ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম ওয়াসার ১১শ’ কোটি টাকার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ২০ জুন ২০১৯

চট্টগ্রাম ওয়াসার ১১শ’ কোটি টাকার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রায় ১১শ’ কোটি টাকার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে। বুধবার মন্ত্রিসভার ক্রয় সংক্রান্ত বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এ নিয়ে আর কোন অনিশ্চয়তা নেই। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পাইপ লাইনে যুক্ত হবে দৈনিক আরও ৬ কোটি লিটার পানি। তখন চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সরবরাহ হবে কর্ণফুলী দক্ষিণ পাড়েও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের পর সেখানেও গড়ে উঠবে শিল্প কারখানা এবং আবাসন। ভবিষ্যত চাহিদা বিবেচনা করে সুদূরপ্রসারী চিন্তায় বোয়ালখালীতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় বলে জানিয়েছে ওয়াসা। চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ জানান, বুধবার ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। সেখানে চট্টগ্রাম ওয়াসার বোয়ালখালী ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। এখন শুধু প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পর কাজ শুরু করে দেয়ার অপেক্ষা। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ওয়াসার সেবা কার্যক্রম সম্প্রসারিত হবে কর্ণফুলী দক্ষিণ পাড়েও। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে জনসংখ্যা এবং আবাসন। গড়ে উঠছে নগরসংলগ্ন এলাকায় শিল্প কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ওয়াসা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে একের পর এক বড় প্রকল্প। সক্ষমতা আরও বাড়াতে বোয়ালখালীর ভান্ডালজুড়ি এলাকায় নেয়া হয় প্রায় ১১শ’ কোটি টাকার প্রকল্প, যা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সংস্থাটি দৃষ্টি দিতে চায় কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ের চারটি উপজেলায়। চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, আবাসন এবং শিল্পায়নের দিক থেকে চট্টগ্রাম নগরী ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। গৃহীত পরিকল্পনাগুলোও বেশ সুদূরপ্রসারী। অনেক দূরদৃষ্টি নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারও চট্টগ্রামের ব্যাপারে বেশ ইতিবাচক। তিনি জানান, দুই বছরের মধ্যেই নগরীর পানির চাহিদা সম্পূর্ণ মিটে যাবে আশা করছি। পুরো নগরীতে ২৪ ঘণ্টা পানি দেয়া যাবে ২০২১ সাল নাগাদ। ওয়াসার জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে একনেকে পাস হওয়ার পর প্রায় সাড়ে ৩ বছর পর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেল প্রকল্পটি। বোয়ালখালীর ভান্ডালজুড়িতে ১১শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে যে প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে তার পানি শোধন ক্ষমতা হবে দৈনিক ৬ কোটি লিটার। দরপত্র আহ্বানসহ প্রাথমিক কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণ সহায়তায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। কোরিয়ার ৬টি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার ক্রয় করেছিল, যার মধ্যে তাইঅং এবং কোলং নামের দুটি প্রতিষ্ঠান দর প্রদান করেছে। মূল্যায়নের পর অর্থ ছাড়করণ করবে কোরিয়ান ফাইনেন্সিং অথরিটি। কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা এবং কর্ণফুলী উপজেলাকে এ প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহের আওতায় আনা হবে। টানেল হওয়ার পর সেখানেও গড়ে উঠবে শিল্প কারখানা এবং আবাসন। এছাড়া সীতাকুন্ডে শিল্প এলাকায় পানির প্রয়োজন। সেখানেও ওয়াসার পানি সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মিত হওয়ার পর দক্ষিণ পাড়েও গড়ে উঠবে আবাসন ও শিল্প কারখানা। টানেলটি নির্মাণের উদ্দেশ্যেই যোগাযোগ উন্নয়নের পাশাপাশি চট্টগ্রামকে ওয়ান সিটি টু টাউনে পরিণত করা। আর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পানি পরিশোধনে সক্ষমতা বাড়াতে সচেষ্ট চট্টগ্রাম ওয়াসা। চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনীয়ার পোমরা এলাকায় বাস্তবায়িত ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প’ থেকে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি পাইপলাইন যুক্ত হওয়ার পরই পানীয় জলের হাহাকার অনেকটাই কমেছে। এরপর যুক্ত হয়েছে মদুনাঘাট প্রকল্পের ৯ কোটি লিটার পানি। এই দুই প্রকল্প চালু হওয়ার পর বর্তমানে ওয়াসার দৈনিক পানি শোধন ক্ষমতা প্রায় ৩৬ কোটি লিটার, যা দিয়ে পানির চাহিদার অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। ওয়াসার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০২০ সাল নাগাদ রাঙ্গুনীয়ার পোমরায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প-২ এর কাজ শেষ হলে পাইপলাইনে যুক্ত হবে আরও ১৪ কোটি লিটার পানি। এরপর ভা-ালজুড়ি প্রকল্পের পানি যোগ হলে ওয়াসার সক্ষমতা যে পর্যায়ে উন্নীত হবে, তা দিয়ে শহর এলাকার পানির চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
×