ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হতদরিদ্রের হাল

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২০ জুন ২০১৯

 হতদরিদ্রের হাল

বিশ্ববাসীর জন্য অবশ্যই সুসংবাদ যে, সারা বিশ্বে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যেও হয়েছে দারুণ উন্নতি। বাংলাদেশেও দারিদ্র্য বিমোচন ঘটেছে অভূতপূর্ব হারে। গত তিন দশকে বিশ্বে এক শ’ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে। বিশ্বের অর্ধেক দেশে এখন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা তিন শতাংশের নিচে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এরপরও ৭৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দরিদ্র রয়ে গেছে। দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলগুলোতে এই সময়ে দ্বন্দ্ব, সংঘাত, সহিংসতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। দারিদ্র্য হার কমে আসা বিশ্বের জন্য বড় অর্জন হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এই হ্রাসের গতি কমেছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড সাড়ে ছয় কোটি ছাড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯০ সালে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ছিল অতি দরিদ্র। তাদের দৈনিক আয় এক দশমিক নয় ডলারের নিচে ছিল। ২০১৫ সালে এসে বিশ্বে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা নেমে এসেছে দশ ভাগে। বিশ্বে অন্য অঞ্চলে দারিদ্র্য কমলেও আফ্রিকার সাবসাহারা অঞ্চলে বাড়ছে। ১৯৯০ সালে এই অঞ্চলে হতদরিদ্র ছিল ২৭ কোটি ৮০ লাখ লোক। ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ কোটি ৩০ লাখে। বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ২৮ দেশের মধ্যে ২৭টিই সাবসাহারা এলাকায়। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচীর সফলতা অনেক বেশি। তাই অতি দরিদ্র বা হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। হতদরিদ্র মানুষের জীবন নানা সমস্যাক্রান্ত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও খাদ্য এবং পানি সমস্যা তাদের পীড়িত করে তুলছে। দারিদ্র্য বিমোচন বিশ্বের অনেক দেশে ব্যাপকহারে ঘটলেও বহু দেশ এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। বাস্তুচ্যুত মানুষের অবস্থা আরও করুণ। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী বিভিন্ন দেশ থেকে দেশের অভ্যন্তরে বা দেশের বাইরে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা এখন ছয় কোটি ৮৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। ধনী দেশগুলোতে মাত্র ১৫ ভাগ উদ্বাস্তুর স্থান হয়েছে। এর মধ্যে শুধু জার্মানিতে রয়েছে নয় লাখ ৭০ হাজার। মাথা প্রতি হিসাব করলে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উদ্বাস্তু রয়েছে লেবাননে। দেশটির প্রতি চারজনের একজন সিরিয়ান উদ্বাস্তু। তাদের ৭৯ ভাগই দারিদ্র্যসীমার নিচে। উগান্ডায় দক্ষিণ সুদানের দশ লাখ শরণার্থী রয়েছে। ২০১৭ সালে মাত্র এক শ’ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। ইতোপূর্বে আসা রোহিঙ্গাসহ কক্সবাজার জেলার ক্যাম্পেই আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের বেশি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এরা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এদের কারণে স্থানীয় অধিবাসীরা কর্মসংস্থানহীন হয়ে পড়ছে যেমন, তেমনি আর্থিকভাবেও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে ত্রিশ লাখের বেশি মানুষ ভেনিজুয়েলা ছেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়েও বহু মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে স্বদেশে-বিদেশে। দারিদ্র্য শিক্ষার ক্ষেত্রকেও করেছে সঙ্কুচিত। ১৫০ দেশের তথ্য নিয়ে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নয়নশীল বিশ্বে অর্ধেকের মতো শিক্ষার্থী ন্যূনতম মানের শিক্ষা পাচ্ছে না। এর কারণ নিম্ন আয়ের দেশে স্বাস্থ্য ও পুষ্টির অভাব। ২৬ কোটি শিশু ও তরুণ কখনই স্কুলে যায়নি। একই কারণে বিশ্বে বর্তমানে ১৫ কোটি শিশু খর্বকায়। পুষ্টিহীনতা ও অসুখের কারণে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অতি দরিদ্রজনের সংখ্যা হ্রাস পেলেও জলবায়ুর পরিবর্তনের ধকলে তারা যে আবার দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে না এমন নিশ্চয়তা মেলে না। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উচিত দারিদ্র্য বিমোচনে যথাযথ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ।
×