ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশের প্রথম লোহার খনি আবিষ্কার দিনাজপুরে

প্রকাশিত: ১১:২১, ১৯ জুন ২০১৯

দেশের প্রথম লোহার খনি আবিষ্কার দিনাজপুরে

বাংলানিউজ ॥ দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ইসবপুর গ্রামে লোহার আকরিকের (ম্যাগনেটাইট) খনি আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর (জিএসবি)। দীর্ঘ ২ মাস ধরে কূপ খনন করে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জিএসবির কর্মকর্তারা। তারা জানান, সেখানে ভূগর্ভের ১ হাজার ৭৫০ ফুট নিচে ৪০০ ফুট পুরুত্বের লোহার একটি স্তর পাওয়া গেছে। যা দেশের জন্য একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং বাংলাদেশে প্রথম আবিষ্কার। পরীক্ষা করা হচ্ছে লোহার উপস্থিতি মঙ্গলবার দুপুরে খনন কাজে নিয়োজিত জিএসবির উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম জানান, বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে লোহার খনি আবিষ্কার করা হয়েছে, সেসব খনির লোহার মান ৫০ শতাংশের নিচে। আর বাংলাদেশের লোহার ৬৫ শতাংশের উপরে। জয়পুরহাট বিসিএসআইআর পরীক্ষাগারে পরীক্ষায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। ইসবপুরে লোহার খনি আবিষ্কার বাংলাদেশে এটিই প্রথম। যার ব্যাপ্তি রয়েছে ৬-১০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত। এখানে কপার, নিকেল ও ক্রোমিয়ামেরও উপস্থিতি রয়েছে। ১১৫০ ফুট গভীরতায় চুনাপাথরের সন্ধানও মিলে। তিনি আরও জানান, ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ২০১৩ সালে এ গ্রামের ৩ কিলোমিটার পূর্বে মুশিদপুর এলাকায় কূপ খনন করে খনিজ পদার্থের সন্ধান পেয়েছিল। সেই গবেষণার সূত্রধরে দীর্ঘ ৬ বছর পর চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল থেকে কূপ খনন শুরু করা হয়। এরপর ১৩৮০-১৫০০ ফুট গভীরতা পর্যন্ত খননকালে সেখানে আশার আলো দেখতে পাওয়া যায়। এ খবর পেয়ে ২৬ মে জিএসবির মহাপরিচালক জিল্লুর রহমান চৌধুরীসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা এখানে পরিদর্শনে আসেন। এসময় মহাপরিচালক সাংবাদিকদের সুখবর না দিলেও লোহার খনি আবিষ্কার হতে চলেছে এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। অবশেষে দীর্ঘ চেষ্টার ফলে ১৭৫০ ফুট গভীরতা খনন করে লোহার খনির আবিষ্কার করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৪০০ ফুট পুরুত্বের লোহার আকরিকের এ স্তরটি পাওয়া গেছে। এ অঞ্চলে ৬০ কোটি বছর আগে সমুদ্র ছিল। সেই কারণে এখানে জমাট বাঁধা আদি শিলার ভেতরে লোহার আকরিকের এ সন্ধান পাওয়া যায়। উপজেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইসবপুর গ্রাম। এ গ্রামের কৃষক ইছাহাক আলীর কাছ থেকে ৫০ শতক জমি ৪ মাসের জন্য ৪৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে খনিজ পদার্থের অনুসন্ধানে কূপ খনন শুরু করে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর। জিএসবির উপ-পরিচালক (ড্রিলিং ইঞ্জিনিয়ার) মাসুদ রানা জানান, গত ১৯ এপ্রিল থেকে ইসবপুর গ্রামে কূপ খনন শুরু করা হয়। ৩০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ একটি দল ৩ শিফটে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আলীহাট ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি গোলাম মওলা ও ইসবপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, আমরা জানতে পারলাম এখানে লোহার খনি পাওয়া গেছে। এখান থেকে লোহা উত্তোলন করা হলে এখানকার মানুষদের জীবনমান পাল্টে যাবে। কর্মসংস্থান হবে এখানকার মানুষদের। দেশের জন্যও লাভজনক হবে। এমনই আশায় বুক বাঁধছেন এখানকার সর্বস্তরের মানুষ। তাই গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারের কাছে খনি বাস্তবায়নে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
×