ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বমানের গ্রেডিং

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২১ জুন ২০১৯

বিশ্বমানের গ্রেডিং

বাংলাদেশের শিক্ষাবোর্ড বিভিন্ন সরকারী পরীক্ষায় বড় ধরনের রদবদল আনার ইঙ্গিত দিয়েছে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং বিশ্বমানের সঙ্গে এর সমন্বয় সাধন- সব মিলিয়ে নতুন আঙ্গিকে শিক্ষার বিভিন্ন সূচকে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। এই নতুন পরীক্ষামূলক পদ্ধতিতে প্রথমেই জিপিএ-৫-এর পরিবর্তে সারা বিশ্বে প্রচলিত ফলের সর্বোচ্চ গ্রেড ৪-এ নিয়ে আসার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাসের নম্বর বাড়ানোর সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হতে পারে। শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত এমন পরিকল্পনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমলে নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পাশের নম্বর ৩৩ থেকে ৪০-এ আনারও প্রস্তাব করা হয়েছে। আধুনিক এবং আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গ্রেডিং এবং পাসের নম্বরের ওপর নতুন নিয়ম সংযোজনের চিন্তা করছে শিক্ষা বোর্ডগুলো, যাতে সায় মিলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও। ২০০১ সাল থেকে পাবলিক পরীক্ষায় নম্বরভিত্তিক ফলাফলের ওপর পরিবর্তন এনে সেখানে জিপিএ গ্রেড পদ্ধতি নতুনভাবে প্রচলন শুরু হয়। ৮০ থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যেই বিভিন্ন বিষয়ে জিপিএ-৫ নির্ধারণ করার পদ্ধতি চালু করা হয়। সেখানেও অন্য মাত্রা যোগ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে এমন সব রদবদলের কোন প্রভাব পড়বে না লেখাপড়ার ওপর। এতে শুধু প্রভাব আসবে প্রচলিত ফলের গ্রেডের ওপর। আরও কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন আসছে সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৪-এর ব্যাপারে। বিদ্যমান গ্রেডের সাতটি পর্যায়ের বদলে প্রায় ১৩টি পর্যায়ে গ্রেড নির্ধারণ করা হবে। বিকল্প হিসেবে আরও দুটি প্রস্তাবনার ইঙ্গিত দিয়েছে শিক্ষাবোর্ড। আগামী জেএসসি পরীক্ষা থেকেই নতুন এই নিয়ম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে শিক্ষাবোর্ডের। প্রচলিত গ্রেডিং পদ্ধতিতে নম্বর দেয়ার নিয়ম নেই বলে কোন শিক্ষার্থী তার প্রাপ্ত নম্বর জানতে পারত না। বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা চ্যালেঞ্জ করে তাদের প্রাপ্ত ফলের নম্বর জানতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ফলে হাইকোর্টের নির্দেশ পেয়ে ঐ নির্দিষ্ট পরীক্ষার্থীর নম্বর জানিয়ে দিতে হতো সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডকে। এমন অবস্থায় ২০১৬ সাল থেকে গ্রেডের সঙ্গে নম্বর দেয়ার রীতিও চালু করা হয়। তবে নতুন পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক নিয়মের আওতায় গ্রেডের সঙ্গে আর নম্বর পাওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না। শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন পূর্বশর্ত এটা যেমন সঙ্গত, একইভাবে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার নতুন পদ্ধতিও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অনুকূলে যেতে আরও কোন পদক্ষেপ নিতে হবে কি-না সে ব্যাপারেও বিশেষ নজর দেয়া আবশ্যক। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে শুধু পরীক্ষায় প্রাপ্ত গ্রেড আর ফলের দিকে দৃষ্টি দিলে নতুন ব্যবস্থা কতখানি ফলপ্রসূ হবে তাও ভেবে দেখার বিষয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের মান বাড়ানোই শুধু নয়, নতুন নিয়মকে সামনে রেখে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের তৈরি করাও বিবেচনায় রাখতে হবে। এই শতকের সূচনালগ্নে নতুন গ্রেডিং পদ্ধতি চালু এবং তথ্যপ্রযুক্তির অনিয়মে ফল প্রকাশকে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিল সেটা অনেকেই অবগত আছে। নতুন পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যথার্থ প্রশিক্ষণের অভাবে অনেকের ফল বিপর্যয় ঘটে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এমন সব তথ্য-উপাত্তও নজরে আনা বিশেষ জরুরী। যেমন প্রয়োজন প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বমানে উন্নীত করে এ সময়ের প্রজন্মকে আন্তর্জাতিক বলয়ে প্রবেশের জন্য যোগ্যতম করে গড়ে তোলা, তেমনি প্রয়োজন নতুন কার্যক্রমে দেশের ভাবী প্রজন্মকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগান্তকারী করে তোলা।
×