ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘মমতাজ উদদীন বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে’

প্রকাশিত: ১১:৩২, ১৯ জুন ২০১৯

‘মমতাজ উদদীন বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শরীরীভাবে না, মমতাজ উদদীন আহমদ বেঁচে থাকবেন তার কর্মে, মানুষের হৃদয়ে শ্রদ্ধা ও ভালবাসায়। তিনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা। প্রিয় শিক্ষক ও নাট্যকারকে এভাবেই স্মরণ করলেন তার শুভার্থী, বন্ধু ও সংস্কৃতিকর্মীরা। এভাবেই মমতাজ উদদীন আহমদকে নাগরিক স্মরণসভায় মূল্যায়ন করেন বক্তারা। তারা বলেন, অধ্যাপক মমতাজ উদদীন আহমদ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন শিক্ষক, অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক ও সুবক্তা। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেছেন শুরু থেকে। মঙ্গলবার বাংলা একাডেমি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যৌথভাবে নাগরিক স্মরণসভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন নাট্য ব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক, নাট্যজন ড. ইনামুল হক, সাংবাদিক আবেদ খান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, নাট্যজন গোলাম রব্বানী, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক সহ-সভাপতি ঝুনা চৌধুরী, এটিএন বাংলার অনুষ্ঠান (্উপদেষ্টা) নওয়াজিশ আলী খান, অভিনেতা কেরামত মাওলা, অভিনেত্রী আফরোজা বানু, অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী, কবি আসাদ মান্নান, অভিনেতা আহসানুল হক মিনু, রেজাউল একরাম রাজু, আরমান পারভেজ মুরাদ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মমতাজ উদদীন আহমদের প্রিয় নজরুল সঙ্গীত ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমারে দিব না ভুলিতে’ গানটি গেয়ে শোনান শিল্পী ফেরদৌস আরা। অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, সহজভাবে জীবনের কথা, জীবনের দর্শনের কথা বলতেন। অসাধারণ রসবোধ ছিল। মানুষকে হাসাতে হাসাতেই তিনি জীবন দর্শনের কথা বলতেন, নাটকে, অভিনয়ে। রুবানা হক বলেন, মমতাজ উদদীন আহমদের কাছে প্রায় প্রতি রাতেই আমি আর আনিসুল হক তার বাসায় যেতাম। মন খারাপ হলেই যেতাম। যেতাম হাসতে, আনন্দ করতে। মমতাজ উদদীন আহমদ একজন পরিপূর্ণ জীবন কাটিয়ে গেছেন। বেঁচে থাকলে প্রিয় বিয়োগ হবেই। আনিসকে হারিয়েছি, মমতাজ স্যারও চলে গেলেন। কিন্তু আমি মনে করি, আনিস, মমতাজ স্যার বেঁচে আছেন আমাদের জীবনে, স্মৃতিতে। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, সংস্কৃতি জগতের এই উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব আমাদের নাটক, চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। তিনি আপাদমস্তক বাঙালী, স্বাধীনতা সংগ্রামী অসাম্প্রদায়িক মানুষ। নওয়াজিশ আলী খান বলেন, মমতাজ উদদীন আহমদের সঙ্গীত বাদে সংস্কৃতির প্রায় সকল ক্ষেত্রে অবাধ বিচরণ ছিল। শিক্ষকতা, নাটক রচনা, মঞ্চ ও টিভিতে অভিনয় সব বিভাগেই খুব সাবলীল বিচরণ ছিল তার। অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, বাংলা একাডেমির উচিত হবে মমতাজ উদদীন আহমদের রচনা সমগ্র প্রকাশ করা। সেইসঙ্গে নাট্যকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তার কাজ ও স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার। কেরামত মাওলা বলেন, মৃত্যু মানুষকে স্তব্ধ করে দেয়। যেদিন মানুষটি মারা যান সেদিন থেকে কর্ম থাকে না। আর যে মানুষ জীবনে অনেক কাজ করে যান, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যান কর্মের নিদর্শন- তার মৃত্যু নেই। সমাজ তাকে মনে রাখে, স্মরণ করে। মমতাজ উদদীন আহমদকেও প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে। তার কাজ বেঁচে থাকবে তাদের হৃদয়ে। আফরোজা বানু বলেন, থিয়েটারের সব সদস্যের ‘স্যার’ এর সঙ্গে সুন্দর সুন্দর স্মৃতি রয়েছে। স্যার নেই কিন্ত তিনি না থেকেও আমাদের মাঝে আছেন। তিনি জীবিত হয়ে আমাদের মাঝে বিরাজ করবেন চিরকাল। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মমতাজ উদদীন আহমদ গত ২ জুন রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
×