ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে লাছি নদী পুনর্খননে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ২১ জুন ২০১৯

 ঠাকুরগাঁওয়ে লাছি নদী  পুনর্খননে অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ২০ জুন ॥ জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় লাছি নদী পুনর্খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়রের অভিযোগ, অপরিকল্পিত ভাবে নদী খনন করায় নদী হচ্ছে ছোট, ব্যয় করা অর্থ গচ্চা যাবে আর নদীর পাড় বালু দিয়ে নির্মাণ হওয়ায় এবারের বর্ষায় আবারও ভরাট হবে নদী। উদ্দেশ্য বাস্তাবায়ন না হওয়ার আশঙ্কা তাদের। পীরগঞ্জ পৌর শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া লাছি নদী। এ নদীটি মিলত হয়েছে টাঙ্গন নদীর সঙ্গে। গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে লাছি নদীর পুনর্খননের কাজ উদ্বোধন করে পাউবো। কিন্তু খনন কাজ শুরু হয় এ বছরের জানুয়ারিতে। কুশারীগাঁও থেকে টাঙ্গন নদীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার লাছি নদী খননে প্রায় ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ইতোমধ্যে ৬ মাসে এ নদীর খনন কাজ ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। কিন্তু কাজে সন্তুষ্ট নন এলাকাবাসী ও খোদ পীরগঞ্জ পৌর সভার মেয়র। তারা বলছেন, খনন করা নদীর বালু দিয়ে পাড় তৈরি করা হচ্ছে। এসব পাড়ের বালু এবারের বর্ষায় ধুয়ে আবার ভরাট হয়ে যাবে নদী। আর নক্সা অনুযায়ী নদী খনন না হওয়ায় নদী সংকোচিত হয়ে ছোট হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। নির্মাণ শ্রমিক দরিমান বলেন, নদী পুনঃখননের উদ্যোগ ভাল। কিন্তু নদী খনন করে যে বালু উঠছে তা দিয়েই দু-ধারে পাড় তৈরি হচ্ছে। এই বালুতে ঘাস দেয়া হলেও তা মারা যাবে এবং নদীর পাড় ভেঙ্গে যাবে। পীরগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা জয়নউদ্দীন, আকবর আলীসহ অনেকে বলেন, নদীর বালু বৃষ্টি হলে বেশির ভাগই ধুয়ে আবার নদীতে পড়বে। এতে আবারও ভরাট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে ব্যয় করা টাকা নদীতেই ভেসে যাবে বলে জানায় তারা। নদীপাড়ের বাসিন্দা হাসিম উদ্দিন বলেন, নদীটি সঠিকভাবে খনন হলে এই এলাকার মানুষ সারা বছর মাছ পাবে। এছাড়াও জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে এলাকার মানুষজন রক্ষা পাবে। তবে তিনি বালু দিয়ে পাড় তৈরির বিরোধিতা করে বলেন, স্থায়ী সমাধানে ব্লকদিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে লেক তৈরি করার দাবি জানান। নদীপারের কৃষক অচিন্ত রায় বলেন, লাছি ব্রিজের পূর্ব পাশে নদী ভাঙ্গন আছে। তার ১৯ শতক জমি নদীতে বিলীন হয়েছে বলে জানান ওই কৃষক। কাজে অনিয়ম হওয়ায় ঘাটে ঘাটে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে একটি মহলকে ম্যানেজ করছে সংশ্লিষ্টরা, এমন অভিযোগ তোলেন পীরগঞ্জ পৌর মেয়র কসিরুল আলম। তিনি বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বারবার নক্সা চেয়েছি। কিন্তু তারা তা দেখায়নি-গড়িমশি করছে। আমরা চাই এই নদীটি ভাল করে খনন করা হোক। এখনও কোথাও খুঁড়ছে না, কোথাও নদীটি সরু করে ফেলেছে। নদী পাড়ে ৩৬শ’ বর্গমিটার ঘাস এবং ২৪শ’ গাছ লাগানোর কথা। কোথাও কোন ঘাস বা গাছ লাগানো হয়নি। সব মিলিয়ে কাজ মোটেও ভাল হচ্ছে না বলে অভিযোগ তার। সরকারী টাকা লুটপাট করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তার। তবে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, নদীর পাড় রক্ষায় ঘাস ও গাছপালা রোপণ করা হবে। তার কাজ শুরু হয়েছে। নক্সা অনুয়ায়ী শেষ করতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আর নদী কোথাও ছোট করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি। পাউবোর এই প্রকৌশলী বলেন, পীরগঞ্জের লাছি নদীর গভীরতা হবে ১ দশমিক ৫ মিটার আর প্রস্থ হবে ১০ মিটার। নদীতে সারা বছর পানি ধরে রাখা, মাছ চাষসহ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব রোধে ঠাকুরগাঁও জেলার টাঙ্গন, শুক ও লাচ্চি নদী এবং যমুনা খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এই কাজ শেষ হবে ২০২০ সালের নবেম্বর মাসে।
×