ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রকোনায় দুই সপ্তাহে ৫ নারী ও শিশু ধর্ষণ

প্রকাশিত: ০২:৩০, ২০ জুন ২০১৯

নেত্রকোনায় দুই সপ্তাহে ৫ নারী ও শিশু ধর্ষণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা ॥ জেলায় হঠাৎ করেই ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে। গত দুই সপ্তাহে বিভিন্ন উপজেলার পাঁচ নারী, কিশোরী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তিনটি। ধর্ষিতাদের মধ্যে আবার দু’জন প্রতিবন্ধী। এসব ঘটনার সংবাদ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশের পর সচেতন মহলের উদ্বেগ বেড়েছে। জানা গেছে, গত ৬ জুন কেন্দুয়া উপজেলার কুণ্ডলী এলাকার একটি ইটভাঁটিতে এক পোশাককর্মী (২৫) গণধর্ষণের শিকার হয়। ঈদের পরদিন বিকেলে ওই নারী তার স্বামী সুমনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে বেড়াতে বের হন। সন্ধ্যার দিকে সুমন কেন্দুয়া-মদন সড়কের কাছে কুণ্ডলী এলাকার ইটভাটার কাছে গিয়ে মোটরসাইকেলটি থামিয়ে দেয়। তখন তিন-চার যুবক ওই নারীকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে ইটভাঁটিতে কাছে গণধর্ষণ করে। ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনাটির সঙ্গে সুমনও জড়িত। পুলিশ সুমনসহ ধর্ষকদের গ্রেফতার করেছে। এর চারদিন পর ১১ জুন একই উপজেলার সাখরা এলাকায় আরও একটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওইদিন বিকেলে গড়াডোবা এলাকার এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরী (১৯) তার আত্মীয় বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিল। এ সময় চন্দলাড়া গ্রামের কাজল, হুমায়ূন ও জামরুলসহ চার যুবক ওই কিশোরীকে ধরে নিয়ে প্রথমে স্থানীয় একটি জঙ্গলে এবং পরে পূবাইল গ্রামের এক ব্যক্তির গোয়ালঘরে নিয়ে গণধর্ষণ করে। থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ ধর্ষকদের গ্রেফতার করে। একই দিন (১১ জুন) কেন্দুয়া উপজেলার দুল্লী গ্রামের আরেক যুবতী প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে এসে গণধর্ষণের শিকার হয়। জানা গেছে, গত ১১ জুন ওই যুবতী তার প্রেমিক স্বল্প কমলপুর গ্রামের ইকবালের সঙ্গে দেখা করতে কেন্দুয়া সদরে আসে। ইকবাল সারাদিন তাকে নিয়ে এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি করে। সন্ধ্যার পর স্বল্প কমলপুর গ্রাম সংলগ্ন হাওড়ের একটি সেচ পাম্পের পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বন্দী করে রেখে ইকবাল, হাসান, শরীফ ও রাজিবসহ আরও কয়েক যুবক টানা দু’দিন তাকে একাধিকবার গণধর্ষণ করে। পরদিন রাতে অচেতন অবস্থায় তাকে জামতলা মোড়ের রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পথচারীরা মেয়েটিকে উদ্ধার করে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। পুলিশ রাজীব ও হাসানকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে গত শুক্রবার (১৪ জুন) আটপাড়া উপজেলার কৈলং গ্রামের জানু মিয়া নামে এক ষাটোর্ধ ব্যক্তি তার ভাতিজি সম্পর্কের দশ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করে। জানা গেছে, বিকেলে প্রতিবেশী জানু মিয়া শিশুটিকে ডেকে তার ঘরে নিয়ে যায়। তখন ঘরে আর কেউ ছিল না। এ সুযোগে লম্পট জানু মিয়া শিশুটিকে ধর্ষণ করে। এ সময় মেয়েটির চিৎকার শুনে তার বাবা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। মামলার পর জানু মিয়া গ্রেফতার হয়েছেন। গত সোমবার (১৭ জুন) বারহাট্টা উপজেলার শেখেরপাড়া গ্রামের এক প্রতিবন্ধী(১৮) কিশোরীকে ধর্ষণ করে একই গ্রামের আল আমিন(৩০) নামে এক প্রতিবেশী যুবক। জানা গেছে, সন্ধ্যার দিকে বাক প্রতিবন্ধী ওই কিশোরীটি ঘরে একা ছিল। তার শ্রমজীবী বাবা-মা অন্যের বাড়িতে কাজ করছিলেন। এ সুযোগে প্রতিবেশী শান্ত ফকিরের ছেলে আল আমিন ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে পুলিশ আল আমিনকে গ্রেফতার করে। এদিকে গত ১০ জুন বারহাট্টা উপজেলার হাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইন উদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিদ্যালয়সহ বারহাট্টা উপজেলা সদরে একাধিক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এসব ঘটনার ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম বলেন, উল্লেখিত প্রতিটি ঘটনায় মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ আসামিই গ্রেফতার হয়েছে। বাদবাকি আসামিদেরও গ্রেফতারের জন্য জোর চেষ্টা চলছে। স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠন স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির মানবাধিকার বিভাগের কর্মকর্তা কোহিনূর বেগম বলেন, মাত্র দুই সপ্তাহে তিনটি গণধর্ষণসহ পাঁচটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা প্রতিটি ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
×