ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্রের শ্রমিকদের কাজে ফিরে যেতে বললেন প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০২:৪২, ২০ জুন ২০১৯

পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্রের শ্রমিকদের কাজে ফিরে যেতে বললেন প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নিশানবাড়িয়া এলাকার পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুত কেন্দ্রে এক বাঙালি শ্রমিকের মৃত্যুর পর লাশ গুমের গুজবের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চীনা ও বাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং আহত এক চীনা শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিদ্যুতকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের পক্ষ থেকে এসব কমিটি গঠন করা হয়। অপরদিকে খবর পেয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ হেলিকপ্টারযোগে ঘটনাস্থল পৌঁছে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। একইসাথে প্রতিমন্ত্রী শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ নুরুল হাফিজ জানান, বাঙালি ও চীনা শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে পায়রা তাপবিদ্যুতকেন্দ্রে পৌঁছেন বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বাঙালি ও চীনা শ্রমিকদের সাথে বৈঠক করেছেন। প্রতিমন্ত্রী উভয়পক্ষের দাবি শুনে তা বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের কাজে ফিরে যেতে বলেছেন। পরে শ্রমিকরা কাজে ফিরেছেন। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনাস্থলে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে তাপবিদ্যুতকেন্দ্রের বয়লারের ওপর (প্রায় সাততলার সমান উঁচু) থেকে পরে বাঙালি শ্রমিক সাবিন্দ্র দাসের মৃত্যু হয়। নিহত সাবিন্দ্র সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার জয়নগর গ্রামের নগেন্দ্রনাথ দাসের পুত্র। তাপবিদ্যুতকেন্দ্রে কর্মরত চীনাদের দাবি, ওই শ্রমিক অসাবধানতার কারণে নিচে পরে মারা গেছেন। তবে বাঙালি শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, বয়লারের ওপর থেকে ওই শ্রমিককে এক চীনা নাগরিক লাথি দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছে। পরবর্তীতে নিহতের লাশ গুমের চেষ্ঠা করা হয়। এ ঘটনার পর নিহতের লাশ উদ্ধার করে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরে নিহত শ্রমিকের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন বাঙালি শ্রমিকরা। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে মঙ্গলবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাঙালি ও চীনা শ্রমিকের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে তিন পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন চীনা নাগরিক এবং বাঙালি শ্রমিকসহ কমপক্ষে ১১জন আহত হয়। গুরুতর আহত চীনা শ্রমিকসহ মোট আটজনকে রাতেই বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চীনা শ্রমিক ঝাং ইয়াং ফাং বুধবার সকালে মারা যায়। অন্যান্য চীনা শ্রমিকদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস বলেন, এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরো ঘটনা তদন্তে তিনটি কমিটি গঠণ করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ নুরুল হাফিজকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠণ করা হয়। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। বর্তমানে (বৃহস্পতিবার) বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত রয়েছে।
×