ব্যর্থতার কারণ হাজারটা হতে পারে। কিন্তু সে ব্যর্থতার কাহিনী শুনতে এখন আর কারোরই ভাল লাগে না। সভ্যতার অগ্র্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য পাহাড়সম ব্যর্থতাকে ডিঙিয়ে সফলতার বিজয় কৃতি রচনা। তেমনই একটা সফলতার অগ্রযাত্রার প্রাক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ২০১৯।’ জার্মানের মতো কর্মবীর রাষ্ট্র সেখানে এ রকম একটি ফেস্টিভ্যাল আয়োজনে দুই বছর পূর্ব থেকে ঘোষণা দিয়ে প্রস্তুতি আরম্ভ করে সেখানে বাংলাদেশে এই বড় মাপের ফেস্টিভ্যাল আরম্ভ হতে যাচ্ছে বিগত দেড় মাসের প্রস্তুতিতে। মধ্যবর্তী সময়ে ঈদের আবহে ছুটিজনিত কারণে সময় কমলেও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি, সচিব ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, আইটিআই বাংলাদেশ শাখার সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি লিয়াকত আলী লাকীসহ অপরাপর সহযোগীদের বেগবান নেতৃত্ব ও নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দুটি দলসহ ফ্রান্স, ভারত, চীন, নেপাল, ভিয়েতনাম, রাশিয়া মিলে মোট ৭ দেশের ৮টি মঞ্চায়ন নিয়ে উদযাপিত হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ২০১৯।’ আজ ২০ জুন বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ২৬ জুন বুধবার পর্যন্ত জাতীয় নাট্যশালার মূল হল, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল এবং সেমিনার হল নিয়ে এই আয়োজন। এই নাট্যোৎসব আয়োজনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়নে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ কেন্দ্র এবং সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন।
গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, আইটিআই, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে জাতীয় নাট্যশালায় উপস্থিতি উদ্বোধন এবং আলোচনার বর্ণিল প্রভায় আভা ছড়াবেন উপমহাদেশের খ্যাতনামা নাট্যব্যক্তিত্ব রতন থিয়াম।
আগামীকাল বিকাল পাঁচটায় সিরিয়ার অর্জিন, কানাডীয় নাগরিক, ফ্রান্সে বসবাসরত অভিনেত্রী করিম জাবের ‘ও মাই সুইট ল্যান্ড’ নাটকে একক অভিনয়ে দেখাবে মানুষের প্রকৃত ঘর আসলে কোথায়। সন্ধ্যা ৭টায় রতন থিয়ামের ‘ম্যাকবেথ’ দেখাবে অতিরিক্ত উচ্চাকাক্সক্ষার পরিণাম কতটা ভয়ঙ্কর। ভয়ঙ্কর না বরং অহঙ্কারের বিষয় সায়িক সিদ্দিকী তার অন্বেষা থিয়েটারের প্রযোজনা ‘জয়তুন বিবির পালা’ বাংলার লোক আঙ্গিকে উপস্থাপনা করে দেখাবে, স্বামীর বিহনে স্ত্রীর বাঁচা দায়। রবিবার সন্ধ্যায় চীনের জোহো থিয়েটার ‘এফসিকে’ নাটকের মাধ্যমে দেখাবে, সংস্কৃতি-লোকাচার ব্যতীত লোকের জীবন মরুময়। সোমবার নেপালের মান্ডালা থিয়েটার ড্রাগনফ্লাই নাটকের মধ্যে দেখাবে এক গল্প লেখকের কল্পনা আর বাস্তবতার অনুরণন।
মঙ্গলবার ভিয়েতনামের লে নক থিয়েটার ‘কিম তু’ নাটকের মধ্যে দেখাবে মানবহৃদয়ে প্রেম-প্রতারণা, শুভ-অশুভ কতটা পাশাপাশি এবং দখলদারিত্বের মনোভাব নিয়ে অধিষ্ঠান। বুধবার রাশিয়ার নিকোলাই জাইকভ থিয়েটার পর্দায় আলো ফেলে ‘লাইট পাপেট শো’-এর মাধ্যমে দেখাবে আঁধারের আস্ফালনের মাঝেও জগত আলোকময়। আলোকিত নাট্যকর্মী গড়ে তোলার স্বার্থে রয়েছে লেকচার সেমিনার এবং ডেমোনেস্ট্রেশন। বৃহস্পতিবার করিম জাবেরের লেকচার, শুক্রবার রতন থিয়ামের উপলব্ধির, সামনের বৃহস্পতিবার উৎসবের সীমা ছাড়িয়ে আলোকের ডেমোনেস্ট্রশন।
একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর আহ্বান, এই উৎসবের সকল কমিটির সদস্য শুধু নামে নয় বরং সার্বক্ষণিক কর্মে নিবেদিত। বিচিত্র সাজে এই উৎসবের আয়োজন। সকলে এলেই হবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের সফল বাস্তবায়ন।