যায় সে বিষয়ে একটি খসড়া শিক্ষামন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করব। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পাবলিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ গ্রেড নির্ধারণ হয় জিপিএ-৫। পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার ফল এই গ্রেড অনুযায়ী দেয়া হয়। আমাদের প্রস্তাব যদি পাস হয় জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে সর্বোচ্চ গ্রেড আন্তর্জাতিক পর্যায় ও দেশের বিশ^বিদ্যালয়ের মতো পাবলিক পরীক্ষাতেও হবে সিজিপিএ-৪। গ্রেড পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করে বোর্ড চেয়ারম্যান আরও বলেন, দেশে পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এর মধ্যে ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে ফল প্রকাশ করা হয়। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশে সব ধরনের ফলই প্রকাশ করা হয় সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে। ফলে এসএসসি আর এইচএসসির ফলের সঙ্গে উচ্চতর শিক্ষার ফলের সমন্বয় করতে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এসএসসি ও এইচএসসির ফলের সঙ্গে উচ্চতর শিক্ষার ফলের সমন্বয় করতে গিয়ে দেশের চাকরিদাতারাও সমস্যায় পড়েন। বিদেশে পড়ালেখা ও চাকরির ক্ষেত্রে পড়তে হয় আরও বড় সমস্যায়। কারণ প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে যাচ্ছে। তাদের এসএসসি ও এইচএসসি সার্টিফিকেটের সমতা করে তারপর বিদেশে যেতে হয়। এতে অনেকে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। সমস্যাটি দূর করা প্রয়োজন। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জনকণ্ঠকে জানান, বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়; হবে, আলোচনা হচ্ছে। আন্তঃ শিক্ষাবোর্ড একটি প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক একটি উদ্যোগ। বিষয়টির ব্যাখ্যা করে বোর্ড সচিব বলেন, ২০০১ সাল থেকে পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেড পদ্ধতি চালু হয়। সেখানে ৮০ থেকে ১০০ নম্বরপ্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট-৫ ধরে আমরা ফল প্রকাশ করে আসছি। এটাই সর্বোচ্চ গ্রেড। কিন্তু এখন এটার পরিবর্তনের কথা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের কথা ভাবা হচ্ছে, যার একটি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ এবং অপরটি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০। আগে ৮০ থেকে ১০০ নম্বর পেলে হতো সর্বোচ্চ গ্রেড ৫। ২০ নম্বরের ব্যবধান ছিল এখানে। ফলে সর্বোচ্চ গ্রেড পেত লাখ লাখ শিক্ষার্থী। এখন যদি ৯০ থেকে ১০০ করা হয় সর্বোচ্চ গ্রেড তাহলে কমে আসবে এমন ফল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা। আর ৯৫ থেকে ১০০ করা হচ্ছে আরও বেশি কমবে সর্বোচ্চ গ্রেডধারীর সংখ্যা। অর্থাৎ একটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায় ও বিশ^বিদ্যালয়ের ফলের সঙ্গে সমন্বয় অন্য একটি প্রভাবের জায়গা হচ্ছে পাবলিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ গ্রেডধারী লাখ লাখ শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়া। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব আরও বলেন, এখন বিদেশে পড়ালেখা ও চাকরির ক্ষেত্রে পড়তে হয় সমস্যায়। বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে গেলে সমস্যাটা হয় আগে তাদের এসএসসি ও এইচএসসি সার্টিফিকেটের সমতা বিধান করতে হয়। তারপর বিদেশে যেতে হয়। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আন্তর্জাতিকভাবেও দেশের ফলাফলের সমতা থাকছে না। তাই এটার পরিবর্তনটা ইতিবাচক। এদিকে পাবলিক পরীক্ষায় পূর্ণমান ১০০’র বিপরীতে পাস নম্বর ৪০ নির্ধারণ করার চিন্তাভাবনা চলছে। যুগের পর যুগ ধরে চলা পাস নম্বর ৩৩-এর পরিবর্তে পাস নম্বর ৪০ করার পক্ষে শিক্ষা প্রশাসনের অনেকেই। বোর্ড চেয়ারম্যানরা বলছেন, গ্রেডিংয়ে পরিবর্তন আনার পক্ষে সকলে একমত হলেও পাস নম্বর পরিবর্তনে সকলে একমত নন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও এ বিষয়টিতে এখনও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে এ প্রস্তাব নিয়েও চলছে আলোচনা। দেশের ১১টি শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানরা এ বিষয়ে কাজ করছেন। আগামী ২৬ জুন শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পেশ করার কথা।
×