ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিআইএ’র নেটওয়ার্ক বানচাল

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ২০ জুন ২০১৯

সিআইএ’র নেটওয়ার্ক বানচাল

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র একটি বিশাল নেটওয়ার্ক বানচাল করে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন ইরানি গোয়েন্দারা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যেই মঙ্গলবার সিআইএ’র গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক বানচালের দাবি করল ইরানের গোয়েন্দা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এদিকে পেন্টাগনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তি প্যাট্রিক শ্যানাহান মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। ট্রাম্প এক টুইটে ঘোষণা করেন, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পদত্যাগ করেছেন শ্যানাহান। নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে মার্ক এস্পারকে। আগামী ২৪ জুন থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম ইরনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের গোয়েন্দা বিষয়ক মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার বলেছে, সিআইএ’র গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক পরিচালনায় ব্যবহৃত একটি অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থা আবিষ্কারের পর তারা গোয়েন্দাগিরির বিষয়টি শনাক্ত করে। গত বছর আন্তর্জাতিক একটি পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গেলে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দেশ দুটির মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল গুপ্তচর নেটওয়ার্ক বানচালের দাবি করল ইরান। আন্তর্জাতিক ওই পরমাণু চুক্তিকে ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিহিত করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তিটি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং নিজেদের পক্ষে পুনরায় চুক্তি করতে চাপপ্রয়োগের অংশ হিসেবে ইরানের ওপর বেশ কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও চুক্তির পক্ষেই অবস্থান করছে এবং চুক্তিটি সচল রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। গত সপ্তাহেই বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের অন্যতম প্রধান রুট ওমান উপসাগরে দুটি তেলবাহী জাহাজে অন্তর্ঘাতমূলক হামলার জন্য ইরানের বিপ্লবী বাহিনীকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ইরান। ইরানের পরমাণু সংস্থা সোমবার জানায়, ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণের সীমা আর মেনে চলবে না ইরান। ইরানের কর্মকর্তারা সিআইএ নেটওয়ার্ক বানচালের বিষয়ে সামান্য তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ তার গুপ্তচরদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সাইবার জগতে যে পদ্ধতি ব্যবহার করে সেই নিরাপদ ব্যবস্থায় ঢুকতে সক্ষম হয়েছে ইরানের গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের গুপ্তচর বিরোধী বিভাগের পরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে এটি জানায়, ‘ব্যয়বহুল গুপ্তচরবৃত্তির অংশ হিসেবে সিআইএ একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে এবং প্রত্যেক গুপ্তচরের জন্য বিশেষ স্পেস বরাদ্দ করেছে। ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মহাসচিব আলী সামখানি সোমবার নেটওয়ার্ক আবিষ্কারের বিষয়টি প্রথম ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, সাইবার গুপ্তচর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শুধু ইরান নয়, অন্যান্য দেশেও গোয়েন্দাগিরি করা হচ্ছে এবং এটা আবিষ্কার করা হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। বার্তা সংস্থা মেহের জানায়, সামখানি রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম আইআরআবিকে বলেছেন, ‘আমাদের অন্যান্য যেসব মিত্র দেশে এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তি করা হচ্ছে, সেসব দেশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নেটওয়ার্ক বানচাল করা সম্ভব হয়েছে এবং তাদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অনেকেই গোয়েন্দাগিরির বিষয়টি স্বীকারও করেছেন।’ এদিকে ভারপ্রাপ্ত মার্কিন প্রতিরক্ষা প্যাট্রিক শ্যানাহান মঙ্গলবার পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ায় ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ ইরান দাবি করেছে, তারা মার্কিন বিশাল গুপ্তচর নেটওয়ার্ক বানচাল করতে সক্ষম হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের এ উত্তেজনার বিষয়টি খুবই উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস হঠাৎ পদত্যাগ করায় স্থায়ীভাবে কাউকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হয়নি। ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন প্যাট্রিক শ্যানাহান। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার রাতে টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ওমান উপসাগরে দুটি তেলবাহী জাহাজে অন্তর্ঘাতমূলক হামলাকে তিনি খুবই ছোট ঘটনা হিসেবে দেখছেন। কিন্তু এ হামলার জন্য তেহরানকে দোষারোপ করে আসছে ওয়াশিংটন। টাইম ম্যাগাজিনের কাছে ট্রাম্পের মন্তব্য সত্ত্বেও ইরানের প্রতি সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি বলেন, ইরানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র খুবই সজাগ। ইরানের আগ্রাসন রোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেয়া হবে। সোমবার আরও এক হাজার মার্কিন সৈন্য মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পম্পেও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে এই সেনা মোতায়েনের ফলে ইরানের বোঝা উচিত যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে কতটা চিন্তাশীল। এ অঞ্চলে ইরানের আগ্রাসন বন্ধ করতেই অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টাইম ম্যাগাজিনকে আরও বলেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে যদি প্রয়োজন হয়, তবে নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধেও নির্দেশ দেয়া হবে।-এএফপি ও ইনডিপেনডেন্ট
×