ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেট আলোচনা

জল ঘোলা করে হলেও বিএনপি সংসদে এসেছে ॥ মেনন

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ২০ জুন ২০১৯

 জল ঘোলা করে হলেও বিএনপি সংসদে এসেছে ॥ মেনন

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মহাজোটের সংসদ সদস্যরা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে এলেও নির্বাচন ভ-ুল করতে সব কৌশলই প্রয়োগ করেছিল। তাতে ব্যর্থ হয়ে নির্বাচন ও সংসদের অবৈধতার কথা বলছে। নির্বাচনে অতি উৎসাহী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বাড়াবাড়ি নির্বাচনকে অশুদ্ধ ও অবৈধ করে না। আর করে না বলেই বিএনপি-গণফোরামের বন্ধুরা আজ জল ঘোলা করে হলেও সংসদে এসেছে। কিন্তু তাতে আত্মতৃপ্তির অবকাশ নাই। বরং নির্বাচনকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনার কাজটি আমাদের করতে হবে। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, সরকারী দলের সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, কাজী কেরামত আলী, রুশেমা বেগম, বেগম শামসুন নাহার, এ কে এম ফজলুল হক, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন, বেগম সেলিমা আহমাদ, গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, সামসুল হক দুদু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, ডাঃ সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, জাসদের শিরীন আখতার, বিএনপির ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, জাহিদুর রহমান ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়ন করতে পারলে শিক্ষা খাত অনেকদূর এগিয়ে যেত উল্লেখ করে বলেন, হেফাজতে ইসলামসহ কিছু ধর্মবাদী দল শিক্ষানীতির বিরোধিতা করেছে মাত্র। জানি না এখানেও আপোস হয়েছে কিনা। এক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষায় যেমন পরিবর্তন আনতে হবে, মাদ্রাসার শিক্ষার ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে স্বীকৃতি দিলেও তারা নিচের দিকে কোন পরিবর্তন আনতে রাজি নয়। তারা হুজুরের কথা ছাড়া সরকারের কোন নির্দেশ মানবে না। তিনি বলেন, নুসরাত হত্যা, ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন, বালকদের ওপর বলাৎকারের যেসব খবর প্রকাশ হয় প্রতিদিন, সে কথা বলব না। কারণ এটা কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠী নয় এখন এক চরম সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। কিন্তু এই সব ব্যক্তিরা যারা আমার কথার জন্য ফাঁসি চেয়ে বিক্ষোভ করেছে, আমাকে মুরতাদ ঘোষণা করেছে- তারা প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কি ধরনের উক্তি করেন ইউটিউব খুলে তা শোনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে রাশেদ খান মেনন বলেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে এলেও নির্বাচন ভ-ুল করতে সব কৌশলই প্রয়োগ করেছিল। তাতে ব্যর্থ হয়ে নির্বাচন ও সংসদের অবৈধতার কথা বলছে। নির্বাচনে অতি উৎসাহী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বাড়াবাড়ি নির্বাচনকে অশুদ্ধ ও অবৈধ করে না। আর করে না বলেই বিএনপি-গণফোরামের বন্ধুরা আজ জল ঘোলা করে হলেও সংসদে এসেছে। কিন্তু তাতে আত্মতৃপ্তির অবকাশ নাই। বরং নির্বাচনকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনার কাজটি আমাদের করতে হবে। কারণ রোগ এখন উপজেলা নির্বাচন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। নির্বাচনে ভোট দেয়ার ব্যাপারে জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এটা নির্বাচনের জন্য কেবল নয়, গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ যদি দেশের ওপর নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, তাহলে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কেবল নয়, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলবে। এটা সবার জন্য যেমন, আওয়ামী লীগের জন্যও প্রযোজ্য। ১৪ দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত দুঃশাসন, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদসহ ২৩ দফা দাবি দিয়ে ১৪ দলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। ১৪ দলের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতার কারণে আজও আমরা চৌদ্দ দলে ঐক্যবদ্ধ আছি। জোটে নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগ এই সরকারকে আওয়ামী লীগ সরকার বলছে। এর জন্য দুঃখবোধ নাই। কোন প্রত্যাশাও নাই, যে ইঙ্গিত মাঝে মাঝেই করা হয়। একটিই প্রত্যাশা, যাতে স্বাধীনতা ঘোষণার সাম্য, মানবিক মর্যাদাবোধ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত দেখতে পাই। দেখতে পাই একটি সত্যিকার অর্থেই ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গত এক দশকে প্রমাণ করেছে, তারা বড় বাজেট দিতে পারে এবং তা বাস্তবায়নও করতে পারে। আগে দেশে দারিদ্র্যের সংখ্যা ছিল ৪৮ ভাগ, বর্তমান সরকার তা ২১ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। অতিদরিদ্র্যের হারও ৩৩ ভাগ থেকে ১১ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। এটা একটা বিশাল অর্জন। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র, কর্ণফুলী ট্যানেলের মতো বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশকে আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে ২০২১ সাল পর্যন্ত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, দেশকে ধ্বংস করতে যা যা করার তার সবই করে গেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সবচেয়ে ক্ষতি করেছে রেলবিভাগকে। সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরুজ্জীবিত করেছেন। সারাদেশকে রেলওয়ের নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। রেলওয়ের অনলাইনে টিকেট ক্রয়, রেলের বগিতে কমোড স্থাপনসহ আধুনিক করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল সিঙ্গেল গেজের লাইনগুলোকে ডবল গেজে উন্নীত করার পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে। ভারসাম্যমূলক রেলযোগাযোগ যত দ্রুত স্থাপন হবে, সড়ক পথে চাপ তত কমে যাবে। বিএনপির ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক উল্লেখ করে বলেন, এটি ঘাটতি বাজেট। বৈদেশিক ঋণের চাপ বাড়বে। ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। বাজেট বাস্তবায়ন ক্রমাগত কমছে। ঋণখেলাপীর ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন প্রথম। অনেকেই বলছে এটা ঋণখেলাপী ও লুটেরাদের সরকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আসা মানেই শেয়ার বাজার ধ্বংস হয়ে যাওয়া। জাসদের শিরীন আখতার অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন কঠোরহস্তে দমন করতে হবে দাবি করে বলেন, বিএনপির সংসদ সদস্যরা নিজেরা সংসদে যোগ দিয়ে সংসদকে অবৈধ বলে নিজেদেরই অবৈধ বলছে। জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকতে কখনও নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেননি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, অগ্নিসন্ত্রাস, ভয়াল নৃশংসতার কারণে দেশের জনগণ বিএনপিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তকরণের দাবি জানিয়ে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি করা হচ্ছে, সেটা ঠিক করতে রাজনৈতিক নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এর জন্য রাজনৈতিক নেতাদেরই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে হবে। এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ এ বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার আছে। ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের পরিপন্থী। কালো টাকার কাছে রাষ্ট্রের এই আত্মসমর্পণ কোনভাবেই কাম্য নয়। এতে করে সৎভাবে উপার্জনকারীদের নিরুৎসাহিত করবে। বিএনপির জাহিদুর রহমান প্রস্তাবিত বাজেটকে ধনীদের বাজেট উল্লেখ করে বলেন, বাজেটে দুর্নীতিবাজ ও অবৈধ টাকার মালিকদের সুন্দরভাবে বৈধতা দেয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন কেমন হয়েছে তা দেশবাসী জানে। তিনি অবিলম্বে বর্তমান সংসদকে ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচনের দাবি জানান।
×