ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ফল ও পুষ্টি

প্রকাশিত: ১১:৫১, ১৯ জুন ২০১৯

ফল ও পুষ্টি

কৃষিভিত্তিক গ্রামবাংলার ফলমূলের সম্ভাবনাময় চিত্র দেশজ ঐতিহ্যের অবিস্মরণীয় সম্পদ। ধন-ধান্য পুষ্পে ভরা এদেশের মাটি আর মানুষের জীবনে যে বিচিত্র খাদ্যসম্ভার তাতে দেশজ ফলের উৎপাদন ও ভোগ্যপণ্য হিসেবে এর গুরুত্ব অপরিহার্য। ফল শুধু স্বাদের ব্যাপার নয়, তার চেয়ে বেশি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটাতেও এক বিশেষ উপাদান। বাংলাদেশ এখন ফল উৎপাদনে পৃথিবীতে চতুর্থ। কিছু ফল দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফলেরউৎসবে নানাভাবে জনগণকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। ‘পরিকল্পিত ফল চাষ যোগাবে পুষ্টিসম্মত খাবার’ এমন বার্তা হাজির করে জাতীয় ফল প্রদর্শনী ও বৃক্ষরোপণ পক্ষ ২০১৯ চলছে ফার্মগেটের কৃষি অনুষদে। সুস্বাদু ফলের এমন ব্যাপক আয়োজন উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। কৃষি সংক্রান্ত সারাদেশের বিভিন্ন সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং পুষ্টিকর ফল ব্যবস্থাপনার বহুমাত্রিক উৎসসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্তের কার্যক্রম এমন সম্প্রসারিত মেলাকে উৎসবমুখর ও বর্ণময় করে তুলেছে। এখন মৌসুমি ফলের সুবর্ণ সময়। আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম ও আনারসের মতো জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর ফল সারাদেশকে উৎসবের আমেজে ভরিয়ে তুলেছে। তবে ঐতিহ্যবাহী অনেক ফল এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এসব ফলের নামও জানে না। আমের যে কত রকম ভেদ আছে সেটাও অজানা থেকে যাচ্ছে। গোপালভোগ, রানীপছন্দ, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালি, হিমসাগর এবং ফজলি ছাড়াও যে আরও কত ধরনের আম রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরে ফলন হয় তার হিসাব রাখাও এখন দুঃসাধ্য। প্রদর্শনীতে ৭৫ জাতের আম নিয়ে এসেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এখন বলতে গেলে আমের ভরা মৌসুম। নতুন ধরনের কিছু আম প্রদর্শনীতে আসায় ক্রেতাদের উৎসুক দৃষ্টি সেখানে পড়েছে। যদিও এসব আম পরিচিত কিংবা বহুল প্রচলিত নয়। যেমন বৃন্দাবনী, সুবর্ণরেখা, গৌরমতী, সূর্যপুরী, কলা আম, বালিশ আম, ব্রুনাই কিং ইত্যাদি। এমন আরও নানা জাতের আম প্রদর্শনীতে সবার নজর কেড়েছে। ব্রুনাই কিং জাতের আম নাকি ৩ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। ‘ময়না’ নামের একটি ফল এই উৎসবে সবাইকে আকর্ষণ করেছে। ছোট গোলাকৃতি সবুজ রঙের এই মিষ্টি ফলটি দেশীয় হিসেবে পরিচিত হলেও এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। এমন অনেক বিলুপ্তপ্রায় ফল এই উৎসবে হাজির করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নতুন উদ্যমে চাষাবাদের মাধ্যমে এর ফলন বৃদ্ধির প্রচেষ্টাও চালানো হচ্ছে। ফল প্রদর্শনীর আয়োজিত উৎসবে অনেক বার্তাই দর্শক-ক্রেতাদের উদ্দেশে হাজির করা হয়। বিষমুক্ত ফল কিংবা পুষ্টিকর ফলাহার, হারিয়ে যাওয়া অনেক স্বাস্থ্যকর ফলকে নতুনভাবে উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করার সঙ্গে একই ফলের, বিশেষ করে আমের হরেকরকম প্রকার ভেদকে গুরুত্ব দিয়ে সব মানুষের কাছে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালানোর কর্মসূচীও গ্রহণ করা হচ্ছে। ইদানীং ভেজাল আর ফরমালিনযুক্ত খাবার মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা বাড়ানোর যে সব প্রতিবেদন প্রকাশ পাচ্ছে তাতে করে বিশুদ্ধ ফল হাতের কাছে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর। তবে বিভিন্ন ফলের চাষাবাদ বাড়াতে পারলে এর সুফল পেতে সময় লাগবে না। আর তখনই হয়ত বিষমুক্ত তরতাজা, সুস্বাদু ফল সবার কাছে পৌঁছে দেয়া যাবেÑ এমন প্রত্যাশাই ছিল জাতীয় ফল প্রদর্শনীতে।
×