ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকে নেপালে জলবিদ্যুত খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাব

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ২০ জুন ২০১৯

 বাংলাদেশকে নেপালে জলবিদ্যুত খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জলবিদ্যুত খাতে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে নেপাল। বুধবার কক্সবাজারে নেপাল-বাংলাদেশ বিদ্যুত খাত বিষয়ক কারিগরি কমিটির বৈঠকে দেশটির তরফ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে নেপালের তরফ থেকে জানানো হয়েছে দেশটিতে ৪২ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। যার মধ্যে এখন মাত্র এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে নেপাল। কারিগরি কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা আজ কারিগরি কমিটি বৈঠক করেছি। সেখানে নেপাল ও বাংলাদেশের বিদ্যুত খাতের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের দেশের বিদ্যুত খাত সম্পর্কে তাদের বলেছি তারাও আমাাদর বিদ্যুত খাত সম্পর্কে জেনেছে। এই আলোচনায় নেপাল বলছে তাদের দেশে বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগের যে নীতি রয়েছে সেখানে যে কারও বিনিয়েগের দ্বার তারা উন্মুক্ত রেখেছে। এখানে বাংলাদেশের সরকার বা বেসরকারী পর্যায়ের যে কেউ নেপালে বিনিয়োগ করতে পারেন। নেপাল বলছে তাদের দেশে জলবিদ্যুত উৎপাদনে কিলোওয়াট প্রতি বাংলাদেশী মুদ্রায় ৮০ পয়সা থেকে এক টাকা খরচ হয়। সেখানে বাংলাদেশে ডিজেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ ২২ টাকার মতো। দীর্ঘ মেয়াদে নেপালে কেন্দ্র নির্মাণ করে বিদ্যুত আমদানি করলেও তাকে লাভজনক ভাবা হচ্ছে। উল্টো নেপালের সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুত বিনিময় চুক্তি হলে শীতের সময় দেশটিতে বাংলাদেশ বিদ্যুত বিক্রি করতে পারে। কারিগরি কমিটির ওই সদস্য জানান, আমাদের নেপাল বলেছে তারা তিন ধাপে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। আগামী ১০ বছর মেয়াদী এই পরিকল্পনায় নেপাল ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। নেপাল বলছে প্রথম তিন বছরে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট, ৫ বছরে ৫ হাজার মেগাওয়াট এবং ১০ বছরে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করবে দেশটি। এর মধ্যে নেপালের চাহিদা মেটাতে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন হবে। বাকি বিদ্যুত তারা প্রতিবেশী দেশে রফতানি করতে চায়। সে ক্ষেত্রে ভারত এবং বাংলাদেশ নিকটতম এই দুই প্রতিবেশী দেশকে অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছে দেশটি। নেপাল বলছে দেশটিতে ৪২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে বিশাল এই জলরাশি কোন কাজে আসছে না। বিশে^র সব থেকে কম খরচে জলবিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব। বিভিন্ন দেশ জল বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনের ঘোষণা দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে কেবল কাপ্তাই ছাড়া আর কোথাও জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা নেই। ভারতের অরুণাচল প্রদেশেও ব্যাপক জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ভুটান এবং মিয়ানমারে জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিশে^র বিভিন্ন দেশ নেপালে জলবিদ্যুত উৎপাদনের জন্য আলোচনা শুরু করেছে। সেখানে বাংলাদেশও যুক্ত হতে পারে। এই জলবিদ্যুত উৎপাদন হলে কিভাবে তা বাংলাদেশে আনা যায় সে বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, দুই দেশ এবার এক সঙ্গে এসব বিষয়ে গবেষণা করে বিনিয়োগের খাত নির্ধারণ করবে। কারিগরি কমিটির অপর এক সদস্য জানান, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্সবাজারে দুই দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপ বৈঠক করবে। সেখানে নেপাল এবং বাংলাদেশের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের দুজন যুগ্ম সচিব নেতৃত্বে দেবেন। এরপর নেপাল এবং বাংলাদেশের বিদ্যুত সচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে বিকেল ৩টায়। দুই ঘণ্টার ওই বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। প্রসঙ্গত, নেপালের সঙ্গে বিদ্যুত বিনিময় করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ গ্রীষ্মে নেপাল থেকে যেভাবে বিদ্যুত আনতে পারবে আবার শীতে ঠিক একইভাবে রফতানি করতে পারবে। কারণ শীতে দেশটিতে পানির স্তর নেমে যাওয়াতে বিদ্যুত উৎপাদন একেবারে কমে যায়। আবার তখন বাংলাদেশে বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ থাকে।
×