ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষাভীতি এড়াতে মায়ের ভূমিকা

প্রকাশিত: ০৮:৫১, ২১ জুন ২০১৯

 পরীক্ষাভীতি এড়াতে মায়ের ভূমিকা

পরীক্ষা শব্দটি শুনলেই মনের ভেতরে একটা ভয় কাজ করে। অস্থির লাগতে থাকে। এই অনুভূতি ছোট বড় সবার জন্যই। ছোট বাচ্চারাও বোঝে পরীক্ষা। এই ডিজিটাল যুগে শুধুই ছুটে চলা। গন্তব্যে পৌঁছানোর দৌড়। কত তাড়াতাড়ি আর কত কম সময়ে এগিয়ে যাওয়া যায় তারই প্রচেষ্টা। কিন্তু এসবের মাঝে বাচ্চাদের বেড়ে উঠার জন্য যে সময় সেটাকে কাটছাঁট করা যাবে না। শিশুদের মনোবিকাশের পরিপূর্ণ সময় অবশ্যই দিতে হবে। আর তা না হলে বাচ্চাদের মধ্যে এ্যাংজাইটি বা ফাংশনাল ইমপেয়ারমেন্ট ডেভেলপ করতে পারে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। বর্তমান প্রজন্মের বাচ্চাদের প্রতিনিয়ত পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। স্কুলের পরীক্ষা, গানের পরীক্ষা, নাচের পরীক্ষা ইত্যাদি অনেক কিছু। এগুলোতে বাচ্চাদের সঙ্গে বাবা-মাও সমান পেরেশান। অভিভাবকদের এক কথায় দম ফেলারও ফুরসত নেই। ফলে বাবা-মাও অনেক স্ট্রেসে থাকেন। বাচ্চাদের মধ্যে এসবের জন্য দেখা দিতে পারে স্ট্রেস সম্পর্কিত সমস্যা। তাদের ব্যবহারেও আসতে পারে পরিবর্তন। যেমন- অল্পেই বিরক্ত হয়ে যাওয়া, খেতে না চাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, মনোযোগের অভাব নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি অনেক কিছু। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারাটাই এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা চাই আমাদের বাচ্চারা ক্লাসে প্রথম হবে, স্টেজে উঠে সুন্দর করে সেজে নাচবে, সুরেলা কণ্ঠে গান গাইবে আবার ছবিও আঁকবে। ক্যারাতে ব্যাক বেল্ট হলে তো কথাই নেই। হ্যাঁ, এসবের দরকারও আছে। তবে বাচ্চার দিকটাও মাথায় রাখতে হবে। ও যেন সবকিছু একসঙ্গে করতে গিয়ে পিছিয়ে না পড়ে, আনন্দ যেন না হারিয়ে ফেলে। প্রথমেই সন্তানদের মনে এই বিশ্বাস তৈরি করতে হবে যে পরীক্ষায় ভাল অবশ্যই করতে হবে। তবে, কখনও একটু কম নম্বর পেলেই যে জীবন বৃথা হবে বা একটা অপরাধ বোধ নিয়ে থাকতে হবে এমনটি নয়। তাকে বোঝাতে হবে যে, বাবা-মা ভাল কিছু তার কাছ থেকে সব সময়ই আশা করে তবে তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার ভাল থাকা। পরীক্ষা নিয়ে অযথা বেশি টেনশন করে শরীর খারাপ করলে যে বাবা-মা খুশি হবেন না সেটা বাচ্চাকে বোঝাতে হবে। পরীক্ষা নিয়ে যেন বেশি চিন্তা করতে না হয় সে জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা বাবা-মাকেই নিতে হবে। মনে রাখতে হবে ‘কঠিন প্রশিক্ষণ সহজ যুদ্ধ’। অর্থাৎ নিয়মিতভাবে সারা বছরই যদি পড়াশোনা করা যায় তাহলেই পরীক্ষার সময় অযথা বাড়তি চাপ পড়বে না। তার মানে সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকার জন্য বাচ্চাকে জোর করা যাবে না। ওকে ওর মতো করে পড়তে দিতে হবে। তবে হ্যাঁ, মনিটরিং অবশ্যই করতে হবে। যাতে পড়াগুলো গুছিয়ে পড়ে রোজকার হোমওয়ার্কগুলো করিয়ে দিতে হবে। পড়ার সময় টিভি বা মোবাইল এ গেম না খেলে। বাচ্চাদের প্রতিদিনের রুটিন করে দিলে সবচেয়ে ভাল। যেখানে পড়া, গান, ছবি আঁকার রুটিনের পাশাপাশি কিছু ফ্রি সময়ও থাকবে যা বাচ্চার একেবারেই নিজের। এই নিজস্ব সময়ে সে টিভি দেখা, গান শোনা বা নিজের ইচ্ছামতো ক্রিয়েটিভ কাজ করতে পারবে। এতে পড়াশোনায় একঘেয়েমি আসবে না যা অতি প্রয়োজন। পড়ার পাশাপাশি লেখারও অভ্যাস করতে হবে। কোন কিছু পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওকে লিখতে দিতে হবে। এতে একদিকে যেমন ওর হাতের লিখা ভাল হবে সেই সঙ্গে পড়াটা বেশিক্ষণ মনেও থাকবে। কারণ আমরা যখন কোন কিছু লিখি তখন তার একটা ইমপ্রেশন আমাদের ব্রেনে তৈরি হয়। পরীক্ষার আগে বাচ্চাদের মডেল টেস্ট নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে সময়ের মধ্যে লেখা শেষ করার অভ্যাস তৈরি হবে আবার তিন-চার ঘণ্টা ধরে একটানা লেখার অভ্যাস ও তৈরি হবে। আরেকটি বিষয় অতি জরুরী। আর তা হলো ব্যালেন্স ডায়েট। এই সময় বাচ্চারা পরীক্ষার স্টেসে খেতে চায় না, ঘুমাতে চায় না। কাজেই বাচ্চাদের ব্যালে›স ডায়েট, পর্যাপ্ত পানীয় আর অবশ্যই রোজ রাতে অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। ঘুমের মধ্যে আমাদের ব্রেনে ইনফরমেশন স্টোর হওয়ার সময় পায়। কাজেই কম ঘুম হচ্ছে পড়া ভুলে যাওয়ার অন্যতম কারণ। পরীক্ষার সময় বাচ্চাদের একেবারে খেলাধুলা থেকে দূরে না রেখে একটু খেলাধুলাও করতে দিতে হবে। বিকেল বেলায় একটু বাইরে থেকে হেঁটে আসলেও সন্ধ্যাবেলা মনোযোগ দিয়ে ও খুশি মনে পড়তে পারবে। এভাবে গুছিয়ে নিয়ে চললেই আমরা পারব আমাদের সন্তানদের একটি আদর্শ ও যোগ্য মানুষরূপে গড়ে তুলতে। যার মধ্য দিয়ে আমাদের নিজেদের অপূর্ণতা অর্থাৎ নিজেদের না পারা কাজগুলোকে তাদের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করতে পারব। ফলে দেশও পাবে একজন আদর্শ নাগরিক।
×