ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হিমালয়ে বরফ কমার আশঙ্কাজনক চিত্র

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২০ জুন ২০১৯

 হিমালয়ে বরফ কমার আশঙ্কাজনক চিত্র

অনলাইন ডেস্ক ॥ স্নায়ুযুদ্ধের সময় গোপনে মোতায়েন করা কৃত্রিম উপগ্রহের ছবির সাহায্যে হিমালয়ে হিমবাহের পরিমাণ দ্রুতগতিতে কমার বিষয়টি উন্মোচিত হয়েছে বলে এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে। নাসা ও জাপানি মহাকাশযানের পাঠানো সাম্প্রতিক কিছু ছবির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর স্যাটেলাইটগুলোর আগের ছবির তুলনা করে বিজ্ঞানীরা গত ৪০ বছরে হিমালয়ের বরফ গলার হার দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন। ২০০০ সালের পর থেকে হিমালয় অঞ্চলের হিমবাহের উচ্চতা প্রতিবছর গড়ে ৫০ সেন্টিমিটার করে কমছে বলেও জার্নাল সায়েন্স অ্যাডভান্সে প্রকাশিত ওই গবেষণায় উঠে এসেছে, জানিয়েছে বিবিসি। গবেষকরা এ পরিবর্তনের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করেছেন। “এই গবেষণা থেকে হিমালয়ের হিমবাহের পরিবর্তনের স্পষ্ট চিত্রটি দেখতে পাচ্ছি আমরা,” বলেছেন নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরির জোশুয়া মরের। গত শতকের ৭০ ও ৮০-র দশকে যুক্তরাষ্ট্র ‘হেক্সাগন’ শীর্ষক এক কর্মসূচির আওতায় ২০টি গোয়েন্দা উপগ্রহ মোতায়েন করেছিল। গোপনে ছবি তোলার পর উপগ্রহগুলো ওই ছবির ফিল্মরোলগুলো বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দিলে সামরিক বিমান সেগুলো সংগ্রহ করে নিত। ২০১১ সালে এসব ছবি উন্মোচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা সেগুলো নিয়ে গবেষণার সুযোগ পায়। সেসব ছবির মধ্যে হিমালয় অঞ্চলের তোলা ছবিও ছিল। বিজ্ঞানীরা হিমালয়ের হিমবাহের ওই ছবিগুলোর সঙ্গে নাসা ও জাপানের মহাকাশ সংস্থা জাক্সার সম্প্রতি তোলা ছবির তুলনা করে বরফ গলার এ আশঙ্কাজনক চিত্র দেখতে পান। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা হিমালয়ের ২০০০ কিলোমিটার এলাকার সাড়ে ছয়শটি হিমবাহের পরিবর্তন খতিয়ে দেখেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ৪০০ কোটি টন বরফ গললেও পরের ১৬ বছর হিমালয়ে বরফ গলার পরিমাণ ছিল এর দ্বিগুণ- প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৮০০ কোটি টন। “বোঝার জন্য বলছি, এ ৮০০ কোটি টন বরফ দিয়ে প্রতি বছর অলিম্পিকে ব্যবহৃত সুইমিংপুলের মতো ৩২ লাখ পুল ভরাট করা যাবে,” বলেন মরের। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকেই এর জন্য দায়ী করছেন তারা। প্রাথমিকভাবে হিমবাহের এ হারে গলনের জন্য আশপাশের দেশগুলোতে তাৎক্ষণিক বন্যা এবং পরবর্তীতে দীর্ঘস্থায়ী খরা দেখা দিতে বলেও আশঙ্কা তাদের। “মাত্র এক প্রজন্মের মধ্যেই বরফ গলার হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে, হিমবাহগুলো দ্রুতগতিতে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। “কেন এটি সমস্যার সৃষ্টি করবে? কারণ, এর উপরই এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অনেক নদীর পানি সরবরাহের মাত্রা নির্ভর করে। গ্রীষ্মের খরার সময় এ নদীগুলোই পানির প্রবাহ ঠিক রাখে, ওই সময়ই পানি হয়ে ওঠে সবচেয়ে মূল্যবান,” কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা নিয়ে বলেছেন ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের ড. হামিশ প্রিটচার্ড। হিমবাহ না থাকলে নদীর শেষপ্রান্তের দিকে বসবাস করা লাখ লাখ মানুষ তীব্র খরায় ধুঁকবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
×