ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রামপালে বেল্লাল বেপারির অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ২১ জুন ২০১৯

 রামপালে বেল্লাল বেপারির  অত্যাচারে অতিষ্ঠ  এলাকাবাসী

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ রামপালে বেল্লাল বেপারির (৪৫) অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী। জোরপূর্বক ঘের দখল, অন্যের ঘেরে মাছ ও কাকড়া ধরে বিক্রি, চাঁদাবাজি, নিরীহ লোকদের মারধর, টাকা নিয়ে ফেরত না দেয়াসহ কি অভিযোগ নেই উপজেলার রামপাল সদর ইউনিয়নের সুলতানিয়া গ্রামের বিএনপির সাবেক ক্যাডার বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চলা বেল্লাল বেপারির বিরুদ্ধে। সুলতানিয়া গ্রামের আল আমিন বেপারির ছেলে বেল্লাল বেপারি। চার দলীয় ঐক্য জোটের আমলে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের অত্যাচার করেছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কতিপয় সুবিধাভোগী নেতার প্রশ্রয়ে হয়ে যান আওয়ামী লীগের ক্যাডার। শুরু করে আওয়ামী লীগের কর্মী ও নিরীহ লোকদের ওপর সিমাহীন অত্যাচার। উপজেলা পর্যায়ের একজন আওয়ামী লীগ নেতার ছত্র ছায়ায় থেকে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এর সঙ্গে সহায়ক শক্তি হিসেবে রয়েছে বেল্লাল বেপারির ভাই একাধিক হত্যা ও ডাকাতি মামলার আসামি বাকী বেপারি। বাকী বেপারি বাগেরহাট সদর উপজেলার চুনখোলা গ্রামের শাহানার বাড়ি ডাকাতি মামলার আসামি, শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা থানায় তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যা ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। খুলনা বটিয়াঘাটা থানায়ও দুটি ডাকাতির মামলা আছে বাকী বেপারির নামে। এছাড়া সর্বশেষ ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বাকী বেপারি। তবে বাকী বেপারি এলাকায় যা- ইচ্ছে তাই করলেও অজানা কারণে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি বিদ্যুত সংযোগ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে সুলতানিয়া ও ভাগা এলাকার শতাধিক লোকের কাছ থেকে টাকা নেয় বেল্লাল। অনেকদিন হলেও যখন সংযোগ পায়না বিদ্যুত প্রত্যাশীরা তখন সুলতানিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শওকত হোসেনের কাছে আসে নিরীহ লোকজন। শওকত হোসেন বেল্লাল বেপারির কাছে জানতে চাইলে, বেল্লাল তাকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে মারধর করে। এলাকার মানুষের কাছ থেকে নানাভাবে টাকা নিয়ে ফেরত না দেয়া, ঘের দখল, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, নিরীহ লোকদের মারধরসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একাধিক হত্যা ও ডাকাতি মামলার আসামি তার ভাইয়ের ভয়ে মুখ খুলতে পারে না এলাকাবাসী। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ নুরনবী টুকু বলেন, বেল্লাল বেপারি আমার কাছ থেকে ঘেরের হাঁড়ি প্রদানের জন্য এক লাখ এবং বাজার ইজারা নেয়ার জন্য দুই লাখ মোট ৩ লাখ টাকা ধার নেয়। এখন টাকা না দিয়ে উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দেয়। স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী মোঃ মঈনুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগ করেও আজ আমি উৎকণ্ঠিত। বেল্লাল বেপারির আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। ৩-৪ মাস বাড়ির বাইরে থেকে এখন বাড়িতে আসছি। বেল্লালের অত্যাচারে গ্রামের লোকজন অতিষ্ঠ। অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক নির্মল মল্লিক বলেন, আমরা ১৫-২০ জন সবাই মিলে একটি সমবায় ভিত্তিক ঘের করেছিলাম। সেই ঘেরের ১১ একর জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে বেল্লাল বেপারি। ওই ঘেরের মাছ ধরতে গেলে বেল্লাল আমাদের হুমকি-ধমকি দেয়। মেরে ফেলার কথাও বলেছে একাধিকবার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হিন্দু ঘের মালিক বলেন, হিন্দুরা ঘেরে কাঁকড়া চাষ করে। আর কাঁকড়া ধরে বিক্রি করে বেল্লাল বেপারি। বাধা দিলে মারধর এমনকি নারীদের শ্লীলতার হুমকি দেয়। আমরা বেল্লাল বেপারির হাত থেকে মুক্তি চাই। শুধু এরা নয় বেল্লালের অত্যাচারের হাত থেকে এলাকার কোন নিরীহ লোকজন রক্ষা পাচ্ছে না বলে জানান সাবেক ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, বেল্লাল বেপারি জামায়াত বিএনপির ক্যাডার ছিল। ওই আমলে আওয়ামী লীগের লোকজনকে অত্যাচার নির্যাতন করেছে। এখন আওয়ামী লীগের আমলেও সে মাস্তান সাজিয়ে। এই এলাকার ঘের দখল, লোকের মানসম্মান নষ্টসহ যত ধরনের অপরাধ আছে তা বেল্লাল বেপারি করে। আমরা বেল্লালের হাত থেকে মুক্তি চাই। বেল্লাল বেপারির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানালেও তিনি অজানা কারণে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে বেল্লাল বেপারি তার বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
×