ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নজর থাকবে গতি সম্রাট মুস্তাফিজ ও স্টার্কের ওপর

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ২০ জুন ২০১৯

 নজর থাকবে গতি সম্রাট মুস্তাফিজ ও স্টার্কের ওপর

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ পাঁচ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের এ পর্যায়ে মোহাম্মদ আমিরের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে মিচেল স্টার্ক। চার ম্যাচে মুস্তাফিজুর রহমানের শিকার ৭ উইকেট। গত বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা স্টার্ক এবারও সমানে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। অন্যদিকে ধুমকেতুর মতো আগমনেই ক্রিকেটবিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়া মুস্তাফিজ ঠিক সেই জায়গায় নেই। ইনজুরি-অপারেশনের পর বোলিংয়ের ধারও অনেকটা কমে গেছে। তবে দলে তার প্রয়োজনীয়তা যে এতটুকু কমেনি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের দিনেও সেটি জানিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। সবাই যখন সেঞ্চুরিয়ান সাকিব আল হাসান এবং দুরন্ত ব্যাটিং করা লিটন দাসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখনই ম্যাশ বলেন, শিমরন হেটমায়ার ও আন্দ্রে রাসেলকে ফিরিয়ে দেয়া মুস্তাফিজের ওই ওভারটিই (৪০তম) ছিল ‘টার্নিং পয়েন্ট’। আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাই বিশেষ দৃষ্টি থাককে ‘দ্য ফিজের’ ওপর। বিশ্বকাপের ঠিক আগে ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪ উইকেট নেয়া মুস্তাফিজকে ঘিরে নতুন করে আশার আলো তৈরি হয়। পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্টের সবাই বলছিলেন, ফিজকে নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন তারা। কিন্তু ত্রিদেশীয় সিরজেরই ফাইনালে দল সাফল্য পেলেও মাত্র ৫ ওভারে ৫০ রান দিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। কার্ডিফে প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৮ ওভারে ১ উইকেট নিয়েছিলেন ৪৩ রানের বিনিময়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৩৩০ রানের পাহাড় গড়ার পর ২১ রানের দারুণ জয়ে শুভ সূচনা করে টাইগাররা। সেদিনও ডেভিড মিলার, জেপি ডুমিনি ও ক্রিস মরিসকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজ। ১০ ওভারে দেন ৬৭ রান। তবে নিউজিল্যান্ডের কাছে ২ উইকেটে হেরে যাওয়ার দিনে ৭.৪ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। অথচ ম্যাচে পরিস্থিতির বিচারে সেদিন ডেথ ওভারে ‘নায়ক’ হওয়ার সুযোগ ছিল তার সামনে। কার্ডিফে ইংল্যান্ডের কাছে হতাশার সেই হারের ম্যাচে ১০ ওভারে ১ উইকেট নেয়া মুস্তাফিজ দেন ৭৫ রান। মোহাম্মদ আমির-মিচেল স্টার্ক-জোফরা আর্চাররা যেখানে বল হাতে আগুন ঝরাচ্ছিলেন সেখানে টাইগার বোলিংয়ের মূল অস্ত্র মুস্তাফিজের ম্লান পারফর্মেন্স ছিল ভীষণ চিন্তার বিষয়। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচটা বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ার পর সেমির রেসে টিকে থাকতে উইন্ডিজকে হারাতেই হবে এমন কঠিন ম্যাচে ঠিকই জ্বলে ওঠেন ‘দ্য ফিজ’। এক পর্যায়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেভাবে এগোচ্ছিল মনে হচ্ছিল ওরা পৌনে চার শ’ রান করে ফেলবে। এক ওভারে দুর্দান্ত দুই শিকারে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান মুস্তাফিজ। মাত্র ২৬ বলে ৫০ রান করে ঝড় তোলা শিমরন হেটমায়ারের পর একই ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই ভয়ঙ্কর আন্দ্রে রাসেলকে (০) আউট করেন ‘দ্য ফিজ’। তার আগে ৯৬ রান করে সেঞ্চুরির দোরগোড়য় থাকা শাই হোপকেও তুলে নেন তিনি। ৮ উইকেটে ৩২১ রানে থামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরে সাকিব-লিটনের ব্যাটে ভর করে আসে স্মরণীয় জয়। অধিনায়ক মাশরাফি তাই মুস্তাফিজের ওই ৪০তম ওভারটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে মিচেল স্টার্ককে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। ৫১ টেস্টে তার শিকার সংখ্যা ২১১। ৪০ ওয়ানডেতে ১৫১। তবে এই পরিসংখ্যানে তার কৃতিত্বটা ঠিক বোঝা যায় না। স্টার্ক আসলে বড় মঞ্চের বড় পারফর্মার। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় যৌথভাবে আয়োজিত গত বিশ্বকাপে (২০১৫) ৮ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টসেরা হয়েছিলেন স্টার্ক। বাঁ-হাতি পেসারের আগুনে পুড়ে ছারখার হয়েছিলেন প্রতিপক্ষের রাঘব বোয়াল সব ব্যাটসম্যান। মাঝে ইনজুরির কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আন্তর্জাতিক ম্যাচ মিস করার পরও তাই তাকে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে অন্তর্ভুক্ত করতে অসি ম্যানেজমেন্টকে খুব একটা ভাবতে হয়নি। ফলটাও আসছে হাতেনাতে। আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্টার্কের বোলিং ফিগার যথাক্রমে ১/৩১, ৫/৪৬, ১/৭৪, ২/৪৩ ও ৪/৫৫। মোহাম্মদ আমিরের পর চলতি বিশ্বকাপে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়া মাত্র দ্বিতীয় বোলারও তিনিই। নিউজিল্যান্ডের কাছে নাটকীয় হার আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা পরিত্যক্ত হওয়ার পর উইন্ডিজকে হারানো সত্ত্বেও বাংলাদেশের জন্য প্রতিটি ম্যাচই এখন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে আজ টাইগার ব্যাটসম্যানদের জন্য হুমকি হতে পারেন মিচেল স্টার্ক। নটিংহ্যামে আগে ব্যাট করতে হলে প্রথম ১০ ওভারে ভয়ঙ্কর এই বাঁ-হাতি পেসারের তোপ সামলাতে হবে তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসানদের। যেটি হয়ে উঠতে পারে ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণে বড় নিয়ামক।
×